লাগেজ অদলবদল, নিজের ব্যাগ ফেরত পেতে IndiGo-র ওয়েবসাইট হ্যাক করলেন এক যাত্রী!

এই দুনিয়ায় কত রকমের ভুল হয়, অনেক সময় হয় ভুলের সংশোধনও। তবে এবার ভুলবশত ফ্লাইটে ব্যাগ অদলবদল হয়ে যাওয়ায়, তা ফেরত পাওয়ার জন্য (পড়ুন বিমান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সাহায্য না মেলায়) ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের (IndiGo Airlines) ওয়েবসাইট হ্যাক করতে বাধ্য হলেন এক যাত্রী! হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার কথা প্রকাশ্যে এসেছে। পাটনা থেকে বেঙ্গালুরুগামী একটি ফ্লাইটে এক যাত্রীর ব্যাগ অন্য একজনের সঙ্গে অদলবদল হয়ে যায়। এরপর বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে সেই যাত্রীর সাথে যোগাযোগের করার জন্য বারংবার সাহায্য চেয়েও কোনো ফল না পেয়ে অবশেষে বিমান সংস্থার ওয়েবসাইট হ্যাক করে নিজের ব্যাগ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন ওই ‘হ্যাকার’। আসুন ঘটনাটির সম্পর্কে একটু বিশদে জেনে নেওয়া যাক।

নন্দন কুমার নামের ওই সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার টুইট করে গোটা ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ জানিয়েছেন। তিনি গত ২৭ মার্চ ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের ৬ই-১৮৫ ফ্লাইটে পাটনা থেকে বেঙ্গালুরু যাচ্ছিলেন। ফ্লাইটে নিছকই ভুলবশত অপর এক যাত্রীর সঙ্গে তার ব্যাগটি অদলবদল হয়ে যায়। কিন্তু তিনি বাড়ি পৌঁছানোর পরে তার স্ত্রীর একটু খটকা লাগে। কারণ যেহেতু তারা কী-ভিত্তিক লক ব্যবহার করেন না এবং ব্যাগটিতে সেই ধরনের লকই ছিল, তাই সেটা দেখেই তারা নিশ্চিত হয়ে যান যে ব্যাগটি কারোর সাথে পাল্টাপাল্টি হয়ে গেছে। তাই তৎক্ষণাৎ তিনি কাস্টমার কেয়ারে ফোন করেন।

কিন্তু বারংবার কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে ওই ব্যক্তির কন্টাক্ট ডিটেইলস চাওয়া সত্ত্বেও প্রাইভেসি এবং ডেটা প্রোটেকশনের দোহাই দিয়ে কাস্টমার কেয়ার টিম নন্দনকে তা দিতে অস্বীকার করে। তবে একজন এজেন্ট তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তিনি আবার নন্দন কুমারকে কল করে ঠিক কী হয়েছে তা জানাবেন। কিন্তু বহুক্ষণ প্রতীক্ষা করার পরেও সেই কলটি আর আসেনি। তাই যখন রাত পেরিয়ে পরেরদিন সকাল হয়ে যায়, তখন কুমার সিদ্ধান্ত নেন যে কারোর সাহায্য ছাড়াই তিনি নিজের ব্যাগ নিজেই ফেরত আনবেন। তাই প্রথমে লাগেজে থাকা পিএনআর (PNR) নম্বর ব্যবহার করে তিনি ওয়েবসাইটে ওই যাত্রীকে ট্র্যাক করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বারংবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও ব্যর্থ হওয়ায় অবশেষে ওই সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের সিস্টেমটি হ্যাক করার সিদ্ধান্ত নেন। 

কীভাবে হ্যাকিং হল এয়ারলাইন্সের সিস্টেম?

কীভাবে এই হ্যাকিং করলেন নন্দন? সে সম্পর্কে বিশদে ব্যাখ্যা করে টুইটে ওই ব্যক্তি বলেছেন যে, প্রথমে তিনি তার কম্পিউটার কীবোর্ডে ‘F12’ বাটনটি প্রেস করে ইন্ডিগো ওয়েবসাইটে ডেভেলপার কনসোলটি ওপেন করেন। এরপর অত্যাধুনিক ডিজিটাল উপায়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজে অবশেষে নেটওয়ার্ক লগ রেকর্ডের মধ্যে থেকে তিনি সহযাত্রীটির ফোন নম্বর এবং ইমেল আইডি খুঁজে পান। ফলে সফলভাবে হ্যাকিং পর্ব সম্পন্ন হওয়ায় তার মনে এবার ব্যাগ ফেরত পাওয়ার আশার আলো জন্মায়। এরপর তিনি ওই সহযাত্রীকে ফোন করেন এবং জানতে পারেন যে তার বাড়ি থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরেই থাকেন ওই যাত্রী। ফলে খুব সহজেই যোগাযোগ করে নিজের ব্যাগ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন নন্দন কুমার। তিনি একথাও জানান যে, ওই ব্যক্তির থেকে তিনি জানতে পারেন যে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের তরফ থেকে কখনোই তার কাছে কোনো ফোন যায়নি। যদিও নন্দন কুমারকে এক কাস্টমার এজেন্ট বলেছিলেন যে, তারা ওই সহযাত্রীকে তিনবার ফোন করা সত্ত্বেও তিনি কোনো রিপ্লাই করেননি!

উল্লেখ্য এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিগোর এক মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, তারা এই ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করছে। এবং সংস্থা সকল যাত্রীদের জানাতে চায় যে, তাদের আইটি প্রসেসগুলি খুবই শক্তিশালী এবং কঠোর এবং কখনোই কাস্টমারের সুরক্ষা সম্পর্কিত বিষয়ে সংস্থার তরফে কোনোরকম আপোষ করা হবে না। তাছাড়া তাদের কাস্টমার কেয়ার টিম কোনো যাত্রীর কন্ট্যাক্ট ডিটেলস অন্য কোনো যাত্রীর সাথে শেয়ার না করে কেবলমাত্র প্রোটোকল অনুসরণ করেছিল। এটি তাদের ডেটা প্রাইভেসি পলিসির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। যদিও কাস্টমার কেয়ার টিম ব্যাগেজ আদানপ্রদানের বিষয়টির সমাধান করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কলের যথাযথ রেসপন্স না মেলায় সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়নি।