Independence Day: স্বাধীনতার পর প্রথম কম্পিউটার ব্যবহার হয় এ রাজ্যেই, এখন ভারত বড় প্রযুক্তি হাব

বর্তমান সময়ে আমরা প্রযুক্তিনির্ভর সমাজব্যবস্থায় বাস করছি, আর দেখতে গেলে আজকের এই আধুনিক দুনিয়ার প্রধান চালিকাশক্তি হল কম্পিউটার। এখন এই যন্ত্রটি না থাকলে জীবন থমকে যাবে বললেই চলে। কারণ চলতি সময়ে অটোমেটেড ফার্মিং থেকে চিকিৎসাক্ষেত্র, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি থেকে স্বচালিত গাড়ি, কিংবা বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগ থেকে শিক্ষাসহায়ক যন্ত্রপাতি – সবজায়গাতেই কম্পিউটার বিরাজমান। ফলে যদি হুট করে পৃথিবীর সব কম্পিউটার বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে যে কী ভয়ঙ্কর বিপদ ঘটবে, সেটা অতি অনায়াসেই আন্দাজ করে নেওয়া যায়। তবে আজকাল যেমন সব কাজেই কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়, শুরুর দিকে কিন্তু ছবিটা মোটেও এরকম ছিল না। ভারতে যখন প্রথম কম্পিউটার আসে, তখন মূলত হিসাব-নিকাশ করার জন্যই এটিকে ব্যবহার করা হতো।

কিন্তু তারপরে সময়ের সাথে সাথে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় দুনিয়ায় ঘটে যায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এবং বর্তমানে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে আরও সহজ, সরল ও প্রাণবন্ত করে তুলতে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও (অবশ্যই) স্মার্টফোনের মতো ডিভাইসগুলি দেশের অধিকাংশ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু ভারতে ঠিক কবে এই ডিভাইসটির আবির্ভাব ঘটলো? শুরুর দিকে এদেশের কম্পিউটারের চেহারা ঠিক কীরকম ছিল? আর কীভাবেই বা ধীরে ধীরে ভারত দুনিয়ার অন্যতম স্মার্টফোন এবং কম্পিউটার হাব হয়ে উঠলো? এইসব প্রশ্নগুলি যদি এখন আপনাদের মনে এসে থাকে, তাহলে আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনটি একবার পুরোটা পড়ে নিন। কারণ আজ আমরা কম্পিউটার নামক এই যুগান্তকারী যন্ত্রের পূর্বাপর ইতিহাস সম্পর্কে আপনাদেরকে জানাতে চলেছি।

ভারতে আসা প্রথম কম্পিউটার 

কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউট থেকে সর্বপ্রথম ভারতের কম্পিউটারের যুগান্তকারী জয়যাত্রা শুরু হয়। ১৯৫৫ সালের শেষের দিকে দেশের প্রথম কম্পিউটারটি এখানে ইন্সটল করা হয়। অর্থাৎ, স্বাধীনতার মাত্র ৮ বছর পরই এদেশে প্রথম কম্পিউটারের আগমন ঘটেছিল, যা এখন ভারতসহ গোটা দুনিয়ার চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে।

এক্ষেত্রে বলে রাখি, ভারতের প্রথম কম্পিউটারটির নাম ছিল HEC-2M (এইচইসি-২এম)। তবে আজকের দিনে আমরা যেরকম টেবিলে কম্পিউটার রাখা থাকতে দেখি, শুরুর দিকে কিন্তু যন্ত্রটির চেহারা এরকম ছিল না। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, সেই সময় একটি জাহাজ মারফত দুটি রেকে ইংল্যান্ড থেকে এই গ্যাজেটটিকে আনা হয়েছিল। ফলে আপনারা কম্পিউটারের তখনকার চেহারাটা নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন। আরও অবাক করা ব্যাপার হল, এখন কম্পিউটার কেনার পর এক চুটকিতেই সেটিকে ইনস্টল করে ফেলা যায়; কিন্তু ভারতের সর্বপ্রথম কম্পিউটারটিকে ইন্সটল করতে প্রায় দুই মাস সময় লেগেছিল! তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই এই চমকপ্রদ যন্ত্রটি তখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ছিল, সেই সময় কেবলমাত্র গবেষকরা এটি ব্যবহার করতেন।

আগেই বলেছি যে, এখন যেমন সব কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়, শুরুর দিকে কিন্তু তেমন হতো না। তখন কেবলমাত্র দ্রুত হিসাব-নিকাশ করার জন্যই এই যন্ত্রটিকে ব্যবহার করা হতো। তবে পরবর্তীকালে সাধারণ মানুষও যাতে এই যন্ত্রটিকে ব্যবহার করতে পারেন, সেজন্য জোরকদমে কাজে লেগে পড়েন বিজ্ঞানীরা এবং সেই সুবাদে আইবিএম (IBM) কোম্পানি ১৯৭৫ সালে প্রথম পার্সোনাল কম্পিউটার তৈরি করে। উল্লেখ্য যে, ১৯৫৫ সালের সেই অতিকায় কম্পিউটারের চাইতে আইবিএম কর্তৃক নির্মিত কম্পিউটারটি ছিল অনেক সস্তা এবং হালকা।

ভারতে নির্মিত প্রথম কম্পিউটার

তবে দেশে তৈরি হওয়া প্রথম কম্পিউটার ছিল TIFRAC অর্থাৎ টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ অটোমেটিক ক্যালকুলেটর, যার নামকরণ করেন দেশের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি তথা প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। ১৯৫৬ সালে এটি নানাবিধ কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। এরপর ১৯৬৬ সালে দেশের প্রথম সলিড স্টেট ডিজিটাল কম্পিউটার ISIJU-1 (আইএসআইজেউ-১) তৈরি হয়। কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় একজোট হয়ে এই যন্ত্রটি তৈরি করে। ডিভাইসটির মূল বিশেষত্ব ছিল যে, এটিতে ট্রানজিস্টরও ব্যবহার করা হয়েছিল।  

ভারতের কম্পিউটার বিপ্লবের জনক রাজীব গান্ধী

এরপর নব্বইয়ের দশকে ভারতের কম্পিউটার জগতে কালজয়ী বিপ্লব আনেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী, যে কারণে তাকে কম্পিউটার বিপ্লবের জনক বলা হয়। রাজীবের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়েই ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এমটিএনএল (MTNL) এবং ভিএসএনএল (VSNL)-এরও পথ চলা শুরু হয়েছিল। প্রতিটি ঘরে ঘরে কম্পিউটার পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাজীব গান্ধী কম্পিউটারের ওপর থেকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে নিয়েছিলেন। পরে, ১৯৯১ সাল নাগাদ দেশে সম্পূর্ণ অ্যাসেম্বলড কম্পিউটার আমদানি শুরু হয় এবং এই চমকপ্রদ ডিভাইসটি সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আসতে শুরু করে। 

শুধু তাই নয়, এর ফলে সরকারের সহায়তায় বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলিও সফ্টওয়্যার তৈরি করতে শুরু করে, এমনকি রেলওয়ে রিজার্ভেশন সিস্টেমেও কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হয়। এর ফলে নানাবিধ জায়গায় সরকার অভূতপূর্ব সাফল্য পেতে থাকে, আর সেই কারণেই দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে যাতে এই যুগান্তকারী গ্যাজেটটিকে কাজে লাগানো যায়, সেজন্য সরকার আরও জোরকদমে যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। এর পর থেকেই দেশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জেরে বর্তমানে ভারত বিশ্বের অন্যতম স্মার্টফোন এবং মোবাইল মার্কেট হয়ে উঠেছে। দুনিয়ায় অনেক নামজাদা টেক কোম্পানি এখন তাদের প্রোডাক্ট লঞ্চের জন্য ভারতে বিশেষ লঞ্চ ইভেন্টের আয়োজন করে।

চলতি সময়ে ব্যাপক পরিমাণে বেড়েছে ল্যাপটপ, কম্পিউটারের চাহিদা

বর্তমানে ডেটা অতি সস্তায় উপলব্ধ হওয়ায় এখন স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মতো ডিভাইসগুলি অধিকাংশ মানুষই ব্যবহার করছেন। তবে বছর দুয়েক আগে করোনা মহামারীর আবির্ভাব ঘটায় ঘরে থেকে যাবতীয় কাজকর্ম সম্পাদন অর্থাৎ ওয়ার্ক ফ্রম হোমের জন্য ল্যাপটপ, কম্পিউটারের মতো ইলেকট্রনিক প্রোডাক্টগুলি চাকুরীজীবী, পড়ুয়াসহ সমস্ত মানুষের জীবনেরই এক অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। বিশেষত এই মহামারীর সময় থেকেই মানুষ এই সমস্ত যন্ত্রগুলির প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি পরিমাণে অনুভব করতে শুরু করে। হালফিলে প্রায়শই একগুচ্ছ কার্যকর ফিচার এবং নজরকাড়া ডিজাইনের বিভিন্ন রকমের ইলেকট্রনিক গ্যাজেট মার্কেটে লঞ্চ হতে দেখা যায়। সেক্ষেত্রে ইউজারদের চাহিদা তথা প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে ভবিষ্যতে নির্মাতা সংস্থাগুলি যে আরও অজস্র অত্যাধুনিক ডিভাইস বাজারে নিয়ে আসবে, সেকথা বলাই বাহুল্য।