Online Part Time Job: সেলিব্রেটিদের ফটো শেয়ার করে ঘরে বসে ইনকাম, কড়া পদক্ষেপ নিল ইডি

একথা আমাদের সকলেরই জানা যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় নানান সুযোগের হাতছানি থাকে। সেক্ষেত্রে এই ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে রোজগারের নানাবিধ উপায় খুঁজে পাওয়া নতুন কিছু নয়। তবে এসব ব্যাপারে সবসময় সতর্ক থাকতে হয়, কেননা Facebook, WhatsApp-এর মতো জনপ্রিয় অ্যাপগুলির আনাচে-কানাচে পাতা থাকে ভুয়ো চাকরি বা প্রতারণার ফাঁদ, এবং তাতে পা দিলেই ঘটে যাবে ভয়ঙ্কর সর্বনাশ। তবে এই ধরনের কোনো ভুয়ো চক্রের সন্ধান পেলেই কিন্তু বেশ জোরালো পদক্ষেপ নেয় সরকার। সেক্ষেত্রে এবার আবারও এরকম একটি ঘটনার খবর সামনে এসেছে।

পার্ট-টাইম চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা টাকা প্রতারণার অভিযোগ

অনলাইনে পার্ট-টাইম চাকরির ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সম্প্রতি ৮০ টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টকে ফ্রিজ করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি (ED)। সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘সুপার লাইক আর্নিং অ্যাপ্লিকেশন’ (Super Like Earning Application) নামক একটি স্ক্যামের তদন্তে নেমেছিলেন ইডির আধিকারিকরা, যেখানে ইউজারদেরকে অনলাইনে পার্ট-টাইম চাকরির ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করতো জালিয়াতরা। তবে গত সোমবার ও মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুর ১৬ টি জায়গায় দুদিন ধরে খানাতল্লাশি চালিয়ে অভিযুক্তদেরকে শনাক্ত করে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে, যার জেরে ১ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করতে সক্ষম হয়েছে ইডি।

ওই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন যে, গত বছরের ৩ মার্চ সাউথ সাইবার ইকোনমিক্স অ্যান্ড নারকোটিক ক্রাইমস থানায় ‘মেসার্স সুপার লাইক অনলাইন আর্নিং অ্যাপ্লিকেশন’ এবং অন্যান্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি এফআইআরের ভিত্তিতে ইডি অর্থ পাচারের তদন্ত শুরু করে। গত ১৩ জানুয়ারি পুলিশ বেঙ্গালুরুর প্রিন্সিপাল সিটি সিভিল অ্যান্ড সেশন জজের আদালতে এই মামলায় দুই চীনা নাগরিক শেন লং ও হিমানিসহ ৫০ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এবং হালফিলে সংস্থার পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের নিবাসস্থলের পাশাপাশি ফোনপে (PhonePe), পেটিএম (Paytm), গুগল পে (Google Pay) এবং অ্যামাজন পে (Amazon Pay) সহ পেমেন্ট গেটওয়েগুলির অফিস এবং এইচডিএফসি, আইসিআইসিআই এবং ধনলক্ষ্মীর মতো ব্যাংকগুলিতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের (PMLA) বিধানের অধীনে আলোচ্য খানাতল্লাশি চালানো হয়েছে।

সেলিব্রিটিদের ফটো এবং ভিডিও শেয়ার করলেই নাকি পকেটে এসে যাবে টাকা!

কিন্তু ঠিক কীভাবে সহজসরল সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে তথা মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো জালিয়াতরা? এই প্রসঙ্গে ইডির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, হ্যাকাররা ইউজারদেরকে একটি ভুয়ো অ্যাপ্লিকেশনে বেশ কিছু টাকা বিনিয়োগ করার নির্দেশ দিতো। তারা ব্যবহারকারীদেরকে জানাতো যে, কিছু নামিদামি সেলিব্রিটিদের ছবি এবং ভিডিও শেয়ার করলেই তারা মুনাফা হিসেবে বেশ কিছু টাকা পেতে সক্ষম হবেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই লাভজনক প্রকল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সাধারণ মানুষ অ্যাপটিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতেন।

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হল, এই ব্যাপারে যাতে ব্যবহারকারীদের মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহের উদ্রেক না হয়, সেজন্য প্রাথমিকভাবে সেলিব্রিটিদের ভিডিও শেয়ার করে ইউজারদেরকে বেশ কিছু টাকা অর্জন করতে সহায়তা করেছে হ্যাকাররা। ফলে নামিদামি সেলিব্রিটিদের সামান্য কয়েকটা ফটো এবং ভিডিও শেয়ার করেই যখন অতি অনায়াসে টাকা অর্জন করা যাচ্ছে, তাই আগামী দিনে নিশ্চিতভাবে অধিক পরিমাণে টাকা রোজগারের আশায় এই প্রকল্পে আরও বেশি টাকা বিনিয়োগ করেন ইউজাররা।

তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরবর্তীকালে বহুসংখ্যক ছবি এবং ভিডিও শেয়ার করেও কোনো রিটার্ন পাননি ইউজাররা, যার ফলে তাদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হয় এবং তারপরে তারা থানায় গিয়ে বিষয়টির সম্পর্কে নিজেদের অভিযোগ দায়ের করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিককালে জোরকদমে তদন্ত চালাচ্ছে ইডি। সংস্থার এক মুখপাত্রের মতে, দুর্বৃত্তরা ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে মুঠো মুঠো টাকা হাতিয়ে নিলেও বিনিময়ে তাদেরকে আর কোনো টাকা পাঠায়নি, যার জেরে কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তবে অভিযুক্তদেরকে হাতেনাতে ধরার পাশাপাশি মামলাটিকে একদম গোড়া থেকে নির্মূল করতে বর্তমানে সরেজমিনে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে ইডি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *