২০ হাজার টাকার উপরে লঞ্চ হওয়া Realme এর সমস্ত স্মার্টফোন হবে 5G

সময়টা ছিল ২০১৮ সালের মে মাস, ভারতে রিয়েলমি (Realme) লঞ্চ করেছিল তাদের প্রথম স্মার্টফোন Realme 1। লঞ্চের ৩০ দিনের মধ্যেই অ্যামাজন ইন্ডিয়ার এক্সক্লুসিভ সেলে ফোনটির ৪ লক্ষেরও বেশী ইউনিট বিক্রি হয়েছিল। জনপ্রিয়তার ভিত্তিপ্রস্তর হয়েছিল সেখানেই৷ আত্মপ্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই সংস্থাটি ভারতীয় বাজারে এক নম্বর এমার্জিং (Emerging) ব্রান্ডের খেতাব লাভ করে। তারপরে আর রিয়েলমিকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আজ শুধুমাত্র স্মার্টফোন নয়, ভারতে স্মার্টটিভি, অ্যাক্সেসরিজ সেগমেন্টেও রিয়েলমির অবাধ বিচরণ৷

৪জি কানেক্টিভিটির যুগ পেড়িয়ে আমরা ধীরে ধীরে ৫জি-র দুনিয়ায় প্রবেশ করছি। ভবিষ্যতে ৪জি-র থেকে উন্নত এই যোগাযোগ ব্যবস্থার অংশ হতে আমাদের ৫জি প্রযুক্তির স্মার্টফোন দরকার। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে রিয়েলমি ইন্ডিয়ার সিইও মাধব শেঠ বলেছেন, “রিয়েলমির লক্ষ্য, ইন্ডিয়া এবং ইউরোপ সহ অন্যান্য গ্লোবাল মার্কেটে ৫জি জনপ্রিয় করে তোলা।” তিনি আরও জানিয়েছেন, ২০২১ সালে রিয়েলমি ভারতে যেসব প্রোডাক্ট লঞ্চ করবে তার অর্ধেক হবে ৫জি সক্ষম এবং ২০,০০০ টাকার উপরে লঞ্চ করা সমস্ত স্মার্টফোনই ৫জি কানেক্টিভিটিযুক্ত হবে।

মাধব শেঠের বক্তব্য, “এই লক্ষ্যে আমরা গণতান্ত্রিক মূল্যে ৫জি সক্ষম স্মার্টফোন চালু করব, যাতে ব্যবহারকারীরা লেটেস্ট প্রসেসরের অভিজ্ঞতা পাওয়ার সাথে বর্ধিত পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট, ডিসপ্লে অপটিমাইজেশন, ক্যামেরা সাপোর্ট, গেমিং পারফরম্যান্স ইত্যাদি রপ্ত করতে পারে এবং আমরা এভাবেই ভোক্তাদের ভবিষ্যৎ ৫জি-র জন্য প্রস্তুত করবো”।

শেঠ বলেন, “যদিও ৫জি-এর প্রাথমিক প্রাথমিক সুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে উন্নত কানেক্টিভিটি ও স্পিড, তবে আমি বিশ্বাস করি, এটি শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে এবং প্রতিটি বাড়িকে স্মার্টহোমে পরিণত করার ক্ষমতা রাখে”।

এর পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, “অনলাইনে সবকিছু কাজ করার সাথে সাথে- শিক্ষা, অর্থ প্রদান- সবক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ওপর গ্রাহকদের নির্ভরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আজকাল গ্রাহকরা সংযুক্ত ও প্রযুক্তি-ক্ষমতাপ্রাপ্ত জীবনধারা গ্রহণের দিকে বেশি ঝুঁকছেন এবং ৫জি তাদের জন্য এই জীবনযাত্রা গঠনে অগ্রণী ভূমিকা নিতে বাধ্য”।

রিয়েলমি ৫জি স্মার্টফোনের ওপর যে এতটা গুরুত্ব নিরুপন করছে, তা দেখে খুব একটা অবাক হওয়ার প্রয়োজন নেই। অবগতির জন্য বলে রাখি, ২০২০-র ফেব্রুয়ারিতে সংস্থাটি ভারতের প্রথম ফাইভ-জি স্মার্টফোন হিসেবে Realme X50 Pro লঞ্চ করেছিল। যদিও সেইসময় ভারতে ৫জি পরিষেবা দিবাস্বপ্ন ছিল। কিন্তু বিগত কয়েকমাসে সেই পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন ঘটেছে। ভারতে ৫জি চালু করার দৌড়ে কে বাজিমাত করে তার জন্য এখন রিলায়েন্স জিও ও এয়ারটেলের মধ্যে জোরদার লড়াই চলছে।

সম্প্রতি আবার এয়ারটেল ভারতের প্রথম টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে হায়দ্রাবাদ শহরে সাফল্যের সাথে ফাইভ-জি সার্ভিসের সফল প্রদর্শন করে দেখিয়েছে। কোম্পানির নিজস্ব এগজ়িস্টিং লিবারলাইজড স্পেক্ট্রামকে এনএসএ (নন-স্ট্যান্ডোলোন) প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে এয়ারটেল ৫জি নেটওয়ার্কের পরীক্ষা করেছে। ডায়নামিক স্পেক্ট্রাম শেয়ারিং ব্যবহার করে এয়ারটেলের দাবি, তারা একই স্পেক্ট্রাম ব্লক থেকে ৫জি ও ৪জি সংযোগ পরিচালনা করেছে। এয়ারটেলের তরফে জানানো হয়েছে, কোম্পানি এগজ়িস্টিং ৪জি স্পেক্ট্রাম ব্যান্ডের সাহায্য নিয়ে মিড-ব্যান্ড ছাড়াই বাণিজ্যিকভাবে ৫জি পরিষেবা চালু করতে পারে। তবে বিশেষত মিড-ব্যান্ডে সরকার ৫জি স্পেক্ট্রাম মঞ্জুর করা পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবে।

ভারতসহ অন্যান্য দেশের বাজারে রিয়েলমির ৫জি হ্যান্ডসেট আসা একপ্রকাল অবশ্যাম্ভবী ছিল। যদি ২০২০ সাল বা তার আগের চিত্রটা তুলে ধরি তাহলে দেখা যাবে, শুধুমাত্র ফ্ল্যাগশিপ বা হাই-ইন্ড চিপসেটে ৫জি কানেক্টিভিটি ফিচারটি সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন মিডিয়াটেক এবং কোয়ালকমের মতো চিপনির্মাতা সংস্থা ৫জি মোডেম সহ মিড-রেঞ্জ চিপ বানানো শুরু করেছে।

সস্তা ও বাজেট ফোনের জন্য কোয়ালকম সম্প্রতি স্ন্যাপড্রাগন ৪৮০ প্রসেসরের ঘোষণা করেছে। আবার মিডিয়াটেকের রয়েছে ৫জি রেডি ডাইমেনসিটি ৮০০ ইউ এবং ডাইমেনসিটি ১০০০+ চিপসেট। ভারতে সদ্য লঞ্চ হওয়া Realme X7 5G এবং X7 Pro 5G ফোনদুটিও মিডিয়াটেকের ওই ৫জি চিপসেট সহ এসছে।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন