Cryptocurrency: ডিজিটাল মুদ্রার আয়ে কর বসানোর ভাবনা কেন্দ্রের

দেশে ক্রিপ্টো নিয়ে সরকারের দুশ্চিন্তা ক্রমশ বাড়ছে। সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) সিডনি ডায়ালগের ভার্চুয়াল মঞ্চ থেকে বিশ্বের সমস্ত গণতন্ত্রকে ক্রিপ্টো ব্যবহার রোধে একজোট হওয়ার বার্তা দেন। সূত্রের খবর, এবার, ডিজিটাল মুদ্রায় কর আরোপ ও তার খসড়া পরিকাঠামো তৈরির বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার পথে এগোচ্ছে কেন্দ্র।

ক্রিপ্টোকারেন্সির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ধারে ধীরে দেশের প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও ব্যাংকিং পরিকাঠামোকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে, এমনটাই আশঙ্কা করছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিমহলের অধিকাংশ। এক শীর্ষস্থানীয় সরকারী কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভার্চুয়াল কারেন্সিকে ডাইরেক্ট ও ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স নেটের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক এর তরফে জোরালো আলোচনা চলছে। মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ফাঁকগুলি নিয়েও রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও সরকারের তরফে নেওয়া হচ্ছে যৌথ পরিকল্পনা। এছাড়াও, ক্রিপ্টো লেনদেনকারী ও সঞ্চয়কারীদের ওপর স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্যাপিটাল গেন ট্যাক্স (Capital gain tax) কিভাবে আরোপিত হতে পারে এবং তার ভবিষ্যত সম্ভাবনাই বা কতটা তা নিয়েও সংশ্লিষ্ট মহলে চলছে বিস্তর গবেষণা। পাশাপাশি, ক্রিপ্টো জগতে বিভিন্ন পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্য, অন্যান্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ১৮% হারে জিএসটি (GST) ধার্য করার বিষয়টিকেও বিবেচনার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

সরকারী আধিকারিকদের মতে, ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্বন্ধিত ব্যক্তিবর্গকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে ব্রোকারেজের সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে, তার ক্ষেত্র বৃদ্ধি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। বিভিন্ন ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ মাধ্যমগুলি সহ সমস্ত ডিজিটাল অ্যাসেট ট্রেডিং এ সাহায্যকারী সকলকে ব্রোকারেজের আওতায় আনলে তবেই ক্রিপ্টো বাজারে নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে ।

তবে, ডিজিটাল অ্যাসেটের গোটা দুনিয়াকে জিএসটির আওতায় আনার এই পদ্ধতিটি দীর্ঘমেয়াদি এবং এক্ষেত্রে, জিএসটি কাউন্সিলের (GST Council) কাছে এই সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব পেশ করার প্রয়োজন রয়েছে। যদিও সরকারী রিপোর্ট অনুযায়ী, ডাইরেক্ট ট্যাক্সের ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রক, অর্থসংক্রান্ত বিলেই প্রয়োজনীয় সংশোধন এনে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে পারে। এক সরকারী কর্মকর্তা এবিষয়ে মন্তব্য করেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতিটি আইনি উপায়েই এগোবে। তবে, কর আরোপের দিকটি আলাদাভাবে মোকাবিলা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

ট্যাক্স বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞের মতে, যেহেতু ডিজিটাল মুদ্রা এখনই লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে না, বরং ডিজিটাল অ্যাসেট হিসেবে গণ্য হতে চলেছে, কাজেই মূলত ডাইরেক্ট ট্যাক্স এর দ্বারাই এক্ষেত্রে কর সংক্রান্ত বিষয়টি সম্পন্ন করা হবে। মুম্বই এর একজন ট্যাক্স বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জানান, নির্দিষ্ট উপায়ে কর আরোপিত হওয়ার আগে, ক্রিপ্টো মুদ্রার সঠিক গঠনগত ও আইনগত সংজ্ঞায়নের প্রয়োজন। অর্থনৈতিক পরিষেবার আওতায় ফেলে এটিতে কর আরোপের একটি সুযোগ রয়েছে, পাশাপাশি সম্পদ হিসেবেও ক্রেতাদের কাছে এর মূল্য যথেষ্ট। তবে, জিএসটির আওতায় সোনার মতো, এক্ষেত্রে কোনো ব্যতিক্রমি প্রচ্ছদ না থাকলে, ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স চাপানো বেশ কঠিন হবে বলেই মত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির। ফলস্বরূপ, কর আরোপের ক্ষেত্রে, মূল লাভের ওপর ডাইরেক্ট ট্যাক্স চাপানোর পদ্ধতিকেই সম্ভবত বেছে নিতে হবে।

ক্রিপ্টো নিয়ে সরকারসহ দেশের অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির উদ্বেগের ইতিহাস বেশ পুরোনো। অতীতে, ২০১৮ সাল নাগাদ, RBI সমস্ত ব্যাংক ও NBFC-গুলোর ওপর ক্রিপ্টো ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যদিও ২০২০ সালে, সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে সে নিষেধাজ্ঞা উঠেও যায়। বর্তমানে, ফের ক্রিপ্টো নিয়ে তৎপর রিজার্ভ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর, শক্তিকান্ত দাস (Shaktikanta Das)। সম্প্রতি, একটি বৈঠকে দেশীয় অর্থনীতিতে ক্রিপ্টোর ভয়াবহতা সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করেছেন তিনি।

অন্যদিকে, কেন্দ্রের তরফেও ক্রিপ্টো নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক নানা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি ক্রিপ্টোর ভবিষ্যত সম্পর্কে আলোচনার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উচ্চস্তরের বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে সাম্প্রতিক কালে। সিডনি ডায়ালগের মঞ্চে ক্রিপ্টো নিয়ে দেশগুলিকে একজোট হতে আর্জি জানানোর কিছুদিন আগেই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, আধিকারিকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে, সরকারের তরফে ক্রিপ্টো বিষয়ে সক্রিয় ও প্রগতিশীল সিদ্ধান্ত নেওয়ার শপথ করেন। চলতি ধারা বজায় রেখেই সম্প্রতি, বিজেপি নেতা জয়ন্ত সিনহার (Jayanta Sinha) নেতৃত্বে, পার্লামেন্টের অর্থনীতি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ক্রিপ্টো বিষয়ক সর্বপ্রথম সভা আয়োজিত হয়েছিল, যেখানে ক্রিপ্টোর নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ভাবন সম্পর্কিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনার নজির মিলেছিল।

এছাড়া, ব্যক্তিগতস্তরে, আইনপ্রণয়নকারীদের কেউ কেউও এই বিষয়টি নিয়ে অশনিসংকেত শুনিয়েছেন। চলতি মাসের শুরুতে বিজেপি লোকসভা এম পি (MP), নিশিকান্ত দুবে (Nishikant Dubey), ক্রিপ্টো মুদ্রার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন।

এখন, বিভিন্ন মহলের নানাবিধ বিতর্ক, মতামত ও আলোচনার মধ্যেই, দেশে ক্রিপ্টো মুদ্রার সঠিক আইনি অবস্থান ও কর আরোপের বিষয়টি কতদূর এগোয় সেটিই দেখার।