ভারত সরকারের কাছে মাথা নোয়াল Google, বড় পরিবর্তন আসছে Android ফোনে

Google India খুব শীঘ্রই ভারতে তাদের Android মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম এবং Google Play Store-এর নিয়মাবলীতে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার সুবাদে আগামী দিনে Android ফোনের চেহারাটাই বদলে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, Play Store-এর মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সেইসাথে Android অপারেটিং সিস্টেমকে কেন্দ্র করে ফোনে একাধিক অ্যাপ এবং প্রোগ্রাম রাখার জন্য স্মার্টফোন নির্মাতা সংস্থাগুলির ওপর অন্যায্যভাবে জোরাজোরি করার অভিযোগে ২০২২ সালের অক্টোবরে Google-কে বেশ মোটা টাকা জরিমানা করেছিল ভারতের অ্যান্টিট্রাস্ট ওয়াচডগ কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া বা সিসিআই (CCI)। তাই সিসিআইয়ের নির্দেশাবলী বাস্তবায়নের জন্য হালফিলে মার্কিনি টেক সংস্থাটি Android ওএসে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করেছে। আসুন বিষয়টির সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

ভারত সরকারের নির্দেশিকা অক্ষরে অক্ষরে মেনে খুব শীঘ্রই Android অপারেটিং সিস্টেমে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে চলেছে Google

উল্লেখ্য যে, বর্তমানে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ৯৭ শতাংশেরও বেশি মার্কেট শেয়ার দখল করে রয়েছে। ফলে সরকারের মতে, আপামর জনগণের নিরাপত্তা তথা সুবিধার জন্য গুগলের বেশ কিছু নিয়মে পরিবর্তন আনা উচিত। তাই সরকারের নির্দেশকে শিরোধার্য করে সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে গুগল ঘোষণা করেছে যে, তারা ভারতের স্থানীয় আইন ও প্রবিধান মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে সিসিআইয়ের নির্দেশাবলী বাস্তবায়নের জন্য বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাজ করা প্রয়োজন। সেজন্য সংস্থাটি আগামী দিনে অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমের নিয়মে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে চলেছে।

এবার থেকে Android ফোনে Google-এর বিশেষ কিছু অ্যাপ প্রি-ইন্সটল থাকা বাধ্যতামূলক নয়

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, নিজেদের ফোনে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এবং গুগল অ্যাপ ব্যবহার করার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিনি টেক জায়েন্টটির তৈরি অধিকার এবং বাধ্যবাধকতা সংক্রান্ত একাধিক চুক্তিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েই সই করতে হয় স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলিকে, যার মধ্যে অন্যতম একটি হল মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডিস্ট্রিবিউশন এগ্রিমেন্ট। এর আওতায় ক্রোম (Chrome) ব্রাউজার, ইউটিউব (YouTube), মিট (Meet) ও জিমেইল (Gmail)-এর মতো অ্যাপগুলি আগে থেকেই অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে ইনস্টল করে দেওয়া হয়। তাই গত অক্টোবরে সিসিআইয়ের পক্ষ থেকে টেক জায়েন্টটিকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, অন্যায়ভাবে কোনো স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানিকে জোরাজোরি করা চলবে না। নতুন ফোন সেট আপ করার সময় সার্চ ইঞ্জিন সহ বিভিন্ন অ্যাপ এবং প্রোগ্রাম বেছে নেওয়ার অপশন দিতে হবে গ্রাহককে। সেক্ষেত্রে গুগল এবার এই কাজে সম্মত হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে যে, অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট মানুফ্যাকচারাররা অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করলেও এখন ফোনে ইউটিউব বা জিমেইলের মতো অ্যাপগুলি প্রি-ইনস্টল থাকা বাধ্যতামূলক হবে না।

আগামী দিনে Chrome ছাড়া অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের সুযোগ পাবেন Android ইউজাররা

