অনলাইনে জালিয়াতির শিকার এবার মুখ্যমন্ত্রীর মেয়ে, এই বিষয়গুলি অতি অবশ্যই মাথায় রাখুন

সাধারণ মানুষকে বোকা বানাতে বানাতে এবার প্রতারকেরা ঢুকে পড়লো খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে! আজ্ঞে হ্যাঁ, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মেয়ে সম্প্রতি একটি প্রতারণার শিকার হয়েছেন, যার ফলে তার প্রায় ৩৪,০০০ টাকা লোকসান হয়ে গেছে। অনলাইন সেলিং ওয়েবসাইট ওএলএক্সে নিজের পুরোনো সোফা সেট বিক্রি করতে গিয়েই তিনি এই প্রতারণার শিকার হন। এ নিয়ে তিনি পুলিশেও অভিযোগ জানিয়েছেন। আসলে এই ধরনের প্রতারণা এখন হামেশাই ঘটে চলেছে। বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে সাম্প্রতিক ইউপিআই নির্ভর অর্থের আদান-প্রদান সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়ে তাদের ঠকানো হয় বলে সবক্ষেত্রে এগুলিকে সাইবার সুরক্ষাজনিত অপরাধের তালিকায় ফেলা যায়না। তাই অনলাইনে কোনকিছু কেনাবেচা করতে চাইলে খানিকটা সতর্ক থাকা উচিত, নইলে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর পরিবার যেখানে সুরক্ষিত নয়, সাধারণ মানুষ সেখানে বিরাট অংকের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।

কিন্তু ব্যবহৃত জিনিস বেচতে গিয়ে আপনি যে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন তা বুঝবেন কি করে? এর জন্য কয়েকটি ব্যাপার খেয়ালে রাখতে হবে। যেমন ধরুন সাইকেল, গিটার, আসবাবপত্র সহ যে কোন দ্রব্য বিক্রির জন্য আপনি ওএলএক্স (Olx) বা কুইকারে (Quikr) একটি বিজ্ঞাপন পোস্ট করলেন। এরপর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আপনার নম্বরে ইচ্ছুক ক্রেতার ফোন আসা শুরু হলো। এই ধরনের ক্রেতা আপনার সাথে দরদামের ঝামেলায় যেতে চাইবেনা। আপনি যে দামে প্রোডাক্টটি বিক্রি করছেন, তারা তৎক্ষণাৎ সেই দাম দিতে প্রস্তুত। অথচ ছোট ছোট জিনিস কেনার ক্ষেত্রেও আমরা দরদাম না করে পারিনা। তাই ক্রেতার অতিরিক্ত উৎসাহে খুশি হয়ে তখনই রাজি না হয়ে যাওয়াই ভালো, কেননা এক্ষেত্রে অপরপক্ষ প্রতারক হতে পারে।

শুধু দরদাম না করাই নয়, অনেকক্ষেত্রে ক্রেতার পক্ষ থেকে আরো লোভনীয় প্রস্তাব আসতে পারে। সেক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্ট দ্রব্যের জন্য দ্বিগুণ, এমনকি তিনগুণ অর্থ দিতেও অরাজি হবেননা। খুব সাবধান, এইরকম ফাঁদে পা দেবেন না। এভাবে খুব সহজেই প্রতারণাকারী আপনাকে টুপি পরিয়ে ফায়দা লুটতে পারে।

মনে রাখতে হবে, এই ধরনের দুর্নীতি মূলত ইউপিআই নির্ভর লেনদেনকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে। তাই প্রতারক ইউপিআইয়ের মাধ্যমেই বিক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী মূল্য পাঠাবার অনুরোধ জানায়। অগ্রিম বুকিং এর জন্য সে বিক্রেতার গুগল পে (Google Pay) বা ফোনপে (Phonepe) নম্বর চেয়ে নেয়। তারপর বিক্রেতাকে টাকা পাঠাবার পরিবর্তে সে রিক্যুয়েস্ট মানি (Request Money) অপশনটি ব্যবহার করে। এবার অনেকক্ষেত্রেই আমরা তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বা ঠিকমতো না দেখার কারণে প্রতারকের জালে জড়িয়ে যেতে পারি। এভাবে আমাদের বহুদিনের বহুকষ্টের সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট থেকে জলের মতো বেরিয়ে যেতে পারে।

আবার কিছু মার্চেন্ট পেমেন্টের ক্ষেত্রে পেটিএম (Paytm) ও অন্যান্য কয়েকটি ইউপিআই অ্যাপ্লিকেশন আমাদের একটি ওটিপি (OTP) প্রদান করে থাকে। প্রতারক নিজেও মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টের মালিক হতে পারে। হলে বিক্রেতার খাতা থেকে টাকা সরানোর জন্য সে তার কাছে ওটিপি কোড জানতে চায়। এক্ষেত্রে যারা সরলতার বশে ক্রেতাকে ওটিপি কোডটি পাঠিয়ে দেবেন, তাদের ধরাশায়ী হতে মুহূর্তও লাগবেনা। সঙ্গে সঙ্গেই তার পকেট ফাঁকা হয়ে যাবে। আসলে এই বিষয়টা মাথায় রাখা উচিত যে অন্য কেউ আপনার অ্যাকাউন্টে অর্থ প্রদান করলে কোনরকম ওটিপি জেনারেট হবেনা। একমাত্র আপনার খাতা থেকে টাকা তুললে তবেই ওটিপি কোড সেন্ড করা হবে। সুতরাং লেনদেনের ক্ষেত্রে এগুলো বুঝে নেওয়া জরুরী।

প্রতারকেরা বিক্রেতাকে বারবার, বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে রাজি করানোর চেষ্টা করতে পারে। তাই সদাসজাগ না থাকলেই মুশকিল। এক্ষেত্রে সরাসরি ক্রেতার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করুন এবং বিক্রয়যোগ্য দ্রব্যটি বিনিময়ের পর হাতে হাতে টাকা চেয়ে নিন। নগদ অর্থ গ্রহণ সবক্ষেত্রেই নিরাপদ। তবে একান্তই তা সম্ভব না হলে ইচ্ছুক ক্রেতার ব্যাপারে ভালোভাবে যাচাই করা প্রয়োজন। দ্রব্যটি কিনতে হলে ক্রেতার স্বয়ং উপস্থিতি জরুরী। অতএব তাকে স্বচক্ষে প্রোডাক্টটি দেখতে আমন্ত্রণ জানান। এক্ষেত্রে তিনি কিছুতেই প্রকাশ্যে আসতে না চাইলে তার প্রতারক হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন