চমকপ্রদ ফল, সহনশীলতার পরীক্ষায় iPhone 13 Pro কে পিছনে ফেললো Xiaomi 12S Ultra

গত সপ্তাহে জনপ্রিয় স্মার্টফোন নির্মাতা শাওমি চীনের বাজারে উন্মোচন করেছে তাদের নতুন Xiaomi 12S ফ্ল্যাগশিপ সিরিজটি। এই লাইনআপে অন্তর্ভুক্ত Xiaomi 12S, 12S Pro এবং 12S Ultra ডিভাইসগুলি শাওমির সাথে বিখ্যাত জার্মান ক্যামেরা লেন্স প্রস্তুতকারক লাইকা (Leica)-এর পার্টনারশিপটি তুলে ধরার পাশাপাশি, বিশ্বের প্রথম Qualcomm Snapdragon 8+ Gen 1 প্রসেসর দ্বারা চালিত হ্যান্ডসেট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এখন আবার অনলাইনে এই ফোনগুলির একাধিক রিভিউ ভিডিও প্রকাশ্যে আসছে, আর তারমধ্যে একটি সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স রিভিউ ভিডিওতে দেখা গেছে যে, Xiaomi 12S Pro এবং Xiaomi 12S Ultra স্ক্রিন-অন-টাইম (SoT) এন্ডিওরেন্স টেস্টে লেটেস্ট Apple iPhone 13 Pro-কেও ছাড়িয়ে গেছে, যা পর্যালোচকদের হতবাক করে দিয়েছে।

Xiaomi 12S সিরিজের হ্যান্ডসেটগুলি এন্ডিওরেন্স টেস্টে পিছনে ফেললো iPhone 13 Pro-কেও

চীনের টেক ইউটিউবার গিকারওয়ান (Geekerwan), সম্প্রতি তার ইউটিউব (YouTube) চ্যানেলে শাওমির সাম্প্রতিক ফ্ল্যাগশিপ সিরিজের ডিভাইসগুলির সাথে বাজারে বিদ্যমান অন্যান্য প্রতিযোগী হ্যান্ডসেটের পারফরম্যান্সের তুলনা করে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। ভিডিওতে, শাওমি ১২এস প্রো এবং ১২এস আল্ট্রা মডেল দুটিকে শাওমি ১২ প্রো, রিয়েলমি জিটি ২ প্রো, রেডমি কে৪০, রেডমি কে৫০ প্রো এবং অবশ্যই স্মার্টফোনের পারফরম্যান্সের গোল্ডেন স্ট্যান্ডার্ড-অ্যাপল আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্সের সাথে তুলনা করা হয়েছে।

আবার, ৩ডিমার্ক ওয়াইল্ডলাইফ স্ট্রেস টেস্ট বেঞ্চমার্কের সাইটে দেখা গেছে যে শাওমি ১২এস প্রো এবং শাওমি ১২এস আল্ট্রা-এ ব্যবহৃত কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮ প্লাস জেন ১ ‘র’ (raw) সিপিইউ এবং জিপিইউ পারফরম্যান্সে অন্যান্য সমস্ত অ্যান্ড্রয়েড ফ্ল্যাগশিপকে ছাড়িয়ে গেছে, যার মধ্যে রয়েছে স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ১ দ্বারা চালিত রিয়েলমি জিটি ২ প্রো এবং মিডিয়াটেক ডাইমেনসিটি ৯০০০-চালিত রেডমি কে৫০ প্রো। যদিও, স্ন্যাপড্রাগন ৮ প্লাস জেন ১ এখনও আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স-এর থাকা অ্যাপল এ ১৫ বায়োনিক চিপসেটের পিছনে রয়েছে। তবে স্থিতিশীলতার দিক থেকে, লেটেস্ট ৮ প্লাস জেন ১ প্রসেসরটি গত বছরের স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ১ চিপসেটের থেকে একটি বড় আপগ্রেডের সাথে এসেছে, কারণ এটি এখন চলতি বছরের ফ্ল্যাগশিপ চিপ যেমন মিডিয়াটেক ডাইমেনসিটি ৯০০০ এবং অ্যাপল এ ১৫ বায়োনিক চিপসেটের মতো একই লিগের মধ্যে পারফর্ম করতে পারে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, এনডিওরেন্স টেস্ট বা সহনশীলতা পরীক্ষার ক্ষেত্রে, Xiaomi 12S Pro এবং 12S Ultra সামগ্রিক স্মার্টফোন এনডিওরেন্স চ্যাম্পিয়ন হিসাবে iPhone 13 Pro Max-এর থেকে সেরার খেতাব ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিস্ময়কর ভাবে Xiaomi 12S Pro এবং 12S Ultra যথাক্রমে ৭ ঘন্টা এবং ৫০ মিনিট এবং ৭ ঘন্টা এবং ৪৭ মিনিটের স্ক্রিন-অন-টাইম (SoT) অর্জন করতে পেরেছে, যা অ্যাপলের ৭ ঘণ্টা ৪২ মিনিটের স্ক্রিন-অন-টাইমের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।

