এই প্রথম 5G স্মার্টফোনের বিক্রি ছাড়িয়ে গেল 4G ফোন কে, কারণ কি?

পরবর্তী প্রজন্মের নেটওয়ার্ক অর্থাৎ ৫জি (5G)-কে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী জনসাধারণের উন্মাদনার কথা আমাদের কারোরই অজানা নয়। তবে এবার মানুষের মধ্যে 5G-র প্রতি আকর্ষণ এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে গত জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী 5G স্মার্টফোনের বিক্রি 4G হ্যান্ডসেট বিক্রিকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে! হ্যাঁ, কথাটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও কিন্তু সত্যি। মার্কেট রিসার্চ ফার্ম কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের (Counterpoint Research) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। মূলত চীনে ৮৪ শতাংশ 5G পেনিট্রেশনই (মোট মোবাইল কানেকশনের পার্সেন্টেজ শেয়ার) এই ঘটনার মূল কারণ। সেইসাথে উত্তর আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের যথাক্রমে ৭৩ শতাংশ এবং ৭৬ শতাংশ 5G স্মার্টফোন পেনিট্রেশনও এই দুর্দান্ত বৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের গ্লোবাল মাসিক হ্যান্ডসেট মডেল সেলস ট্র্যাকার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ৫জি এনাবেলড স্মার্টফোনের সেলস পেনিট্রেশন বিশ্বব্যাপী ৫১ শতাংশে পৌঁছেছে, যা প্রথমবারের মতো ৪জি স্মার্টফোনের বিক্রিকে ছাড়িয়ে গিয়ে এক অবিশ্বাস্য রেকর্ড গড়েছে। আগেই বলেছি যে, চীনই মূলত এই রেকর্ডের জন্য দায়ী। ৫জি টেকনোলজিকে কেন্দ্র করে চীনা টেলিকম অপারেটরদের নিরলস পরিশ্রম, এবং সেইসাথে অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারারদের (OEM) সহায়তায় নির্মিত সাশ্রয়ী মূল্যের একাধিক ৫জি স্মার্টফোন মার্কেটে আসায় ক্রেতাদের মধ্যে এই সেটগুলি কেনার প্রবণতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এছাড়া, বিশ্বখ্যাত টেক জায়ান্ট অ্যাপল (Apple)-এর নজরকাড়া ডিজাইন এবং একগুচ্ছ কার্যকর ফিচারে ঠাসা আইফোন (iPhone) কেনার দিকেও বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের প্রবল ঝোঁক রয়েছে। তাই সংস্থাটি যখন ৫জি টেকনোলজি সমেত iPhone 12 সিরিজ রোলআউট করে, তখন সেই ফোনগুলি সারা বিশ্বের পাশাপাশি মূলত উত্তর আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপে প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয়েছে। সেইসাথে ২০২১ সালে লঞ্চ হওয়া iPhone 13 সিরিজও বর্তমানে ইউজারদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। ফলে এই সিরিজের মডেলগুলি কেনার প্রতিও ক্রেতাদের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কাউন্টারপয়েন্ট জানিয়েছে যে, এই অঞ্চলগুলি বিশ্বব্যাপী ৫জি স্মার্টফোন বিক্রিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই জায়গাগুলিতে এমন অনেক ইউজার বাস করেন, যারা গড়ে প্রায় প্রতি চার বছর অন্তর পুরোনো আইফোন মডেল এক্সচেঞ্জ করে নতুন মডেল কেনেন। সবমিলিয়ে এর ফলস্বরূপই বিশ্বব্যাপী প্রচুর পরিমাণ ৫জি স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়াও কাউন্টারপয়েন্টের প্রতিবেদনে কোয়ালকম (Qualcomm) এবং মিডিয়াটেকের (MediaTek) মতো সংস্থাগুলি কর্তৃক প্রদত্ত সাশ্রয়ী মূল্যের চিপসেটগুলিকেও ৫জি স্মার্টফোন বিক্রয়ের বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয়েছে। ৫জি অ্যান্ড্রয়েড (Android) স্মার্টফোন এখন অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে বাজারে উপলব্ধ হওয়ায় প্রচুর সংখ্যক ক্রেতা এই ফোনগুলি কিনতে সক্ষম হচ্ছেন। এছাড়া গত জানুয়ারি মাসে এই ফোনগুলির দাম অনেকটাই কমে যায় বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৫০ থেকে ৪০০ ডলার (প্রায় ১৮,৯০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকার মধ্যে) মূল্যের মধ্যে লঞ্চ হওয়া অ্যান্ড্রয়েড ৫জি ফোনগুলি এখন ১৫০ ডলার থেকে ২৫০ ডলার (প্রায় ১১,৩০০ টাকা থেকে ১৮,৯০০ টাকার মধ্যে) দামের সেগমেন্টে মার্কেটে পাওয়া যায়। তাই এই ঘটনাটিকেও প্রচুর পরিমাণে ৫জি ফোন বিক্রির এক প্রধান কারণ বলে ধরে নেওয়া যায়।

এই সবকিছুর পাশাপাশি কাউন্টারপয়েন্ট-এর তরফে জানানো হয়েছে যে, আগামী দিনে পরবর্তী প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক এশিয়া প্যাসিফিক, মধ্য প্রাচ্য এবং ল্যাটিন আমেরিকাতেও প্রসারিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার ফলে ৫জি স্মার্টফোনগুলি প্রায় ১৫০ ডলারে (প্রায় ১১,৩০০ টাকা) মার্কেটে উপলব্ধ হবে, যেখানে এই দামে বর্তমানে ৪জি স্মার্টফোন পাওয়া যায়। সংস্থাটির মতে, লো-এন্ড ৫জি চিপসেটের দাম যদি ২০ ডলারের (প্রায় ১,৫০০ টাকা) কাছাকাছি নেমে আসে, তাহলেই অত্যন্ত কমদামি ৫জি স্মার্টফোন মার্কেটে দেখা যাবে। আর সত্যিই যদি এই ঘটনা ঘটে, তাহলে ভবিষ্যতে গত জানুয়ারির মতো ৫জি স্মার্টফোন বিক্রি যে আরও অনেক নতুন নতুন রেকর্ড গড়বে, সেকথা নিঃসন্দেহে বলাই বাহুল্য।