রেল এবং মারুতির যুগলবন্দিতে 5 কোটি লিটার তেল সাশ্রয়, গাড়ি পরিবহনেও নতুন রেকর্ড

১৮৫৩ সালে তৎকালীন বোম্বে ও থানের মধ্যে ২১ মাইল দূরত্বের রাস্তায় প্রথমবারের জন্য দৌড় শুরু করে ভারতীয় রেল। এদেশের মাটিতে ভারতীয় রেলওয়ের যাত্রাপথ শুরু সেই থেকে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী যেন এই রেল পথের সূত্রেই এক সুতোয় বাধা। প্রতিদিন প্রায় ১১ হাজার ট্রেন যাত্রা করে এদেশের আনাচে-কানাচে। অর্থাৎ বলা চলে ভারতবর্ষের উন্নতির গতিধারার মূল কাঠামোকেই ধরে রেখেছে ইন্ডিয়ান রেল। এই সূত্রেই আজ চিরাচরিত ডাক ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা তাদের পণ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজেই পাড়ি দিতে ভরসা রাখা হয় রেল ব্যবস্থার উপরেই। তারই এক জলজ্যান্ত প্রমাণ মিলল সদ্য প্রকাশিত এক রিপোর্টে।

গত বছরে অর্থাৎ ২০২২ সালে ট্রেনের মাধ্যমে মারুতি সুজুকির ৩.২ লাখের বেশি গাড়ি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে, যা এযাবৎকালে সর্বাধিক। রেলপথের ব্যবহারের মাধ্যমে বিগত এক বছরে ১,৮০০ মেট্রিক টন কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নির্গমন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। এমনকি ৫ কোটি লিটার জ্বালানি সাশ্রয় হয়েছে রেল পরিবহনের কল্যাণে। ফলে অভাবনীয়ভাবে কমেছে কার্বন ফুটপ্রিন্ট।

এর ফলে গত এক বছরে অন্তত ৪৫ হাজারের বেশি ট্রাক পরিবহনের খরচ বাঁচাতে পেরেছে মারুতি সুজুকি। সংস্থাটির ভারতীয় শাখার ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও এই ব্যাপারে রেল ব্যবস্থাকে অজস্র ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “রেলপথের মাধ্যমে আমাদের গাড়িগুলির সঠিক গন্তব্যে পৌঁছতে সর্বক্ষণ সাহায্য করার জন্য ভারতীয় রেলকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। আগামী দিনে আমরা এই সংখ্যা আরো বাড়াবো। সেই লক্ষ্যে হরিয়ানা এবং গুজরাতের কারখানার সাথে আলাদা করে রেলওয়ে ট্র্যাক বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।”

প্রসঙ্গত, মারুতি সুজুকি ভারতবর্ষের একমাত্র গাড়ি উৎপাদক সংস্থা যাদের অটোমোবাইল ফ্রেট ট্রেন অপারেটর (AFTO) লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়েছে ২০১৩ সালে। গত ১০ বছর ধরে রেলপথের মাধ্যমে সংস্থার গাড়ি ডেলিভারির সংখ্যা অন্তত ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি ভারতীয় রেল ব্যবস্থার মাধ্যমে আউট বাউন্ড লজিস্টিক ২০১৩ সালে ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ১৭ শতাংশ হয়েছে।

এছাড়াও বিগত এক দশকে মারুতি অন্তত ১০.৪ লক্ষের বেশি গাড়ি পরিবহন করেছে রেলপথের মাধ্যমে, যার ফলে বাতাসে ৬৬০০ মেট্রিক টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের মিশে যাওয়া রোধ করা গেছে। গাড়ি পরিবহনের জন্য মারুতি ৪০টি বিশেষভাবে ডিজাইন করা রেলের কোচ ব্যবহার করে, যার প্রত্যেকটিতে ৩০০টির বেশি গাড়ি বহন করার ক্ষমতা রয়েছে।

বর্তমানে মারুতি দিল্লি এবং গুজরাতের ৭টি টার্মিনাল থেকে গাড়ি লোডিং এর ব্যবস্থা চালু রেখেছে। আর গাড়ি ডিসপ্যাচ করার জন্য ১৮টি টার্মিনাল রয়েছে তাদের। এগুলি হল নাগপুর, বেঙ্গালুরু, মুম্বাই, গোয়াহাটি, মুন্দ্রা পোর্ট, ইন্দোর, কলকাতা, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ, আমেদাবাদ, দিল্লি, শিলিগুড়ি, কোয়েম্বাটুর, পুনে, আগরতলা, শিলচর, রাচি এবং লুধিয়ানা।