Samsung Galaxy S23 Ultra vs iPhone 14 Pro Max এর মধ্যে কোন ফোনটি সেরা, দেখে নিন পার্থক্য

গতকাল রাতে Samsung তাদের চলতি বছরের প্রথম মেগা লঞ্চ ইভেন্ট ‘Galaxy Unpacked 2023’ চলাকালীন উন্মোচন করেছে Samsung Galaxy S23 সিরিজ। নবাগত এই লাইনআপের অধীনে মোট তিনটি ফোন এসেছে – Samsung Galaxy S23, Galaxy S23+, Galaxy S23 Ultra। যদিও টপ-এন্ড মডেল অর্থাৎ Galaxy S23 Ultra সর্বাধিক নজর কেড়েছে আমাদের। কেননা আলোচ্য ফ্ল্যাগশিপ ফোনটি সংস্থার নতুন ২০০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা সহ এসেছে। আবার এতে লেটেস্ট কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ২ প্রসেসর এবং অ্যান্ড্রয়েড ১৩ বেসড কাস্টম স্কিন পাওয়া যাবে। এক কথায় বললে, ভরপুর অ্যাডভান্স ফিচার বিদ্যমান থাকছে সিরিজের Ultra মডেলে। এক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া ভিত্তিক টেক ব্র্যান্ডটির এই প্রিমিয়াম অফারিংটিকে কড়া টক্কর দিতে পারে লেটেস্ট আইফোন লাইনআপের টপ-এন্ড মডেল iPhone 14 Pro Max। উভয় ফোনের প্রারম্ভিক মূল্য প্রায় এক সমান। যদিও Samsung ফোনটির বেস ভ্যারিয়েন্টের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি তুলনায় বেশি। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম মডেলটিও এগিয়ে আছে। সেক্ষেত্রে আপনি যদি ফোন দুটির মধ্যে কোনটি কিনবেন বুঝে না উঠতে পারেন, তাহলে এই প্রতিবেদনটি পড়ুন। এখানে আমরা Samsung Galaxy S23 Ultra এবং Apple iPhone 14 Pro Max -এর মধ্যে দাম ও ফিচারগত পার্থক্য সম্পর্কে আলোচনা করবো

Samsung Galaxy S23 Ultra vs Apple iPhone 14 Pro Max : ডিসপ্লে, সেন্সর

স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৩ আল্ট্রা ফোনে কর্নিং গরিলা গ্লাস ভিক্টাস প্রোটেকশন সহ ৬.৮-ইঞ্চির এজ কোয়াড এইচডি প্লাস ডায়নামিক AMOLED ২এক্স ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে, যা ১ থেকে ১২০ হার্টজ পর্যন্ত রিফ্রেশ রেট অফার করবে। এছাড়া এই ডিসপ্লে – ১৭৫০ নিট পিক ব্রাইটনেস, ৫-১ পিপিআই পিক্সেল ডেনসিটি, HDR10+ প্রযুক্তি এবং ৮৯.৫% স্ক্রিন-টু-বডি রেশিও সাপোর্ট করে। নিরাপত্তার জন্য এতে আন্ডার ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার মিলবে।

সার্জিক্যাল গ্রেড স্টেইনলেস স্টিলের সাথে আসা আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স ৬.৭-ইঞ্চির সুপার রেটিনা XDR OLED ডায়নামিক আইল্যান্ড নচ ডিসপ্লে সহ এসেছে। এই ডিসপ্লে – অ্যাপলের প্রোমোশান ১২০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট এবং ২০০০ নিট পিক ব্রাইটনেস সাপোর্ট করে। এক্ষেত্রে কনটেন্টের উপর ভিত্তি করে এর রিফ্রেশ রেট ১ হার্টজ থেকে ১২০ হার্টজের মধ্যে সেট করা যাবে। আর ডিসপ্লেটি অলওয়েজ অন ফিচার সাপোর্ট করে। সিকিউরিটি ফিচার হিসাবে এতে ফেস আইডি উপলব্ধ।

