Hero MotoCorp Electric Scooter: প্রতীক্ষা শেষ! হিরো মটোকর্প তাদের প্রথম ই-স্কুটার মার্চে লঞ্চ করতে প্রস্তুত

দু’দশকের বেশি সময় ধরে বিশ্বের বৃহত্তম টু-হুইলার প্রস্তুতকারীর তকমা ধরে রেখেছে হিরো মটোকর্প (Hero MotoCorp)। দেশে চার চাকার জগতে যেমন মারুতি সুজুকি (Maruti Suzuki) একটি অপ্রতিরোধ্য নাম, তেমনই সময়ের সাথে সাথে দু’চাকা গাড়ির জগতে নিজেদের স্থান আরও পোক্ত করে চলেছে হিরো মটোকর্প। এতদিন জ্বালানি তেলে চলা মোটরসাইকেল-স্কুটার দক্ষতার সাথে তৈরি করে এসেছে তারা। তবে ভবিষ্যতে প্রথাগত জ্বালানির গাড়ির বাজার যখন পড়বে, তখন সেই ঝুঁকি সহজেই এড়াতে এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিল সংস্থাটি। সামনের মাসে অর্থাৎ মার্চেই ভারতের বাজারে আত্মপ্রকাশ করবে হিরো মটোকর্পের বহু প্রতীক্ষিত ইলেকট্রিক স্কুটার (EV)।

হিরো মটোকর্প গত বছরের নভেম্বরে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, ২০২২-এর মার্চের মধ্যে ই-স্কুটার লঞ্চ করার জন্য জোরকদমে কাজ চলছে। সেই প্রতিশ্রুতি পালনে হিরো যে বন্ধপরিকর, সে কথার পুনরাবৃত্তি শোনা গেল সংস্থার চিফ ফিনান্সিয়াল (CFO) অফিসার নিরঞ্জন গুপ্তা (Niranjan Gupta)-র বক্তব্যে। তিনি জানান, হিরো মটোকর্প তাদের প্রথম বৈদ্যুতিক স্কুটার মার্চে লঞ্চ করতে প্রস্তুত।

সংস্থার বৈদ্যুতিক যানবাহন বাজারে আসার প্রসঙ্গে গুপ্তা বলেন, “দামি, সাধারণ ভোক্তাদের জন্য সস্তা, মধ্যম আয়ের গ্রাহক – হিরো মটোকর্প দিনের শেষে সমস্ত বিভাগেই বৈদ্যুতিক দু’চাকা গাড়ি নিয়ে আসবে। আমাদের লক্ষ্য, একটি শ্রেণীর জন্য একচেটিয়া নয়। প্রতিটি দেশবাসীর হাতে সুলভে ই-স্কুটারের চাবি তুলে দেওয়া। আর সঠিক সময় এলেই এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে।”

প্রসঙ্গত, গত বছরের অগাস্টে সংস্থার প্রথম ই-স্কুটারের চেহারা সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিল হিরো মটোকর্প। ২০১১ সালে দীর্ঘ দু’দশকেরও বেশি সময়ের সহযোগী হন্ডা (Honda)-র হাত ছেড়ে স্বাবলম্বী হয়েছিল হিরো। তারই দশম বর্ষপূর্তিতে একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের একদম শেষে সংস্থার বৈদ্যুতিক স্কুটারের (নমুনা মডেল) প্রথম ঝলক দেখা গিয়েছিল।”

ই-স্কুটারটি অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তোরের কারখানা থেকে যে তৈরি হয়ে বেরোবে, তা আগেই স্পষ্ট করা হয়েছে। দেশের বাজারে হিরোর প্রধান প্রতিপক্ষ বাজাজ (Bajaj) ও টিভিএস (TVS) ইতিমধ্যেই এই ধরনের যানবাহনের বাজারে পা রেখেছে। অন্য দিকে, তুমুল জনপ্রিয় অ্যাক্টিভা (Activa)-র ইলেকট্রিক ভার্সন এখানে লঞ্চের পরিকল্পনা করছে হন্ডা (Honda)। আবার সুজুকি (Suzuki)-ও তাদের বার্গম্যান (Burgman) ম্যাক্সি-স্কুটারের ব্যাটারিচালিত মডেল নিয়ে পরীক্ষা করছে। অর্থাৎ যা প্রেক্ষাপট, এখন থেকেই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে হিরো মটোকর্প। ইন্টারনাল কম্বাশন ইঞ্জিনের মতো ইলেকট্রিক পাওয়ারট্রেনের যুগেও দুর্গ অটুট রাখতে চায় তারা।

চার্জিং স্টেশনের ঘাটতির কারণে ক্রেতাদের অনেকেই ইচ্ছুক থাকলেও বৈদ্যুতিক যানবাহন ব্যবহারে ভরসা পান না। এই অবস্থায় চার্জ দেওয়ার স্টেশনের অভাব যাতে হিরো মটোর্পের ইলেকট্রিক স্কুটার কেনার পথে অন্তরায় না হয়ে দাঁড়ায়, তার জন্য খুব সম্প্রতি ভারত পেট্রলিয়াম (BPCL)-এর সাথে জোট বেঁধে আগাম প্রস্তুতিও সেরে রেখেছে তারা।

তবে শুধু চার্জিং স্টেশন নয়, ব্যবহারকারীদের সময় বাঁচাতে ব্যাটারি বদলের স্টেশন খুলতে ইতিমধ্যেই তাইওয়ানের সংস্থা গোগোরো (Gogoro)-তে বিনিয়োগ করেছে হিরো মটোকর্প। বৈদ্যুতিক যানবাহনের সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে দুই সংস্থা। পাশাপাশি ভবিষ্যতে হিরো মোটোকর্পের ই-স্কুটারে গোগোরো-র অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়সাধন করা হবে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন মহলের দাবি, হিরো ইলেকট্রিকের সাথে নামের মিল থাকায় ও এই নিয়ে আইনি ঝামেলা এড়াতে নতুন সাব-ব্র্যান্ডের অধীনে ইলেকট্রিক ভেহিকেল আনবে হিরো মটোকর্প। জল্পনা বাড়িয়ে এর মধ্যেই সহকারী সংস্থার মোট ছ’টি নামের জন্য নথিভুক্তকরণ সেরে রেখেছে তারা। তার মধ্যে প্রতিটি নাম শুরু ভিডা (Vida) দিয়ে – ভিডা ইলেকট্রিক (Vida Electric), ভিডা ইভি (Vida EV), ভিডা মোবিলিটি (Vida Mobility), ভিডা মোটোকর্প (Vida MotoCorp), ভিডা মোটরসাইকেল (Vida Motocycle), এবং ভিডা স্কুটার (Vida Scooter)‌।