Pan Card Update: মুহূর্তে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খালি হয়ে যাবে, প্যান কার্ড আপডেট নিয়ে সতর্ক করল HDFC ব্যাঙ্ক

ব্যাঙ্কিং জালিয়াতির অন্যতম একটি কৌশল হল ফিশিং এসএমএস। এই ধরণের প্রতারণামূলক পদ্ধতি অবলম্বনে স্ক্যামাররা, প্রথমেই যেকোনো একটি নামজাদা ব্যাঙ্কের ছদ্মবেশ ধারণ করে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভুয়ো বার্তা পাঠায়।

সাইবার জালিয়াতির ঘটনা দিন কে দিন বেড়েই চলেছে। ফলে প্রায় প্রতিদিনই, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাঙ্কিং বা ডিজিটাল পেমেন্ট সংক্রান্ত প্রতারণার হাজার হাজার মামলা সাইবার সেলে রেজিস্টার হওয়ার কথা খবরের হেডলাইনে জায়গা করে নিচ্ছে। Statistica -এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, ২০২১ সালে ভারত জুড়ে ৪.৮ হাজারেরও বেশি অনলাইন ব্যাঙ্কিং জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এক্ষেত্রে স্ক্যামাররা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বনে লোক ঠকানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যেমন বর্তমানে মানুষকে প্রতারিত করতে ফিশিং SMS টেকনিক বহুলভাবে ব্যবহার করছে স্ক্যামাররা। এই জালিয়াতিতে একটি ফেক এসএমএস পাঠিয়ে সাইবার জালিয়াতরা মানুষকে ভয় দেখায় যে, তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং এসএমএসের সাথে সংযুক্ত লিঙ্কে ক্লিক করে কেওয়াইসি (KYC) বা প্যান কার্ড তথ্য আপডেট না করলে অ্যাকাউন্ট রিকভার করা সম্ভব নয়। এমন মেসেজ পেয়ে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে কিছু না ভেবে তড়িঘড়ি লিঙ্কে ক্লিক করে দেন। যারপর ভিক্টিমের ফোন হ্যাক করে তাদের যাবতীয় ব্যক্তিগত এবং ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত তথ্য চুরি করে অর্থ লুট করে নেয় হ্যাকাররা।

বর্তমান সময়ে ফিশিং এসএমএস জালিয়াতি একটি খুবই সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আর তাই প্রত্যেক ব্যাঙ্কিং সংস্থাই তাদের ইউজারদের উদ্দেশ্যে, এই ধরনের SMS এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। সম্প্রতি একটি ঘটনার কথাও জানিয়েছে ব্যাঙ্কটি। জানা গেছে আজ এক HDFC গ্রাহক, উক্ত ব্যাঙ্কের নাম করে আসা একটি প্রতারণামূলক এসএমএস পাওয়ার অভিযোগ জানায়। যারপর ব্যাপারটা খতিয়ে দেখে ব্যাঙ্কটি স্বয়ং প্রত্যেক HDFC ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের সতর্ক করেছে।

সঙ্ঘমিত্রা মজুমদার নামের ওই টুইটার ব্যবহারকারী আজ টুইটারের একটি ফিশিং এসএমএসের স্ক্রিনশট শেয়ার করেন এবং HDFC ব্যাঙ্ককে ট্যাগ করে এই বিষয়ে অবগত করান। এই এসএমএসে লেখা আছে, “প্রিয় HDFC গ্রাহক, আপনার HDFC NET ব্যাঙ্কিং আজ স্থগিত করে দেওয়া হবে। দয়া করে এখনই আপনার প্যান কার্ড আপডেট করতে নীচে দেওয়া লিঙ্কটি ক্লিক করুন।”

এই টুইট দেখে আরেকজন টুইটার ব্যবহারকারীও তার কাছে আসা একটি এসএমএস শেয়ার করেন। যেখানে সেই ব্যক্তিকে এসএমএস -এ প্রদত্ত লিঙ্কে গিয়ে তার কেওয়াইসি (KYC) তথ্য আপডেট করতে বলা হয়েছে। যদি তিনি এমনটা না করেন তবে তার HDFC অ্যাকাউন্ট হোল্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

