কিশোর-কিশোরীদের স্বার্থে বদলে যাচ্ছে Facebook ও Instagram, আর মেসেজ পাঠাতে পারবে না প্রাপ্তবয়স্করা

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ইন্টারনেট এখন মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন কমবেশি সবার বিচরণ; শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল – সর্বত্রই এখন অন্তর্জালের মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছেন আপামর জনগণ। এর ফলে সময়ের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে সাইবার ক্রাইমের মাত্রা এবং ক্রমশ মারাত্মক আকার ধারণ করছে সাইবারবুলিং (Cyberbulling)। বর্তমান ডিজিটাল যুগে এক বেদনাদায়ক আতঙ্ক ও অস্থিরতার নাম হিসেবে সর্বসাধারণের কাছে পরিচিত হয়েছে এই শব্দটি। মূলত অনলাইনে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য ঘটানো বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপকে সাইবারবুলিং বলা হয়। অর্থাৎ সোজা কথায় বললে, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষকে হয়রান করার নামই সাইবারবুলিং।

সাইবারবুলিং রুখতে Facebook ও Instagram-এ নয়া ফিচার আনছে Meta

সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বর্তমানে দেশে সাইবার বুলিংয়ের ঝুঁকি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে; এবং প্রধানত নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরীরা এর শিকার হচ্ছেন। আর মূলত এই পদ্ধতিতে মানুষকে হয়রান করার জন্য ফেসবুক (Facebook) এবং ইনস্টাগ্রাম (Instagram) – এই দুটি বহুল জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জানা গেছে, সাইবারবুলিংয়ের প্রায় ৮৭ শতাংশ ঘটনাই ঘটে ফেসবুকে। তাই এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটিতে ইউজারদের সম্পূর্ণভাবে নিরাপত্তা প্রদান করার লক্ষ্যে মেটা সম্প্রতি ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের জন্য নতুন সিকিউরিটি ফিচার চালু করেছে, যার সহায়তায় অনলাইনে এই ধরনের আতঙ্কের হাত থেকে কিশোর-কিশোরীরা রক্ষা পাবেন।

মেটা ঘোষণা করেছে যে, নতুন প্রাইভেসি টুলগুলি ইউজারদেরকে সাইবারবুলিংয়ের হাত থেকে রক্ষা তো করবেই, সেইসাথে তাদের বয়সের ভিত্তিতে সমসাময়িক মানুষের সাথে সংযোগ বজায় রাখতে সহায়তা করবে। সংস্থার তরফে জানা গিয়েছে যে, এখন থেকে ১৬ বছরের কম বয়সী (অথবা নির্দিষ্ট কিছু দেশে ১৮ বছরের কম বয়সী) কেউ যদি ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে যোগ দেয়, তাহলে তাদের অ্যাকাউন্টে বাইডিফল্ট বেশ কিছু প্রাইভেট সেটিংসের দেখা মিলবে। এর ফলে আপামর তরুণ সম্প্রদায়ের ফ্রেন্ডলিস্টে কারা থাকবে কিংবা তাদের পোস্ট করা যাবতীয় মিডিয়া ফাইলগুলি কারা কারা দেখতে পারবে, সে সম্পর্কিত সবকিছুই তারা নিজেরাই বেছে নিতে পারবেন। ফলে অনলাইনে কিশোর-কিশোরীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মেটার এই নয়া উদ্যোগ যে ব্যাপকভাবে কার্যকর হবে, সেকথা বলাই বাহুল্য। নীচে সেই সমস্ত প্রাইভেসি ফিচারগুলির কথা উল্লেখ করা হল, যেগুলি ফেসবুকে এবার থেকে কিশোর-কিশোরীদের জন্য বাইডিফল্ট চালু করা হবে।

▪️ কারা ব্যবহারকারীদের ফ্রেন্ডলিস্ট দেখতে পারবেন (Who can see their friends list)

▪️ ইউজাররা কাদেরকে ফলো করছেন, সেই লিস্টটি কারা দেখতে পারবেন (Who can see the people, Pages and lists they follow)

▪️ কারা কিশোর-কিশোরীদের প্রোফাইলে ট্যাগ করা পোস্টগুলি দেখতে পারবেন (Who can see posts they’re tagged in on their profile)

▪️ পোস্টগুলি রিভিউয়ের পর প্রোফাইলে প্রদর্শিত হওয়ার আগে কাদেরকে সেগুলি ট্যাগ করা হবে (Reviewing posts, they’re tagged in before the post appears on their profile)

▪️ ব্যবহারকারীদের পাবলিক পোস্টে কারা কমেন্ট করতে পারবেন (Who is allowed to comment on their public posts)

