Android ব্যবহারকারীরা সাবধান! এই বিপজ্জনক ম্যালওয়্যার চুরি করতে পারে আপনার ব্যাংকিং ডিটেইলস

প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে ম্যালওয়্যার হামলার ঘটনাও গোটা বিশ্বে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যেই অ্যান্ড্রয়েড (Android) ব্যবহারকারীরা নিত্যনতুন ম্যালওয়্যার আক্রমণ এবং নতুন ট্রোজান সম্পর্কিত সতর্কতাগুলিতে বেশ ভালোরকম অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে আবারও অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন গ্রাহকদের জন্য একটি দুঃসংবাদ এসে হাজির হয়েছে। সাইবার বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন যে, ইউজারদেরকে বিপর্যস্ত করতে একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক ম্যালওয়্যার হানা দিয়েছে, যার জেরে ব্যবহারকারীরা আর্থিক প্রতারণার শিকার হতে পারেন। কারণ এই ম্যালওয়্যারটি ইউজারদের ডিভাইসের অন্তর্ভুক্ত যাবতীয় তথ্যের পাশাপাশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড চুরি করতে সিদ্ধহস্ত।

সাইবল রিসার্চ ল্যাবস (Cyble Research Labs)-এর একটি নয়া রিপোর্টে এই খবরটি প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, এই ম্যালওয়্যারটি কিন্তু নতুন কিছু নয়, বরং এটি ২০২১ সালে আবির্ভূত হওয়া ব্যাংকিং ট্রোজানের একটি আপগ্রেডেড ভার্সন যা সম্প্রতি আবারও সক্রিয় হয়েছে। এরম্যাক ২.০ (ERMAC 2.0) নামক এরম্যাক ট্রোজানের এই আপগ্রেডেড ভার্সনটি ৪৬৭টি অ্যাপ্লিকেশনকে টার্গেট করেছে। অর্থাৎ সোজা ভাষায় বললে, ৪৬৭টি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপে এই ক্ষতিকারক ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়েছে হ্যাকাররা। আর এর মধ্যে কোনোটি ইউজাররা ডাউনলোড করে ফেললেই তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এক নিমেষে ফাঁকা করে দিচ্ছে সাইবার আক্রমণকারীরা।

কীভাবে কাজ করে এই ম্যালওয়্যার? 

এরম্যাক ২.০ ম্যালওয়্যারটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। কোনো ইউজার জেনেশুনে বা সম্পূর্ণ অজান্তে ক্ষতিকারক ম্যালওয়্যারযুক্ত কোনো অ্যাপ ইন্সটল করলেই তার কাছ থেকে ৪৩ রকমের পারমিশন চাওয়া হয়। যদি ব্যবহারকারীরা এই পারমিশনগুলি মঞ্জুর করেন, তাহলে তাদের ডিভাইসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যায় হ্যাকাররা। অর্থাৎ, ইউজারদের ডিভাইসে মজুত থাকা যাবতীয় পার্সোনাল ডিটেইলসের (ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত সকল তথ্যাদি, এসএমএস, কন্টাক্টসসহ স্টোরেজে জমা থাকা সমস্ত ডেটা) অ্যাক্সেস চলে যায় স্ক্যামারদের কাছে। আর এর ফলটা যে কী হয়, সেটা নিশ্চয়ই আর আপনাদেরকে নতুন করে বলে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

সুরক্ষিত থাকার উপায়

ইতিমধ্যেই আমরা সকলেই জেনে গিয়েছি যে, নিত্যনতুন ফন্দিফিকিরকে হাতিয়ার করে ইউজারদের সর্বস্বান্ত করার জন্য স্ক্যামাররা অহরহ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগেও অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা এই ধরনের দূষিত ম্যালওয়্যারঘটিত সাইবার হানার সম্মুখীন হয়েছে। সেক্ষেত্রে হ্যাকারদের আটকাবার তো কোনো উপায় নেই, তাই সাইবার জালিয়াতির হাত থেকে সুরক্ষিত থাকতে গেলে নিজেকেই যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অ্যান্ড্রয়েড ইউজারদের নিরাপত্তার খাতিরে সাইবার সিকিউরিটি ফার্মের বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, সর্বদা অফিসিয়াল স্টোর (গুগল প্লে স্টোর) থেকেই যে-কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করা উচিত, কখনোই কোনো অজানা সোর্স থেকে থার্ড-পার্টি অ্যাপ ডাউনলোড করবেন না।

তদুপরি বিশেষজ্ঞরা একথাও জানিয়েছেন যে, প্লে স্টোর থেকে কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে সেটির রিভিউ খুঁটিয়ে পড়ে নিতে ভুলবেন না। এর পাশাপাশি অজানা সোর্স থেকে পাওয়া কোনো মেসেজ বা ইমেইলে থাকা কোনো লিঙ্কে খবরদার কখনও ক্লিক করবেন না। আর ম্যালওয়্যারজনিত এই ধরনের সমস্যার হাত থেকে দূরে থাকতে গেলে অবশ্যই নিজের ডিভাইস এবং তাতে মজুত থাকা সবকটি অ্যাপকে ক্রমাগত আপডেট করা চালিয়ে যেতে হবে। একথা কখনোই ভুললে চলবে না যে, যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করাই হল বর্তমান ডিজিটাল যুগে সাইবার অপরাধীদেরকে পরাস্ত করে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার এক এবং একমাত্র উপায়।