একথা আমরা সকলেই জানি যে, স্মার্টফোন কেনাবেচার নিরিখে গ্লোবাল মার্কেটে বিশ্বের নামিদামি দেশের মধ্যে ভারতের নাম সর্বদা প্রথম সারিতেই আসে। তবে শুধু কেনাবেচাই নয়, উৎপাদনের দিক থেকেও ভারত কোনোমতেই পিছিয়ে থাকতে রাজি নয়। আর সেজন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের আওতায় বিশ্বের নামজাদা স্মার্টফোন নির্মাতা সংস্থাগুলিও ভারতে মোবাইল উৎপাদনে উদ্যোগী হয়েছে। সেইসাথে দেশে ইলেকট্রনিক সিস্টেম ডিজাইন অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং (ESDM) ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণে উৎপাদন বাড়াতে ইতিমধ্যেই ‘মডিফায়েড স্পেশ্যাল ইনসেন্টিভ প্যাকেজ স্কিম’ চালু করেছে কেন্দ্র। আর এর ফলে মেড ইন ইন্ডিয়া স্মার্টফোনের চাহিদাও ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং কথাটি যে একদম খাঁটি সত্যি তার এক জ্বলন্ত প্রমাণ সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে পাওয়া গিয়েছে।
মার্কেট রিসার্চ ফার্ম কাউন্টারপয়েন্ট (Counterpoint)-এর এই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে মেড ইন ইন্ডিয়া স্মার্টফোন শিপমেন্টের ইয়ার-অন-ইয়ার (YoY) গ্রোথ ৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির দরুন গোটা বিশ্ববাজারে কম্পোনেন্টের ঘাটতি চরমে পৌঁছেছিল, এবং সেইসময়ে হ্রাসপ্রাপ্ত চাহিদার দরুন ভারতীয় স্মার্টফোন বাজারে এই মহামারীর চরম কুপ্রভাব পড়ে। তবে দেশীয় স্মার্টফোন ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের দরুনই কিন্তু এই পরিস্থিতির সামাল দেওয়া গিয়েছিল। এরপর যত সময় গড়িয়েছে, এই ফোনগুলির চাহিদাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে।
আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, মেড ইন ইন্ডিয়া স্মার্টফোন শিপমেন্টের ক্ষেত্রে ২২ শতাংশ শেয়ার নিয়ে সবার প্রথমে রয়েছে ওপ্পো (Oppo)। এরপরে ২১ শতাংশ শেয়ার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানটি নিজের দখলে রেখেছে স্যামসাং (Samsung)। তবে গত বেশ কয়েকটি ত্রৈমাসিকে ক্রমাগত হ্রাসপ্রাপ্ত চাহিদার দরুন এই বছরের প্রথম কোয়ার্টারে ফিচার ফোনের উৎপাদন ৪১% YoY হ্রাস পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে৷
সাম্প্রতিক রিপোর্টটিতে মেড ইন ইন্ডিয়া স্মার্টফোনের শিপমেন্ট বৃদ্ধির যে খবর পাওয়া গেছে, তার নিরিখে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে ভারতে স্মার্টফোনের উৎপাদন বাড়ছে। সিনিয়র রিসার্চ অ্যানালিস্ট প্রাচীর সিং (Prachir Singh) এক বিবৃতিতে বলেছেন, গত বছর ২০২১ সালে মেড ইন ইন্ডিয়া স্মার্টফোনের শিপমেন্ট ১৯০ মিলিয়ন ইউনিট অতিক্রম করেছিল। আর এই বছরেও এর পরিমাণ যে আরও বাড়বে, তার সুস্পষ্ট আভাস উল্লিখিত রিপোর্টটিতেই পাওয়া গিয়েছে। ভারতে ক্রমবর্ধমান স্মার্টফোনের চাহিদা এবং সেইসাথে রপ্তানি বৃদ্ধিই এর মূল কারণ বলে তিনি মনে করছেন। তবে সরকারের তরফে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগও যে দেশে উৎপাদন বাড়াতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করছে, সেকথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে আর-এক রিসার্চ অ্যানালিস্ট প্রিয়া জোসেফ (Priya Joseph) জানিয়েছেন, ভারতকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে গড়ে তোলাই হচ্ছে সরকারের মূল লক্ষ্য। এর জন্য প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেন্টিভ বা পিএলআই (PLI)-এর মতো একাধিক কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র, যার ফলে দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেটের উৎপাদনের পরিমাণ বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এককথায় বলতে গেলে, পিএলআই স্কিম এই মোবাইল উৎপাদন কর্মকাণ্ডের একটি সুযোগ্য অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। ফলে আগামী দিনে স্মার্টফোন ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে বিশ্বের প্রথম সারির কয়েকটি দেশের মধ্যে ভারত যে নিশ্চিতভাবে জায়গা করে নেবে, সেকথা বলাই বাহুল্য।