Cryptocurrency: সংসদ অধিবেশনের আগে মন্ত্রিসভা অনুমোদনের জন্য পেশ করা হতে পারে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিল

বর্তমানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে ক্রিপ্টো সংস্কৃতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সরকারী মহলেও ক্রিপ্টো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তৎপরতা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এরই মধ্যে, চলতি মাসের আসন্ন বাজেট অধিবেশনে অথবা তার পূর্বে, কেন্দ্র সরকারের একটি বৈঠকে, ক্রিপ্টো সম্পর্কিত একটি বিল পেশ করার পরিকল্পনা চলছে।

সরকারী তথ্য অনুযায়ী, বিলটিতে উল্লিখিত ক্রিপ্টো নিয়ন্ত্রণ, তার শ্রেণীবিভাগ ও ট্যাক্স পরিকাঠামোর বিষয়টি ক্যাবিনেটের অনুমোদন পেলে তবেই পরবর্তী শীতকালীন বাজেট অধিবেশনে পার্লামেন্টের অনুমোদনের জন্য পেশ করা হতে পারে।

বিলের ট্যাক্স সম্পর্কিত বিষয়টি প্রথাগত আইনি স্বীকৃতি পেলে সেটি কার্যকর করার ধারাটিও সম্ভবত জানুয়ারির বাজেট অধিবেশনের অর্থনীতি সম্বন্ধিত বিলেই ঘোষণা করা হবে। একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, নির্মলা সীতারমনের (Nirmala Sitharaman) পেশ করা আসন্ন বাজেটে এমন কোনো নিশ্চিত ইঙ্গিত মিলতে চলেছে, যা ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীদের মনে দীর্ঘদিন ধরে জমা হওয়া, ক্রিপ্টোর আইনি অবস্থান ও আসন্ন ভবিষ্যত সম্পর্কিত যাবতীয় ধোঁয়াশা দূর করবে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরেই প্রতিবেশী দেশ চীন ক্রিপ্টো ট্রেডিং ও মাইনিং সংক্রান্ত সমস্ত কার্যকলাপ সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ভারত আপাতত অতটা কঠোর কোনো অবস্থান না নিলেও, তথ্য বলছে, ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করছে মোদী সরকার। অর্থাৎ, বৈধ মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও বিনিয়োগ মাধ্যম ও ডিজিটাল সম্পত্তি হিসেবে বহাল থাকছে বিটকয়েন (Bitcoin), ডোজকয়েনের (Dogecoin) ব্যবহার। পাশাপাশি, ক্রিপ্টো আয়ের ওপর ডাইরেক্ট ও ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স আরোপিত হওয়ার সুযোগও থাকছে।

সম্প্রতি, একজন সরকারী আধিকারিক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ভারতে প্রচলিত টাকার ক্ষেত্রে সার্বভৌম সমর্থন রয়েছে, যেহেতু এটি আইন দ্বারা স্বীকৃত এবং এটিকে সর্বস্তরেই নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা সম্ভব। কিন্তু ক্রিপ্টোর ক্ষেত্রে বৈধ মুদ্রার স্বীকৃতি পাওয়া যথেষ্ট সমস্যাজনক। কারণ, সেক্ষেত্রে গ্যারান্টি কে দেবে? অতএব, ক্রিপ্টোর আপাতত কেবল বাণিজ্যপটু বিনিয়োগ মাধ্যম ও ডিজিটাল সম্পত্তি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

একজন উচ্চস্তরের আধিকারিক এ বিষয়ে আরও জানান, ক্রিপ্টো সম্পর্কিত যে বিধিনিয়ম সরকার আনতে চলেছে তাতে কেবলমাত্র কয়েকটি অনুমোদনপ্রাপ্ত মুদ্রাই তালিকাভুক্ত হবে এবং এক্সচেঞ্জ প্ল্যার্টফর্মে ট্রেডের অনুমতি পাবে। এর ফলে, ক্রিপ্টো মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যার পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের ঝুঁকির মাত্রাও কমবে।

সম্প্রতি, নভেম্বরের ১৮ তারিখে, ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সিডনি ডায়ালগের মঞ্চ থেকে গোটা বিশ্বের উদ্দেশ্যে জারিকৃত হুঁশিয়ারিবার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi), সর্বপ্রথম ক্রিপ্টো নিয়ে সরকারের মধ্যপন্থা নীতির আভাস দেন। তিনি বিশ্বের বড় বড় গণতন্ত্র গুলিকে ক্রিপ্টোমুদ্রার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে একজোট হওয়ার আর্জিও জানান। এর কিছুদিন পূর্বেও, এই একই বিষয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে অায়োজিত, আরেকটি উচ্চস্তরের সরকারী সভায় উপস্থিত প্রায় সকলেই, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার হিতার্থে ডিজিটাল মুদ্রার অবাধ লেনদেনে শীঘ্র আইনি লাগাম টানার পক্ষে সহমত পোষণ করেন।

সূত্রের খবর অনুযায়ী, ক্রিপ্টো মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট আয়ের ওপর ট্যাক্স চাপানোর বিষয়টি নিয়েও স্থির পরিকল্পনা চলছে অর্থমন্ত্রক এর তরফে। এই সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে আয়কর সচিব তরুন বাজাজ (Tarun Bajaj) বলেন, আয়কর ও GST হিসেবে, অনেক মানুষই ইতিমধ্যে ক্রিপ্টোমুদ্রায় আয়ের ওপর ক্যাপিটাল গেন ট্যাক্স (Capital gain tax) প্রদান করছেন। তাঁর মতে, আইনে স্পষ্ট বলা আছে যে ট্যাক্সের হার অন্যান্য পরিষেবার মতোই সমান ভাবে ধার্য করা হবে।

সম্প্রতি, সংবাদসংস্থা PTI- কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বাজাজ জানান, সরকারের তরফে এ সম্পর্কিত কল গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যেই মানুষ ট্যাক্স দিচ্ছেন। অতএব, আইনে কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব কিনা তা তাঁরা বাজেট সংক্রান্ত কার্যকলাপের সময় বিবেচনা করে দেখবেন। ক্রিপ্টো ট্রেডিংয়ে TCS ( Tax collected at source) চালুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি কোনো নতুন আইন আসে, তাহলে সে ক্ষেত্রে এটি বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে। পাশাপাশি, তিনি জানান, আয় করলে সরকারকে ট্যাক্স দিতেই হবে। ইতিমধ্যেই কেউ কেউ ডিজিটাল মু্দ্রাকে অ্যাসেট হিসেবে গণ্য করে ক্যাপিটাল গেন ট্যাক্স প্রদানও শুরু করছে।

একসময়ে ক্রিপ্টো মুদ্রা নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে তৎপর হলেও বর্তমানে ক্রিপ্টোর বহুল জনপ্রিয়তা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই, ক্রিপ্টো নিয়ে অবস্থান তুলনায় শিথিল করেছে সরকার। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে, কেন্দ্রের তরফে, SC Garg কমিটির সুপারিশে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিল ২০২১’ প্রকাশ করা হয়। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশে সমস্ত প্রাইভেট মুদ্রার ব্যবহার নিষিদ্ধ করে, RBI-দ্বারা দেশে সরকারিভাব বৈধ একটি ক্রিপ্টো মুদ্রা চালু করা। সংশ্লিষ্ট কমিটিটি ডিজিটাল কারেন্সির সঠিক গঠন, পরিকাঠামো ও উন্নতি সংক্রান্ত বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য অর্থনৈতিক সংক্রান্ত দফতরের আওতায় RBI, MeitY, DFS এর সদস্যদের নিয়ে একটি পরিচালক দল গঠন করার স্বপক্ষেও সুপারিশ করেছিল।

কেবল কেন্দ্রই নয়, ক্রিপ্টো নিয়ে দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংকের উদ্বেগের নজিরও প্রচুর রয়েছে। ২০১৮ নাগাদ RBI সমস্ত ব্যাংক ও NBFC গুলোর ওপর ক্রিপ্টো ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে তা অপসারিত হয়। সাম্প্রতিক কালে, ক্রিপ্টো নিয়ে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছেন RBI-এর বর্তমান গভর্নর, শক্তিকান্ত দাস (Shaktikanta Dad)। দেশে ব্যবহৃত ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়েও তিনি যথেষ্ট সন্দিহান।

এরই মধ্যে, একটি যৌথ বিজ্ঞাপনে ক্রিপ্টো শিল্প মহল ও এক্সচেঞ্জ মাধ্যমগুলি দাবি করে ভারতীয়দের ক্রিপ্টো বিনিয়োগের পরিমাণ ৬ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এবং বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পেতে পেতে ১০ কোটির ঊর্ধ্বে এসে পৌঁছেছে।

এইরকম পরিস্থিতিতে, ক্রিপ্টোর ভবিষ্যত কি হবে তা সম্পর্কে নানাবিধ আভাস, আলোচনা ভেসে আসলেও, নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারছেন না বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে আমজনতা কেউই। তাই, অধীর আগ্রহে এই মুহুর্তে আসন্ন বাজেটের দিকেই তাকিয়ে অপেক্ষায় দিন গুণছে গোটা ক্রিপ্টো দুনিয়া।