Job scam: চাকরির জন্য অনলাইনে আবেদন করে 5 লক্ষ টাকা গচ্চা গেল, এই ভুল কখনই করবেন না

আজকাল কেবল ফটো, ভিডিও কিংবা মেসেজ শেয়ার করে বন্ধুবান্ধব কিংবা আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্যই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহৃত হয় না, বরং Facebook, Instagram, এবং Twitter-এর মতো অ্যাপগুলিকে হাতিয়ার করে এখন বহু মানুষ ভালো ভালো চাকরির সন্ধান পেতেও সক্ষম হচ্ছেন। সহজে বললে, মানুষের একাকীত্ব দূর করার পাশাপাশি তাদেরকে রোজগারের সুলুক সন্ধান করে দিতেও বর্তমানে ভীষণভাবে কার্যকর হয়ে উঠেছে এই সকল সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ। তবে যথাযথভাবে চোখকান খোলা না রাখলে কিন্তু এই সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলির মারফত চাকরির আবেদন করলে বেশ বড়োসড়ো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন ইউজাররা। পূর্বেও এই ধরনের বহু ঘটনা ঘটেছে, এবং সম্প্রতি পাওয়া খবর অনুযায়ী, হালফিলে মুম্বাইয়ের এক মহিলা Instagram মারফত চাকরির আবেদন করে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা খুঁইয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু ঠিক কীভাবে ঘটলো এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা? আসুন জেনে নিই।

Instagram-এ চাকরির আবেদন করতে গিয়ে ৫ লক্ষ টাকা গচ্ছা গেল এক মহিলার

সংবাদ সংস্থা পিটিআই (PTI)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রের থানের ২৬ বছর বয়সী এক মহিলা একদিন ভালো চাকরি খোঁজার জন্য ইনস্টাগ্রামে স্ক্রোল করছিলেন। আচমকাই তিনি অ্যাপটিতে একটি চাকরির বিজ্ঞাপন দেখতে পান। খুব স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টির সম্পর্কে বিশদে জানতে তিনি বিজ্ঞাপনটিতে ক্লিক করেন, এবং এরপরে তাকে একটি ওয়েবসাইটে রিডাইরেক্ট করা হয়। তিনি দেখেন যে, চাকরিটি পেতে হলে ওয়েবসাইটটিতে কিছু অর্থ প্রদান করার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। এরপর চাকরি পাওয়ার আশায় ওই মহিলা ওয়েবসাইটটিতে তার যাবতীয় ব্যক্তিগত ডিটেইলস ফিলআপ করেন, এবং সেখানে বলা থাকা টাকার পরিমাণটিও পেমেন্ট করে দেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ওই মহিলা ইনস্টাগ্রামে চাকরির জন্য আবেদন করার পরবর্তী ছয় দিনে মোট ৫,৩৮,১৭৩ টাকা প্রদান করেন।

খুব স্বাভাবিকভাবেই মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে দেওয়ার পর নিশ্চিতভাবে চাকরি পেয়ে যাবেন বলে আশা করেছিলেন ওই মহিলা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এরপরে তিনি চাকরিদাতার কাছ থেকে কোনো মেসেজ পাননি। যদিও পরবর্তীকালে তিনি নিজে জব প্রোভাইডারের সঙ্গে যোগাযোগ করার বহু চেষ্টা করেন, কিন্তু কোনোভাবেই আর তাদের নাগাল পাওয়া যায়নি। এর ফলে স্পষ্টতই ওই মহিলা বুঝতে পারেন যে, তিনি নির্ঘাত সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। এরপর আততায়ীদের হাতেনাতে ধরার আশায় তিনি চিতলসার থানায় গিয়ে নিজের অভিযোগ জানান এবং ঘটনাটির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ আইপিসি ধারা ৪২০ (প্রতারণা) এবং তথ্য প্রযুক্তি আইনের প্রাসঙ্গিক ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে অপরাধীদের ধরার জন্য পুলিশ জোরকদমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

যত দিন যাচ্ছে, হু হু করে গোটা দেশজুড়ে বাড়ছে সাইবার জালিয়াতির ঘটনা

উল্লেখ্য যে, চলতি সময়ে ভারতে মাত্রাতিরিক্ত হারে অনলাইন প্রতারণা বেড়ে গিয়েছে। কোভিডের পর থেকেই মানুষ অত্যধিক পরিমাণে অনলাইনে চাকরির জন্য আবেদন করছেন, এবং এই মহামারীর আগমনের সুবাদে বহু মানুষ কাজ হারানোয় এখনও অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির মাধ্যমে ভালো চাকরির সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এই সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করে প্রতারণার নতুন ফাঁদ পেতে সহজসরল ইউজারদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলির মারফত চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা যদি নিম্নোক্ত বিষয়গুলি মাথায় রেখে চলেন, তাহলে তারা অতি অনায়াসে এই ধরনের কেলেঙ্কারির হাত থেকে রেহাই পেতে সক্ষম হবেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় জব স্ক্যামের হাত থেকে কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন জেনে নিন