এছাড়া, খুব শীঘ্রই ভারতীয় ব্যবহারকারীরা তাদের ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিনটি একটি চয়েস স্ক্রিনের মাধ্যমে চয়ন করার বিকল্প পাবেন। আগামী দিনে যখন কোনো ভারতীয় ইউজার একটি নতুন অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট সেট আপ করবেন, তখন তাদের কাছে এই অপশনটি উপলব্ধ হবে। এর ফলে গ্রাহকরা বাজারে উপলব্ধ মাইক্রোসফট বিং (Microsoft Bing) বা প্রাইভেসি-ফোকাসড ডাকডাকগো (DuckDuckGo)-র মতো অন্যান্য জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন অপশনগুলি ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। সবচেয়ে বড়ো কথা হল, গুগল ব্যতীত অন্য কোনো সংস্থা কর্তৃক নির্মিত অ্যাপ ব্যবহার করলে ইউজাররা সেগুলিকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর আপডেট করার সুযোগও পাবেন।

এখন Google Play-র পাশাপাশি অন্য আর-একটি বিলিং সিস্টেম চয়ন করার বিকল্প পাবেন ডেভেলপাররা

অন্যদিকে, প্লে স্টোর পলিসি অনুযায়ী, অ্যাপ ডেভেলপাররা গুগল প্লে স্টোরের মাধ্যমে কোনো অ্যাপ বিক্রি করলে বা তাদের ইন-অ্যাপ পারচেজের ক্ষেত্রে প্রাপ্য টাকা এতদিন পর্যন্ত শুধুমাত্র গুগল প্লে বিলিং সিস্টেম (GPBS)-এর মাধ্যমেই গ্রহণ করতে হতো। সেক্ষেত্রে অ্যাপ ডেভেলপাররা গুগলের নীতি অনুসরণ না করলে তারা তাদের অ্যাপগুলি প্লে স্টোরে রাখতে পারতেন না। তবে গত বছরের শেষের দিকে মার্কিনি টেক জায়েন্টটির এই দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে ঘোর আপত্তি জানিয়েছিল সিসিআই। কেন্দ্রের মতে, নিজেদের অবস্থানের অপব্যবহার করে পেমেন্ট অ্যাপ এবং ইন-অ্যাপ পেমেন্ট সিস্টেমের প্রচার করছে মার্কিনি টেক জায়েন্টটি, যা কোনোমতেই উচিত নয়। নিজেদের পছন্দমতো যে-কোনো পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করতে পারার ক্ষমতা অ্যাপ ডেভেলপারদের কাছে অবশ্যই থাকা উচিত। সেক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশ মেনে এবার কেন্দ্রের মাথা নোয়াতে সম্মত হয়েছে গুগল। সংস্থাটি জানিয়েছে যে, এখন গুগল প্লের পাশাপাশি অন্য আর-একটি বিলিং সিস্টেম চয়ন করার বিকল্প পাবেন ডেভেলপাররা।

আগামী দিনে Google Play Store ব্যতীত অন্য জায়গা থেকেও অ্যাপ ডাউনলোড করার সুযোগ পাবেন ইউজাররা

পরিশেষে Google একথাও জানিয়েছে যে, ইউজাররা এখন Play Store ব্যতীত অন্য কোনো অ্যাপ স্টোর থেকেও নিজেদের পছন্দসই অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারবেন। তবে আমরা সকলেই জানি যে, থার্ড-পার্টি সোর্স থেকে ডাউনলোড করা অ্যাপগুলিতে ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকারক ভাইরাস থাকার সম্ভাবনা প্রবল হয়। উল্লেখ্য, হালফিলে Google Play Store-এর নানাবিধ অ্যাপেও প্রায়শই ক্ষতিকারক ম্যালওয়্যারের দেখা মেলে। সেক্ষেত্রে অজানা সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করলে ডিভাইসের তথা ইউজারদের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার যে সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে, সেকথা আর আলাদা করে বলে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাই মার্কিনি টেক জায়েন্টটির তরফ থেকে সবুজ সংকেত মিললেও এই কাজটি কিন্তু ব্যবহারকারীদেরকে নিজ দায়িত্বেই করতে হবে। কারণ থার্ড-পার্টি সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করে বিপদে পড়লে তার দায়ভার কিন্তু কোনোমতেই Google নেবে না।