সাবধান! এই পদ্ধতিতে চুরি যাচ্ছে WhatsApp অ্যাকাউন্ট, কিভাবে সুরক্ষিত থাকবেন

হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য সময়টা একেবারেই ভালো যাচ্ছেনা! একে তো তাদের নতুন প্রাইভেসি শর্তাবলী ও নীতিমালা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই, তার ওপরে হ্যাকারদের হানায় হোয়াটসঅ্যাপের নিরাপত্তা শিকেয় উঠতে চলেছে। একটুও বাড়িয়ে বলছি না, চলতি সপ্তাহে অনেক হোয়াটসঅ্যাপ ইউজার তাদের অ্যাকাউন্ট চুরি যাওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন। মূলত Reddit ও Twitter ব্যবহারকারীরা এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। আসুন এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

সকলেই জানেন যে হোয়াটসঅ্যাপে সাইন-ইন করার জন্য কল এবং এসএমএস গ্রহণে সক্ষম সক্রিয় একটি সিম কার্ড প্রয়োজন। লগ-ইন করবার সময় হোয়াটসঅ্যাপ এই নম্বরেই ছয় ডিজিটের ভেরিফিকেশন কোড সেন্ড করে থাকে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারে যেমন পাসওয়ার্ড থাকে, হোয়াটসঅ্যাপের এই ছয় ডিজিটের কোডও ইউজারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপন একটি ডেটা। এই তথ্য কোনভাবেই কারো সাথে শেয়ার করা চলেনা। এই কোড অপরের হাতে গেলে তারা আপনার অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নিতে পারে। বর্তমানে হ্যাকাররা এই পথেই একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ ইউজারদের বোকা বানাচ্ছেন। অবশ্য এক্ষেত্রে চৌর্য্যপটু হ্যাকার ভিন্ন ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করায় তথাকথিত চালাক-চতুর মানুষের পক্ষেও ব্যাপারটা অনুমান করা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রতারণার জন্য বহুক্ষেত্রেই হ্যাকাররা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলিকে টার্গেট করছে। এজন্য তারা একই গ্রুপের একাধিক সদস্যকে বেছে নিচ্ছে। বৃহৎ চক্রের মতোই এরা একের পর এক ইউজারের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট গ্রাস করছে।

কখনো কখনো ইউজারের ফোনে অতি পরিচিত বন্ধু বা প্রিয়জনের এসএমএস আসছে –

“Hey! I Had to recieve a SMS code from Whatsapp but my phone is unable to recieve SMS right now, so I’ve indicated your phone number: can you tell me the code you recieved?”

  • এবার ইচ্ছে হলে এই আপাত নিরীহ মেসেজটিকে আপনি গভীর আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে কিন্তু নিজের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট ও যাবতীয় প্রাইভেসির মায়া ত্যাগ করতে হবে! কারণ ভেরিফিকেশন কোড পেলে, অ্যাকাউন্ট চুরি করতে হ্যাকারের দু’মিনিট সময়ও লাগবে না। তবে ইতিমধ্যেই আপনার সঙ্গে এমনটা ঘটে থাকলে অযথা বন্ধুর উপর রাগ করবেন না, কেননা আপনার সাথে তিনিও প্রতারণার শিকার হয়েছেন!

একান্ত ব্যক্তিগত ভেরিফিকেশন কোডটি হস্তগত করার জন্য হ্যাকার হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীকে নানা ভাবে আশ্বস্ত করে। এক্ষেত্রে তারা মিথ্যে গল্প ফেঁদে, এমনকি খোদ হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের পরিচয়েই ইউজারকে মেসেজ পাঠায়। অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হওয়ার তাড়া, মানুষ অথবা বট (bot) পরীক্ষা সহ অ্যাকাউন্টকে সুরক্ষিত করার পরামর্শ সমন্বিত এই মেসেজগুলি অত্যন্ত ধূর্ততার ফসল। শেষ পর্যন্ত এগুলি আপনার ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ ডেটা চুরির ছক মাত্র। এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কোনভাবেই নিজের ডিভাইসে প্রাপ্ত ভেরিফিকেশন কোডটি অপরের হাতে তুলে দেবেন না। মনে রাখবেন, কোন অবস্থাতেই হোয়াটসঅ্যাপ আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চাইতে পারেনা। তাছাড়া সবুজ রঙের ভেরিফিকেশন ব্যাজ সহ ছাড়া কোন মেসেজ আপনার ফোন এলে তা ভুঁয়ো বলে ধরে নিতে হবে।

“Your WhatsApp account will expire in 2 days. You need to renew it sending the code we sent via SMS”

“The WhatsApp Team needs to know if you’re really a human: send the 6-digit code in this chat you just received via SMS.”

“[WHATSAPP]: we have detected inusual activity in your account. Please confirm your identity with the verification code.”

এবার প্রশ্নটা হলো নিজের অ্যাকাউন্টকে সুরক্ষিত রাখার কোন উপায় রয়েছে কিনা। উত্তর – রয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের প্রথম পরামর্শ হলো, কোন স্বীকৃতিহীন ওয়েবসাইট থেকে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করার বদলে সব সময় অ্যাপ স্টোর, টেস্ট ফ্লাইট (TestFlight), প্লে-স্টোর বা হোয়াটসঅ্যাপের নিজস্ব ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন। দ্বিতীয়ত, হোয়াটসঅ্যাপের টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন ফিচারটি সক্রিয় (enable) করুন। এটি আপনার অ্যাকাউন্টকে অতিরিক্ত সুরক্ষা প্রদান করবে। আমাদের সর্বশেষ পরামর্শের কথা আমরা আগেই উল্লেখ করেছি – কোন অবস্থাতেই নিজের ছয় ডিজিটের কোড অপরকে জানাবেন না।

এছাড়া অ্যাকাউন্ট রিকভার করার জন্যেও নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি রয়েছে। এক্ষেত্রে সবথেকে সরলতম উপায়টি হলো নতুন করে হোয়াটসঅ্যাপে সাইন-ইন করা। এর ফলে হোয়াটসঅ্যাপ অপর ব্যক্তিটিকে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে লগ আউট করে দেবে। অবশ্য হ্যাকার টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন ফিচার সক্রিয় করলে নিজের অ্যাকাউন্টের সম্পূর্ণ অ্যাক্সেস পেতে, আপনাকে অনন্ত সাত দিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। এরপরেই আপনি পুরোনো টু-স্টেপ ভেরিফিকেশনটিকে নাকচ করতে পারবেন যার ফলে আপনার অ্যাকাউন্ট বেদখলে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।