▪️জব ডিটেইলস খুব ভালোভাবে পড়ে নিন: লিঙ্কডইন (LinkedIn) এবং গ্লাসডোর (Glassdoor)-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলিতেই মানুষ মূলত চাকরির সন্ধান করে থাকেন। তবে এখন ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামেও নানা ধরনের কাজের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। তবে এই জব অফারগুলি আসল নাকি নকল, তা যাচাই করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। সেক্ষেত্রে বলি, ভুয়ো চাকরির বিজ্ঞাপনকে শনাক্ত করার জন্য প্রথমে আপনাদেরকে জব ডিটেইলস খুব ভালোভাবে পড়তে হবে। জালিয়াতরা অনেক সময় চিত্তাকর্ষক বেতন উল্লেখ করে একটি আকর্ষণীয় হেডলাইন দিয়ে মানুষকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে, কিন্তু তার অধীনে এমন চাকরির বিবরণ লেখা থাকে যা হেডলাইনটির সঙ্গে একেবারেই প্রাসঙ্গিক নয়। তাই অনলাইনে চাকরির আবেদন করার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি মাথায় রাখা খুবই জরুরী।

▪️অনলাইনে কোম্পানির নাম যথাযথভাবে সার্চ করে নিন: সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে পোস্ট করা বহু চাকরির বিজ্ঞাপনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিটির সম্পর্কে বিশদে জানার জন্য একটি লিঙ্কের উল্লেখ থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে সেটি একটি ফিশিং লিঙ্ক, যার দৌলতে ইউজাররা নিজের অজান্তেই সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়ে যান। কখনো এই ধরনের লিঙ্কে ক্লিক করে ব্যবহারকারীরা কোম্পানিটির সম্পর্কে যা ইনফর্মেশন জানতে পারেন, তার সবটাই হয় ভুয়ো; তো কখনো আবার লিঙ্কে ক্লিক করার দৌলতে ইউজারদের ডিভাইসের সম্পূর্ণ অ্যাক্সেস চলে যায় হ্যাকারদের হাতে৷ তাই কোনো কোম্পানিতে চাকরির জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে কোনো লিঙ্কে ক্লিক করার আগে সংস্থাটির সম্পর্কে যথাযথভাবে অনলাইনে সার্চ করে নিন।

▪️URL চেক করুন: প্রায়শই স্ক্যামাররা নামজাদা কোম্পানির নাম এবং ওয়েবসাইটগুলিকে হুবহু কপি করে একটি ভুয়ো চাকরির বিজ্ঞাপন পোস্ট করে। ফলে আচমকা দেখলে বোঝাই যায় না যে বিজ্ঞাপনটি নকল। তাই অনলাইনে কোনো সংস্থায় চাকরির জন্য আবেদন করার আগে সর্বদা প্রথমে কোম্পানির ইউআরএল (URL) চেক করুন। তদুপরি, ইউআরএল-এ https:// লেখা আছে কি না, সেটা দেখে নেওয়াও একান্ত আবশ্যক। এর পাশাপাশি ওয়েবসাইটের যাবতীয় ডিটেইলসের বানান খুব ভালো করে চেক করে নেওয়াও খুবই জরুরী, কারণ সাধারণত জাল ওয়েবসাইটে প্রচুর সংখ্যক ভুল বানান এবং ব্যাকরণগত ত্রুটির দেখা মেলে। এই বিষয়গুলি আগেভাগে খুঁটিয়ে যাচাই করে নিলে কোনো চাকরির বিজ্ঞাপন ভুয়ো কি না, তা অতি অনায়াসেই জেনে ফেলতে পারবেন ইউজাররা।

▪️অজানা লিঙ্কে ক্লিক করবেন না: চাকরি পাওয়ার আশায় অজানা সোর্স কিংবা অপরিচিত কারোর কাছ থেকে পাওয়া লিঙ্কে খবরদার ক্লিক করবেন না। এমনকি আপনার পরিচিত কেউ এই বিষয়ে কোনো লিঙ্ক পাঠালেও তাতে ক্লিক করার আগে অবশ্যই দুবার ভাবনাচিন্তা করে নিন।

▪️মোটা টাকার প্রলোভনে দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে যাবেন না: কথাতেই আছে, লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। তাই মোটা অঙ্কের বেতন দেখে লোভের বশবর্তী হয়ে আগেপিছে কিছু না ভেবে আচমকাই কোনো সংস্থায় চাকরির জন্য আবেদন করে ফেলবেন না। পাশাপাশি যে সমস্ত কোম্পানি প্রথমে আগাম টাকা নিয়ে পরবর্তীকালে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, সেই সমস্ত বিজ্ঞাপনগুলির থেকে দশ হাত দূরে থাকুন।