চাহিদা নেই! ‘সদ্য’ লঞ্চ হওয়া iPhone SE 2022 5G মডেলের উৎপাদন কমাচ্ছে Apple

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত ৯ মার্চ Apple (অ্যাপল) লেটেস্ট A15 Bionic (এ১৫ বায়োনিক) ফ্ল্যাগশিপ চিপসেট সহ iPhone SE 2022 (আইফোন এসই ২০২২) স্মার্টফোনটি লঞ্চ করেছে। নতুন এই আইফোনটি একটি বাজেটকেন্দ্রিক ডিভাইস হিসেবে বাজারে আত্মপ্রকাশ করলেও এতে ফ্ল্যাগশিপ গ্রেডের বেশ কিছু স্পেসিফিকেশনও রয়েছে। শুধু তাই নয়, দামের ভিত্তিতেও iPhone SE 2022 বা iPhone SE 3 এখনও পর্যন্ত এই মার্কিন সংস্থার সবথেকে সস্তা 5G স্মার্টফোন। তাই লঞ্চের আগে থেকেই চর্চায় থাকা এই অ্যাপল ডিভাইসটি বাজারে রীতিমতো ধামাকা সৃষ্টি করবে বলেই আশা করা গিয়েছিল। কিন্তু চলতি রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের সুবাদে পাশা যেন পুরোপুরি উল্টে গিয়েছে!

নিক্কেই এশিয়া (Nikkei Asia)-র ঘনিষ্ঠ সূত্র মারফত জানা গেছে যে, নবাগত আইফোন এসই ২০২২-এর চাহিদা অ্যাপলের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আর তাই এই আইফোন এসই ২০২২-এর প্রোডাকশন বড়ো মাত্রায় হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যাপল। রিপোর্ট অনুযায়ী, কার্পেটিনো টেক জায়ান্টটি পরবর্তী ত্রৈমাসিকে মূল পরিকল্পনার চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ কম আইফোন এসই তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে অ্যাপল তার সাপ্লায়ারদের বলেছে যে, তারা এই ত্রৈমাসিকের জন্য প্রায় ২ মিলিয়ন থেকে ৩ মিলিয়ন ইউনিট প্রোডাকশন অর্ডার হ্রাস করার পরিকল্পনা করছে। প্রত্যাশার চেয়ে দুর্বল চাহিদাই এই উৎপাদন কমার পিছনে মূল কারণ বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে এই প্রত্যাশার চাইতে দুর্বল চাহিদার কোপ যে শুধু আইফোন এসই ২০২২-এর ঘাড়ে গিয়েই পড়েছে তা কিন্তু নয়, অ্যাপলের অন্যান্য আরও অনেক ডিভাইসও এই তালিকায় শামিল রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, অ্যাপল তার সাপ্লায়ারদের পূর্ব পরিকল্পনার তুলনায় পুরো iPhone 13 লাইনআপের কয়েক মিলিয়ন কম ইউনিট তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছে। মৌসুমি চাহিদার ওপর ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য , রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই টেক জায়ান্টটি রাশিয়াতে তাদের প্রোডাক্ট বিক্রি বন্ধ করে দেয়। এদিকে, অ্যাপল হল রাশিয়ার তিন নম্বর স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক। ফলে বিশ্বে যত সংখ্যক আইফোন বিক্রি হয়, তার বেশ বড়রকম মার্কেট শেয়ারই রাশিয়ার ওপর নির্ভর করে। ফলে রাশিয়ায় ফোন সহ যাবতীয় প্রোডাক্টের বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ায় চাহিদা যে খুব স্বাভাবিকভাবেই বেশ খানিকটা কমতে বাধ্য, সেকথা নিঃসন্দেহে বলাই বাহুল্য। IDC-র মতে, কোম্পানিটি গত বছর সেদেশে প্রায় ৫ মিলিয়ন আইফোন বিক্রি করেছে, যা মার্কেট শেয়ারের ১৬ শতাংশ ছিল।

প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সংস্থাটি পুরো বছরের জন্য AirPods-এর ক্ষেত্রেও ১০ মিলিয়নেরও বেশি ইউনিটের অর্ডার হ্রাস করেছে। কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ-এর মতে, অ্যাপল ২০২১ সালে AirPods-এর প্রায় ৭৬.৮ মিলিয়ন ইউনিট শিপমেন্ট করেছে। ফলে চলতি যুদ্ধের সুবাদে সবদিক থেকেই যে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল, সেকথা আর আলাদা করে বলে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে শুধু অ্যাপলেরই নয়, চলতি যুদ্ধ যে দুই দেশের পাশাপাশি বিশ্বের আরও কত ক্ষতি করবে এবং সমগ্র বিশ্ব এই যুদ্ধের দ্বারা ঠিক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত তথা প্রভাবিত হবে, তার উত্তর একমাত্র সময়ের কাছেই রয়েছে।