অন্যদিকে, ৪,৬০০ এমএএইচ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি ও কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ১ প্রসেসর সহ Xiaomi 12 Pro-এর দ্বারা অর্জিত হতাশাজনক ৫ ঘন্টা ৪৪ মিনিটের স্ক্রিন-অন-টাইমের তুলনায়, একই ৪,৬০০ এমএএইচ ব্যাটারি সহ Xiaomi 12S Pro-এ আপগ্রেডেড স্ন্যাপড্রাগন ৮ প্লাস জেন ১ চিপসেটটি অতিরিক্ত দু’ঘণ্টারও বেশি সময়ের সাথে ব্যাটারি লাইফকে ব্যাপকভাবে উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এসওটি (SoT) সহনশীলতা পরীক্ষায় গেনশিন ইমপ্যাক্ট, ওয়েচ্যাট মেসেজিং, ভয়েস কল, ভিডিও কল, ওয়েব ব্রাউজিং, টিকটক এবং গেমিং ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের সাথে ডিভাইসগুলিকে মিশ্রভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাটারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি কাজ প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চালানো হয়েছে। তবে জানিয়ে রাখি, এই পরীক্ষাগুলি Xiaomi 12S Pro, Apple iPhone 13 Pro Max এবং অন্যান্য ডিভাইসের চীনা মডেলগুলির ওপর করা হয়েছিল, যেগুলি চীনা সফ্টওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে রান করে। তাই চীনের বাইরে ভিন্ন সফ্টওয়্যারে চলমান এই ফোনগুলির গ্লোবাল মডেলগুলির ওপর করা সহনশীলতা পরীক্ষার ফলাফল ভিন্ন আসতে পারে।

উল্লেখ্য, এই পরীক্ষাগুলির মাধ্যমে বোঝাই যাচ্ছে যে, Xiaomi 12S Pro এবং 12S Ultra গতবছর ডিসেম্বরে লঞ্চ হওয়া Xiaomi 12 সিরিজের তুলনায় পাওয়ার এফিসিয়েন্সি এবং ব্যাটারি এনডিওরেন্সের ক্ষেত্রে বড় আপগ্রেডের সাথে এসেছে। আর শুধু তাই নয়, এখন এই মডেলগুলি সাম্প্রতিকতম Apple iPhone 13 Pro Max-এর মতো ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন মার্কেটের লিডিং মডেলগুলিকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। বর্তমানে Xiaomi 12S Pro এবং Xiaomi 12S Ultra হ্যান্ডসেট দুটি গিজটপ (Giztop)-এর প্ল্যাটফর্মে যথাক্রমে ৮৯৯ ডলার (প্রায় ৭১,৫০০ টাকা) এবং ১,১৯৯ ডলার (প্রায় ৯৫,৩০০ টাকা) মূল্যে উপলব্ধ রয়েছে।