Samsung Galaxy S23 Ultra vs Apple iPhone 14 Pro Max : প্রসেসর, অপারেটিং সিস্টেম, র‌্যাম, স্টোরেজ

পারফরম্যান্সের জন্য স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৩ আল্ট্রা ফোনে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ২ প্রসেসরের কাস্টম ভার্সন ব্যবহার করা হয়েছে। এটি অ্যান্ড্রয়েড ১৩ ভিত্তিক ওয়ানইউআই ৫.১ (OnUI 5.1) কাস্টম স্কিনে রান করে। এই ডিভাইসে ১২ জিবি পর্যন্ত র‌্যাম এবং সর্বাধিক ১ টেরাবাইট স্টোরেজ বর্তমান।

অভ্যন্তরীণ স্পেসিফিকেশনের কথা বললে, অ্যাপল আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স মডেলে সংস্থার লেটেস্ট তথা সর্বাধিক শক্তিশালী এ১৬ বায়োনিক (A16 Bionic) চিপসেট আছে, যাতে ২টি হাই পারফরম্যান্স কোর ও ৪টি হাই এফিসিয়েন্সি কোর উপলব্ধ। অপারেটিং সিস্টেম হিসাবে এতে আইওএস ১৬ (iOS 16) পাওয়া যাবে। যদিও সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে ডিভাইসটি আইওএস ১৬.৩ (iOS 16.3) ওএস ভার্সন পর্যন্ত আপগ্রেডযোগ্য। আর এতে ১ টেরাবাইট পর্যন্ত স্টোরেজ মিলবে।

Samsung Galaxy S23 Ultra vs Apple iPhone 14 Pro Max : ক্যামেরা সেটআপ

ক্যামেরা ফ্রন্টের কথা বললে স্যামসাংয়ের এই নয়া প্রিমিয়াম সিরিজের ‘আল্ট্রা’ মডেলে কোয়াড রিয়ার ক্যামেরা সেটআপ উপস্থিত। এই ক্যামেরাগুলি হল – এফ/১.৮ অ্যাপারচার লেন্স ও ৮৫-ডিগ্রি ফিল্ড-অফ-ভিউ সহ ২০০ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি সেন্সর, ১২০-ডিগ্রি ফিল্ড-অফ-ভিউ সহ ১২ মেগাপিক্সেল আল্ট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স, ৩এক্স অপটিক্যাল জুম সাপোর্ট সহ ১০ মেগাপিক্সেল টেলিফটো ক্যামেরা এবং ১০এক্স অপটিক্যাল জুম সহ ১০ মেগাপিক্সেল টেলিফটো শুটার। এদিকে সেলফি ও ভিডিও কলিংয়ের জন্য থাকছে এফ/২.২ অ্যাপারচার সহ ১২ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা।

ফটো ও ভিডিওগ্রাফির জন্য অ্যাপল আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স মডেলে ট্রিপল রিয়ার ক্যামেরা সেটআপ রয়েছে। এই ক্যামেরাগুলি হল – অপ্টিক্যাল ইমেজ স্টেবিলাইজেশন (OIS) সহ ৪৮ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি ক্যামেরা, ৩এক্স অপ্টিঅ্যাল জুম সহ ১২ মেগাপিক্সেল টেলিফটো ক্যামেরা এবং ১২০-ডিগ্রি ফিল্ড-অফ-ভিউ সহ ১২ মেগাপিক্সেল আল্ট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স। এই রিয়ার ক্যামেরাগুলি দুর্দান্ত লো লাইট ফটোগ্রাফি অফার করবে বলে দাবি করা হয়েছে। আবার ডিভাইসের সামনে এফ/১.৯ অ্যাপারচার সহ ১২ মেগাপিক্সেল ট্রু-ডেপ্থ সেলফি ক্যামেরা রয়েছে।

Samsung Galaxy S23 Ultra vs Apple iPhone 14 Pro Max : ব্যাটারি ও চার্জিং ক্যাপাসিটি

কানেক্টিভিটির জন্য স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৩ আল্ট্রা ফোনে – ৫জি, ৪জি এলটিই, ওয়াই-ফাই ৬ই, ওয়াই-ফাই ডাইরেক্ট, ব্লুটুথ ৫.৩ এবং ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট অন্তর্ভুক্ত। পাওয়ার ব্যাকআপের ক্ষেত্রে ডিভাইসে ৫,০০০ এমএএইচ ক্যাপাসিটির ব্যাটারি আছে, যা ৪৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং এবং ১৫ ওয়াট ওয়্যারলেস চার্জিং ২.০ সাপোর্ট করে। সংস্থার দাবি অনুসারে এই ব্যাটারি মাত্র ২০ মিনিটে ফোনকে ৬৫% পর্যন্ত চার্জ করতে সক্ষম।

কানেক্টিভিটি বিকল্প হিসাবে অ্যাপল আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স ফোনে – ওয়াই-ফাই ৮০২.১১ এ/বি/জি/এসি/৬, হটস্পট, ব্লুটুথ ৫.৩, জিপিএস, গ্যালিলিও, এনএফসি, ইউএসবি ২.০ পোর্ট সামিল থাকছে। পাওয়ার ব্যাকআপের জন্য ডিভাইসে ৪,৩২৩ এএমএইচ ক্যাপাসিটির লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি আছে, যা ওয়্যারড চার্জিংয়ের পাশাপাশি ১৫ ওয়াট ওয়্যারলেস (ম্যাগসেফ) এবং ৭.৫ ওয়াট ওয়্যারলেস (কিউআই) চার্জিংও সাপোর্ট করে।

Samsung Galaxy S23 Ultra vs Apple iPhone 14 Pro Max : পরিমাপ, রেটিং

স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৩ আল্ট্রা ফোনের পরিমাপ ৭৮.১x১৬৩.৪x৮.৯ মিমি এবং ওজন ২৩৪ গ্রাম। জল ও ধুলো প্রতিরোধের জন্য এটি IP68 রেটিং প্রাপ্ত।

অ্যাপল আইফোন ১৪ প্রো মাস মডেলের পরিমাপ ১৬০.৭x৭৭.৬x৭.৯ মিমি এবং ওজন ২৪০ গ্রাম। এটিও IP68 প্রাপ্ত।

Samsung Galaxy S23 Ultra vs Apple iPhone 14 Pro Max : দাম

ভারতে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৩ আল্ট্রা ফোনের দাম শুরু হচ্ছে ১,২৪,৯৯৯ টাকা থেকে। এই বিক্রয় মূল্য ফোনটির ১২ জিবি র‌্যাম + ২৫৬ জিবি স্টোরেজ অপশনের। এছাড়া, ১২ জিবি র‌্যাম + ৫১২ জিবি স্টোরেজ এবং ১২ জিবি র‌্যাম + ১ টেরাবাইট স্টোরেজ সহ আসা টপ-অফ-দ্য-লাইন মডেলের দাম যথাক্রমে ১,৩৪,৯৯৯ টাকা ও ১,৫৪,৯৯৯ থাকছে। এটি – ফ্যান্টম ব্ল্যাক, ক্রিম, সবুজ এবং ল্যাভেন্ডার কালারে এসেছে। তবে সংস্থার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফোনটিকে অতিরিক্তভাবে আরো চারটি কালার অপশনে পাওয়া যাবে, যথা – রেড, গ্রাফাইট, লাইম এবং স্কাই ব্লু।

অ্যাপল আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স ফোনের ১২৮ জিবি স্টোরেজ যুক্ত বেস ভ্যারিয়েন্টের দাম ১,৩৯,৯০০ টাকা। আর এর ২৫৬ জিবি, ৫১২ জিবি এবং ১ টেরাবাইট স্টোরেজ সহ টপ-এন্ড মডেলকে যথাক্রমে ১,৪৯,৯০০০ টাকা, ১,৬৯,৯০০ টাকা এবং ১,৮৯,৯০০ টাকায় পাওয়া যাবে। এটি – স্পেস ব্ল্যাক, সিলভার, গোল্ড এবং ডিপ পার্পল কালার অপশনে উপলব্ধ।