এবার আর প্রাপ্তবয়স্করা অযথা কিশোর-কিশোরীদেরকে সাইবারবুলিংয়ের শিকার করার সুযোগ পাবেন না

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, সাইবার বুলিংয়ের মূল সুবিধা হল, নিজেকে আড়াল করার জন্য একটি স্ক্রিন ও পরিচয়হীনতার ঢাল থাকে। তাই স্ক্রিনের আড়ালে থেকে একটা মানুষকে আক্রমণ করে তার আত্মসম্মান মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার মধ্যে অনেকেই এক অদ্ভুত ক্ষমতার (তথা আনন্দের) স্বাদ খুঁজে পান, যার জেরেই দিন-কে-দিন সাইবারবুলিংয়ের ঘটনার সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে। এককথায় বললে, নিজের ব্যক্তিগত জীবনের সমস্ত অতৃপ্তি মেটাতেই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে হাতিয়ার করে একশ্রেণীর মানুষ অন্যদেরকে এই ধরনের আক্রমণ করে থাকেন। এবং অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে যে, প্রাপ্তবয়স্করা কিশোর-কিশোরীদের অযথা নানারকম মেসেজ পাঠিয়ে বিরক্ত করতে থাকেন। তাই এই সমস্যার হাত থেকে তরুণ সম্প্রদায়কে রেহাই দিতে খুব শীঘ্রই একটি নতুন ফিচার আনার পরিকল্পনা করছে মেটা।

সম্প্রতি মেটা একটি ব্লগ পোস্টে জানিয়েছে যে, আগামী দিনে তারা কিশোর-কিশোরীদের অ্যাকাউন্ট থেকে ‘মেসেজ’ (Message) বাটনটিকে সরিয়ে দেবে। এর ফলে তরুণ সম্প্রদায়ের ফ্রেন্ডলিস্টে বিদ্যমান নয়, এমন কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তাদেরকে আর বিরক্ত করার সুযোগ পাবেন না। এর পাশাপাশি কমবয়সীরা যাতে একদম নিশ্চিন্তে এবং নিরাপদে এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটিকে ব্যবহার করতে পারে, তার জন্য মার্ক জুকারবার্গের নেতৃত্বাধীন সংস্থাটি ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লোইটেড চিলড্রেন (NCMEC)-এর সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। এছাড়া, কিশোর-কিশোরীদের অন্তরঙ্গ ছবি ছড়িয়ে যৌন হয়রানির ঘটনা রুখতে Thorn এবং তাদের NoFiltr ব্র্যান্ডের সাথে অংশীদারিত্ব করেছে মেটা।

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, ইউজাররা প্ল্যাটফর্মটির রিপোর্ট পেজে গিয়ে ফেসবুকের সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টগুলির সম্পর্কে রিপোর্ট করতে পারেন। এর জন্য তাদেরকে নিম্নোক্ত স্টেপগুলি ধাপে ধাপে অনুসরণ করতে হবে:

  • ফেসবুক ওপেন করুন।
  • আপনি যে পেজ বা প্রোফাইলটির সম্পর্কে রিপোর্ট করতে চাইছেন, সেটিতে যান।
  • পেজের কভার ফটোর নীচে থাকা তিনটি ডটে (three dots) ক্লিক করুন।
  • এখন ফাইন্ড সাপোর্ট (Find Support) বা রিপোর্ট পেজ (Report Page) সিলেক্ট করুন।
  • পেজটি ঠিক কীভাবে ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডকে লঙ্ঘন করছে, সে বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন।
  • সবশেষে পেজটির সম্পর্কে রিপোর্ট করুন।

একইভাবে, Instagram-এ পাওয়া কোনো মেসেজ সম্পর্কে রিপোর্ট করতে চাইলে ব্যবহারকারীদের নিম্নোক্ত স্টেপগুলি ধাপে ধাপে অনুসরণ করতে হবে:

  • ইনস্টাগ্রাম অ্যাপে কনভার্সেশনটি ওপেন করুন।
  • আপনি যে মেসেজটির সম্পর্কে রিপোর্ট করতে চাইছেন, সেটিতে ট্যাপ করুন।
  • মেসেজটির পাশে ট্যাপ করুন।
  • রিপোর্ট (Report)-এ ক্লিক করুন।

একইভাবে, কোনো অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে রিপোর্ট করতে গেলে ইউজারদেরকে যে কাজগুলি ক্রমান্বয়ে করতে হবে, তা নীচে উল্লেখ করা হল:

অ্যাকাউন্ট পেজে যান > পেজের ডানদিকের কোণে থাকা তিনটি ডটে ক্লিক করুন > রিপোর্ট-এ ট্যাপ করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *