কার্বনঘটিত দূষণ থেকে সুরক্ষার জন্য ৪৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি মার্ক জুকারবার্গ এবং তাঁর স্ত্রীর

যত দিন যাচ্ছে, ততই সারা পৃথিবীতেই পরিবেশ দূষণের মাত্রা বেশ উল্লেখযোগ্য রকমভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায়ই বহু দেশের সংস্থাই এই দূষণের মাত্রা রোধ করার জন্য একাধিক কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে এবার কার্বন অপসারণের মাধ্যমে জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তথা পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখতে এক দৃঢ় পদক্ষেপ নিলেন Meta-র সিইও মার্ক জুকারবার্গ এবং তাঁর স্ত্রী প্রিসিলা চ্যান। সম্প্রতি জুকারবার্গ এবং তাঁর স্ত্রী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত চ্যান জুকারবার্গ ইনিশিয়েটিভ (Chan Zuckerberg Initiative বা CZI) সংস্থাটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO2) অপসারণের পদ্ধতি দ্বারা জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করার জন্য ৪৪ মিলিয়ন ডলার নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে গোটা পৃথিবীতে বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কার্বন অপসারণ হল বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস সম্পূর্ণভাবে দূরীকরণ করার প্রক্রিয়া। যেহেতু এটি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের নিঃশ্বাস থেকে নির্গত প্রাথমিক গ্রিনহাউস গ্যাস, তাই গত কয়েক দশক ধরে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ব্যাপক নির্গমনের ফলে ইতিমধ্যেই গোটা পৃথিবী যথেষ্ট পরিমাণে দূষিত হয়েছে। সাধারণভাবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড অপসারণের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কোনো প্রয়োজন নেই। প্রকৃতি তার গাছ এবং ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের মাধ্যমে এটির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম। অন্যদিকে, আণুবীক্ষণিক সামুদ্রিক শৈবাল বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সংগ্রহ করে সেটিকে সমুদ্রে বিলীন করে দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে।

কিন্তু সাম্প্রতিককালে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের জীবনযাত্রায় আধুনিকীকরণের ছোঁয়া আনতে ব্যাপক হারে গাছ কাটা হচ্ছে, আর সেইসাথে জনসংখ্যার হারও গোটা বিশ্বেই উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বিপর্যয়ের হাত থেকে আমাদের প্রিয় পৃথিবীকে বাঁচাতে এখন পরিবেশ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে নির্মূল করা একান্ত আবশ্যক হয়ে উঠেছে। তাই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা অর্থাৎ দূষণ রুখতে প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া ছাড়া এখন মানুষের কাছে আর অন্য কোনো উপায় নেই। আর সেজন্য প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করেই পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখার বাজি ধরেছে চ্যান জুকারবার্গ ইনিশিয়েটিভ। CZI-এর ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এর জন্য কোম্পানিটি বিভিন্ন সংস্থার সাহায্য নিয়ে পরিবেশ থেকে কার্বন অপসারণের জন্য যাবতীয় সরঞ্জাম এবং উপযুক্ত প্রযুক্তিতে টাকা বিনিয়োগ করবে।

উদাহরণস্বরূপ, এই ধরনের প্রচেষ্টাকে বাস্তবায়িত করতে অত্যাধুনিক টেকনোলজির CO2 ইলেক্ট্রোলিসিসের সাহায্য নেওয়া হবে। এর জন্য CZI, Twelve নামক একটি কোম্পানিতে ২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। আবার, ২১ মিলিয়ন ডলার যাচ্ছে লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর কার্বন ম্যানেজমেন্ট (ICM)-এর খাতে। সংস্থাটি তিনটি বিশেষ পদ্ধতিতে পরিবেশ থেকে কার্বন অপসারণ করবে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে একটি হল “ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল ডাইরেক্ট এয়ার ক্যাপচার”, যা বর্তমানে ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলির চেয়ে অনেক বেশি শক্তি-সাশ্রয়ী (energy-efficient) হবে।

উপরন্তু, ICM পোর্টল্যান্ডাইট (কার্বন-নেগেটিভ কংক্রিট তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত একটি উপাদান) উৎপাদনের জন্য একটি নতুন ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল পদ্ধতি ডেভেলপ করার চেষ্টা করবে। সংস্থার ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সিমেন্ট উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি কার্বন নির্গমনের হারকে ৬৫ শতাংশ হ্রাস করতে পারে, যা ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাপী কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের ৮%-এর জন্য দায়ী। SeaChange নামক তৃতীয় প্রকল্পটি একটি এনার্জি-এফিশিয়েন্ট পদ্ধতির দ্বারা সমুদ্রের জলে দ্রবীভূত CO2 অপসারণ করবে, যার ফলে গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদিত হবে।

জানিয়ে রাখি এই প্রকল্পগুলি ছাড়াও, CZI, বিল গেটসের Breakthrough Energy Fellows-কে ১০ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে, যা এই জাতীয় অন্যান্য ডিকার্বনাইজেশন প্রযুক্তিগুলিকে ত্বরান্বিত করবে। খুব স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে, দূষণের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে বেশ জোরকদমে লেগে পড়েছে CZI, ফলত আশা করা যায় যে, অত্যাধুনিক তথা কার্যকর প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা খুব শীঘ্রই তুলনামূলকভাবে দূষণমুক্ত পৃথিবীর সাক্ষী হতে পারব!