অপরাধের প্রতক্ষ্যদর্শী স্মার্টফোন ও স্মার্টওয়াচ, গল্প ফেঁদেও শেষরক্ষা হল না স্বামীর

কথায় আছে অপরাধী যতই চালাক হোক না কেন, নিজের দুষ্কর্মের প্রমাণ তারা অপরাধ স্থলেই ফেলে আসে। তদন্তকারীরা মূলত সেই সমস্ত প্রমাণের উপর ভিত্তি করেই অপরাধীদের খুঁজে বের করেন এবং তারপর আইন মোতাবেক তাদের শাস্তি হয়। ছোট ছোট অনেক বিষয়, বস্তু বা ঘটনা অপরাধী শনাক্তকরণে সাহায্য করলেও, স্মার্টফোন এবং স্মার্টওয়াচের সাহায্যে অপরাধীকে হাতেনাতে ধরার ঘটনা বিরল। অথচ গ্রীসে ঠিক এমনটাই ঘটতে দেখা গেল। সম্প্রতি একজন গ্রীক পাইলট তার স্ত্রীকে খুন করার পর মিথ্যে গল্প ফেঁদে বসে। প্রথমদিকে তদন্তকারীরা তার কথার দ্বারা প্রভাবিত হলেও শেষ পর্যন্ত খুনীর স্মার্টফোন এবং তার স্ত্রীর স্মার্টওয়াচের থেকে প্রাপ্ত ডেটাকে ব্যবহার করে তারা অপরাধীর কৃতকর্ম ধরে ফেলে। আসুন পুরো বিষয় সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেওয়া যাক।

বিবিসি নিউজের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই উল্লেখযোগ্য অপরাধী শনাক্তকরণের ঘটনাটি প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদ অনুযায়ী একজন গ্রীক হেলিকপ্টার পাইলটের বাড়ি থেকে তার স্ত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকারীর অনুসন্ধানে গেলে মহিলার স্বামী একটি দীর্ঘ গল্প ফেঁদে বসেন। তার বক্তব্য ছিলো যে আচমকা তার বাড়িতে কিছু দুষ্কৃতি ঢুকে পড়ে। মূলত লুটপাট চালানো তাদের উদ্দেশ্য হলেও শেষপর্যন্ত তারা সেই মহিলা অর্থাৎ পাইলটের স্ত্রীকে হত্যা করে। লুটপাটকারী দল তাকে বেঁধে রাখার ফলে তিনি হত্যাকান্ডে কোন বাধা দিতে পারেননি বলেও মহিলার স্বামী দাবী করেন।

প্রথমে বক্তার দ্বারা প্রভাবিত হলেও, অনুসন্ধানে এগোতেই পুলিশ ক্রমে ভিন্ন সত্য আবিষ্কার করে। গৃহকর্তার স্মার্টফোন এবং তার স্ত্রীর স্মার্টওয়াচ থেকে প্রাপ্ত তথ্য তাদের মহিলার স্বামীর ব্যাপারে সন্দেহ করতে বাধ্য করে। আস্তে আস্তে তারা বুঝতে পারেন যে মহিলার স্বামীর বলা পুরো কাহিনীটিই আদতে মিথ্যে। বক্তব্যের মধ্যে অজস্র স্ববিরোধ থাকায় তদন্তকারীরা অপরাধীকে ধরে ফেলতে সমর্থ হন।

প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী মৃতার স্মার্টওয়াচের বায়োমেট্রিক ডেটা থেকে তদন্তকারীরা তার হৃদস্পন্দন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন। এছাড়া তার স্বামীর স্মার্টফোন থেকে ঘটনার দিন তার নড়াচড়ার ব্যাপারে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। এগুলি ছাড়া মৃতার বাড়ির নজরদারি ব্যবস্থা থেকেও তদন্তকারীরা তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে। সমস্ত কিছু মিলিয়ে দেখতে গিয়ে তারা ঘটনার মধ্যে একাধিক অসঙ্গতি আবিষ্কার করেন।

মৃতার স্মার্টওয়াচ থেকে প্রাপ্ত তথ্য প্রকাশ্যে এলে দেখা যায় স্বামীর বক্তব্য অনুযায়ী যে সময়ে তার প্রাণহীন নিথর দেহের ঘরে পড়ে থাকার কথা, সেই সময়েও তার হৃদস্পন্দন সচল ছিলো! আবার হত্যাকারীরা যখন মৃতার স্বামীকে বেঁধে রেখেছিল বলে দাবী, তখন নিজের বাড়ির চারপাশে তার ঘুরে বেড়ানোর প্রমাণ পাওয়া যায়। মৃতার স্বামীর স্মার্টফোনের অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকার সচল থাকায় এই প্রমাণ উঠে আসে। সব থেকে বড় কথা গৃহকর্তা তার বাড়িতে যে দুষ্কৃতি দলের ঢুকে পরার কথা জানান, বাড়ির নজরদারি ব্যবস্থায় তাদের কোন চিহ্নমাত্র নেই!

এরপরেই তদন্তকারীরা মৃতার স্বামীকে চেপে ধরেন। টানা আট ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর মৃতার স্বামী সেই গ্রীক পাইলট মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং স্বীকার করে নেয় যে সে নিজেই তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন

Caption-