Android: ভারতে স্মার্টফোনের দাম বাড়তে পারে, পাওয়া যাবে না সিকিউরিটিও! সর্তক করল Google

গতবছরে গুগলের (Google) বিরুদ্ধে প্রতিযোগী সার্চ ইঞ্জিনগুলির প্রতি ষড়যন্ত্রমূলক আচরণে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছিল ‘কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়ার’ বা CCI। এই কারণে সম্প্রতি তাদের জরিমানাও করা হয়েছে। যার পরে আমেরিকা ভিত্তিক টেক জায়ান্টটি ভারতে স্মার্টফোনের দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে। এমনকি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির মুখোমুখিও হতে পারেন বলেও তারা অনুমান করছে। আসলে ২০২২ সালের শেষের দিকে CCI দুটি স্বতন্ত্র আদেশের ভিত্তিতে গুগলের উপর মোট ২২৭৩ কোটি টাকার জরিমানা আরোপ করেছিল। যার মধ্যে প্রথমটিতে, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ডিভাইস ইকোসিস্টেমে নিজের প্রভাবশালী অবস্থানের অপব্যবহার করার জন্য গুগলকে ১৩৩৭ কোটি টাকার জরিমানা করা হয়। আর দ্বিতীয়ত, অ্যাপ ডাউনলোডিং সাইট প্লে স্টোরের (Play Store) মাধ্যমে নিজেস্ব অ্যাপ সমূহকে প্রচার করার দায়ে আরো ৯৩৬ কোটি টাকা জরিমানা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মূলত, গুগল তাদের নির্মিত অ্যাপগুলিকে অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেমে রাখার জন্য স্মার্টফোন নির্মাতাদের সাথে একতরফা চুক্তি করছে বলে বারংবার অভিযোগ জানিয়েছিল CCI। আর এই আধিপত্য বিস্তারে বাঁধা সৃষ্টি করতেই মামলা দায়ের করা হয়। এর বিরুদ্ধে টেক জায়ান্টটি সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। সংস্থাটি যুক্তি দিয়েছে যে, CCI -এর এই পদক্ষেপ ভারতে অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেমের উন্নতি স্থগিত করবে।

CCI কেন Google -কে ফাইন করেছে?

অ্যান্টিট্রাস্ট ওয়াচডগ CCI, গুগলের বিরুদ্ধে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে তাদের নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশনগুলি প্রি-ইনস্টল করার জন্য স্মার্টফোন নির্মাতাদের সাথে অংশীদারিত্ব করার অভিযোগ এনেছে এবং মোট ২২৭৩ কোটি টাকা ফাইন করেছে। এক্ষেত্রে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্ত উক্ত কমিশনটির দাবি – গুগল কোনো স্মার্টফোন নির্মাতা সংস্থাকে তাদের বিকশিত অ্যাপ ইনস্টল করতে বাধ্য করতে পারে না। কেননা CCI চাইছে যে, গুগলের মতো বাকি সার্চ ইঞ্জিনগুলিও যাতে সমান ভাবে স্মার্টফোনে তাদের নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন প্রদান করার সুযোগ পায়। এমনটা হলে, গুগলের প্রাধান্য কমবে এবং অ্যান্ড্রয়েড ইকোসিস্টেমে ভারসাম্য বজায় থাকবে।

প্রসঙ্গত, ক্রোম, জিমেইল, ম্যাপস, ইউটিউব, ড্রাইভের মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে বাধ্যতামূলক ভাবে রাখার গুগলের এই নীতি ভারতীয় প্রতিযোগিতা আইনের (Indian competition laws) বিরুদ্ধ। যার পরিপ্রেক্ষিতেই মূলত CCI, অ্যাপ ডেভেলপারদের বিলিং বা অর্থপ্রদানের জন্য অন্য সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করতে এবং ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে অ্যাপ ব্যবহার সীমাবদ্ধ না করার নির্দেশ দিয়েছে টেক জায়ান্টটিকে। একই সাথে, ভারতে উপলব্ধ ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয়েগুলির তুলনায় গুগল যেন তাদের নিজস্ব অর্থপ্রদানকারী অ্যাপ গুগল পে (Google Pay) -কে অধিক গুরুত্ব না দেয় – এমন সতর্কবাণীও শোনা গেছে CCI -এর বিবৃতিতে।

স্মার্টফোনের নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি এবং বর্ধিত দামের মুখোমুখি হওয়ার সতর্কবার্তা Google -এর

এই বিষয়ে গুগল একটি ব্লগ পোস্টে বলেছে যে, ২০০৮ সালে যখন অ্যান্ড্রয়েড প্রথম চালু হয় তখন স্মার্টফোন খুবই ব্যয়বহুল ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরের মধ্যে গুগলের প্রচেষ্টাতেই টেক ব্র্যান্ডগুলি তাদের স্মার্টফোনকে আরও সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করতে পেরেছে। ফলে CCI -এর আদেশ দেশের ডিজিটালাইস হওয়ার পথকে বাধাপ্রাপ্ত করবে। একই সাথে টেক জায়ান্টটি নিজের পক্ষ রাখতে গিয়ে জানিয়েছে যে, যদি CCI -এর দাবি মেনে ‘ফর্কস’ (forks) অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা হয় তবে এটি ইকোসিস্টেমের ধারাবাহিকতাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। কেননা ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম, ব্যবহারকারী এবং বিকাশকারী উভয়ের জন্যই হিতকর প্রমাণিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের একাধিক স্বতন্ত্র সংস্করণ ‘ফর্কস’ (forks) নামে পরিচিত, যা অন্যান্য সংস্থা দ্বারা মডিফাইড বা পরিবর্তিত এবং গুগল নির্মিত অ্যান্ড্রয়েডের মূল সংস্করণের সাথে সম্পূর্ণরূপে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়৷ এক্ষেত্রে ‘ফর্কস’ গুগলকে ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা প্রদান করার থেকে বিরত রাখতে পারে৷ কেননা, গুগল সিকিউরিটি আপডেট এবং ম্যালওয়্যার তথা বাগ সনাক্তকরণের জন্য স্ক্যানিং পদ্ধতির ব্যবহার করে প্লে স্টোরে তালিকাভুক্ত অ্যাপগুলি নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করে। কিন্তু ‘ফর্কস’ অপারেটিং সিস্টেম চালিত ডিভাইসে মূল অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমের সিকিউরিটি ফিচার সাপোর্ট না করায়, অ্যাপগুলির ক্ষেত্রে এই সম-স্তরীয় নিরাপত্তা প্রদান করা সম্ভব হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে টেক জায়ান্টটি। আর এমনটা হলে, ভারতীয় মোবাইল ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ডেটা হ্যাক হওয়ার পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে, যা খুবই চিন্তার বিষয় হবে।

সর্বোপরি, ‘ফর্কস’ নামক অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করা হলে স্মার্টফোনের দাম বৃদ্ধি হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে গুগল। যেহেতু ‘ফকর্স’ মূল সংস্করণের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, ফলে উচ্চ-স্তরীয় সিকিউরিটি ফিচার প্রদান করা সম্ভব হবে না গুগলের পক্ষে। আর এমনটা হলে, স্মার্টফোন নির্মাতারা তাদের ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে বাধ্য হবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই, OEMs (অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার) তাদের ডিভাইসের দর বাড়াতে বাধ্য হবে এবং ফলস্বরূপ ভারতীয় গ্রাহকদের জন্য স্মার্টফোন আরও ব্যয়বহুল হবে।