যাইহোক, অভিযোগকারিণীর পোস্টের প্রত্যুত্তরে HDFC ব্যাঙ্ক জানায় যে, “আপনাকে, প্যান কার্ড / কেওয়াইসি আপডেট বা অন্য কোনও ব্যাঙ্কিং তথ্য প্রদান করতে বলা কোনো অজানা নম্বরগুলিতে রিপ্লাই না করার জন্য অনুরোধ করছি আমরা। HDFC ব্যাঙ্ক সর্বদা তাদের অফিসিয়াল আইডি hdfcbk / hdfcbn থেকে মেসেজ পাঠায় এবং মেসেজগুলিতে প্রদত্ত লিঙ্কের আগে সর্বদা http://hdfcbk.io লেখা থাকে।” আবার আরেকটি টুইটার থ্রেডে HDFC ব্যাঙ্কের সার্ভিস ম্যানেজার লিখেছেন, “সর্বদা মনে রাখবেন, HDFC ব্যাঙ্ক কখনই মেসেজের মাধ্যমে আপনার PAN কার্ডের বিশদ, OTP, UPI, VPA / MPIN, কাস্টমার আইডি, পাসওয়ার্ড, কার্ড নম্বর, এটিএম পিন এবং CVV চাইবে না। অনুগ্রহ করে নিজের ব্যক্তিগত বিবরণ গোপন রাখুন এবং কারোর সাথে শেয়ার করবেন না!”

ফিশিং ব্যাঙ্ক এসএমএস স্ক্যাম কী?

ব্যাঙ্কিং জালিয়াতির অন্যতম একটি কৌশল হল ফিশিং এসএমএস। এই ধরণের প্রতারণামূলক পদ্ধতি অবলম্বনে স্ক্যামাররা, প্রথমেই যেকোনো একটি নামজাদা ব্যাঙ্কের ছদ্মবেশ ধারণ করে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভুয়ো বার্তা পাঠায়। তারপর ভিক্টিমদের কাছে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য যেমন – অ্যাকাউন্টের বিবরণ (অ্যাকাউন্ট নম্বর, কার্ড নম্বর, OTP, CVV), OTP এবং আইডেন্টিফিকেশন নম্বর চায়৷ অথবা ভিক্টিমের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভ রাখার অজুহাত দিয়ে তাদের কেওয়াইসি (KYC) বা প্যান কার্ডের তথ্য আপডেট করার জন্য একটি লিঙ্কে ক্লিক করতে বলে। আর একবার যদি কেউ এই ফাঁদে পা দিয়ে লিঙ্কে ক্লিক করে ফেলেন, তবে তৎক্ষণাৎ তাদের মোবাইল বা ব্যাঙ্কের ক্রেডেন্সিয়ালের অ্যাক্সেস পেয়ে যায় হ্যাকাররা, যা ব্যবহার করে নিমেষের মধ্যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খালি করে দিতে পারে নেপথ্যে থাকা এইসকল অসৎ ব্যক্তি।

ফিশিং ব্যাঙ্ক এসএমএস স্ক্যাম থেকে এই ভাবে নিরাপদ থাকুন

১. অপরিচিত কোনো নম্বর থেকে মেসেজ বা ফোন কল এলে ভুলেও কখনো নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য যেমন – OTP, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিশদ, মোবাইল নম্বর বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করবেন না৷

২. আপনার UPI, ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং অ্যাপ এবং মোবাইলে সর্বদা শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সেট করুন। আর অবশ্যই কিছু সময় অন্তর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।

৩. ব্যাঙ্কের নাম করে আসা যেকোনো এসএমএস রিকোয়েস্টের উত্তর দেওয়ার আগে সর্বদা প্রেরকের পরিচিতি যাচাই করে নিন। প্রয়োজনে নিজের ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হন। অথবা কোনো মেসেজ দেখে সন্দেহ জাগলে সেই নম্বর রিপোর্ট বা ব্লক করে দিন।

৪. অনলাইন ব্যাঙ্কিং অ্যাপ ডিভাইসে থাকলে, অবশ্যই টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন সিকিউরিটি ফিচার এনাবল করুন৷ এমনটা করলে প্রত্যেকবার অ্যাপ অ্যাক্সেস করার সময় আপনাকে পাসওয়ার্ড এবং OTP এন্টার করতে হবে। এমনকি আপনি ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার বিকল্পও নির্বাচন করতে পারেন।

৫. অচেনা কোনো নম্বর থেকে ব্যাঙ্কের নাম করে এসএমএস এলে চেক করে নিন তাতে থাকা লিঙ্ক URL -টি যথাযথ কিনা। ফিশিং এসএমএসের লিঙ্ক দেখেই আপনি বুঝতে পারবেন এবং আর এসএমএসে একাধিক ভুল বানানের ইংরেজি শব্দও দেখতে পারবেন।