পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকায় আবিষ্কার করলেন নতুন উদ্ভিদ প্রজাতি

অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণা এবং উৎসাহের শেষ নেই। বিশাল বরফের চাদরে ঢাকা এই মহাদেশের গহীনে লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য এবং সেই রহস্যগুলি অনুসন্ধান করতে যুগ…

অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণা এবং উৎসাহের শেষ নেই। বিশাল বরফের চাদরে ঢাকা এই মহাদেশের গহীনে লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য এবং সেই রহস্যগুলি অনুসন্ধান করতে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের দরুন অ্যান্টার্কটিকায় প্রচুর পরিমাণে বরফ গলে যাচ্ছে, এবং সেখানে সবুজায়ন শুরু হয়েছে। এই হিমায়িত মহাদেশে আগে বেঁচে থাকতে পারেনি এমন অনেক নাতিশীতোষ্ণ প্রজাতির উদ্ভিদ এখন মহাদেশের উষ্ণায়নের কারণে সর্বত্র দেখা যায়। এবার এরকমই এক অজানা উদ্ভিদ প্রজাতি আবিষ্কারের জন্য ভারতের মুকুটে যুক্ত হল নতুন পালক। সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অফ পাঞ্জাব, ভাটিন্ডার (CUPB) জীববিজ্ঞানীদের একটি দল পূর্ব অ্যান্টার্কটিকা থেকে মসের একটি নতুন দেশীয় উদ্ভিদ প্রজাতি আবিষ্কার করেছে। দেবী সরস্বতী (‘ভারতী’ নামেও পরিচিত) এবং ভারতের অন্যতম অ্যান্টার্কটিক স্টেশন ‘Bharati’-র প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এটিকে ‘ব্রায়ুম ভারতীয়েন্সিস’ (‘Bryum Bharatiensis’) নাম দেওয়া হয়েছে।

ইন্ডিয়ান অ্যান্টার্কটিক মিশন ২০১৬-১৭-তে অভিযাত্রী বিজ্ঞানী (expedition scientist) হিসেবে অ্যান্টার্কটিকা সফরের সময় CUPB পোলার অ্যান্ড মেরিন বায়োলজিস্ট, এবং CUPB-র উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান ডঃ ফেলিক্স বাস্ট পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার লারসেমান হিলসে (Larsemann Hills) ভারতী স্টেশনের কাছে পাথরের উপর এই সবুজ উদ্ভিদটি খুঁজে পান এবং নমুনা সংগ্রহ করেন। এরপর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসার পর ডঃ ফেলিক্স, পিএইচডি স্টুডেন্ট ওয়াহিদ উল রহমান এবং সহযোগী ডঃ কৃতি গুপ্তার (DAV কলেজ, ভাটিন্ডার উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের HoD) সাথে ব্যাপক শ্রেণীবিন্যাস মূল্যায়ন এবং বিভিন্ন গবেষণা করেন। শুধু তাই নয়, নমুনা সংগ্রহের পর ভারতীয় বিজ্ঞানীরা পাঁচ বছর ধরে উদ্ভিদটির ডিএনএ এবং অন্যান্য উদ্ভিদের সাথে এটির পার্থক্য পর্যালোচনা করেন। এবং এর ফলে জানা যায় যে, এটি বিশ্বে প্রথমবারের মতো আবিষ্কৃত মসের একটি নতুন প্রজাতি।

Indiaeducationdiary-র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, নতুন প্রজাতি আবিষ্কারের পাশাপাশি, গবেষণায় দুটি নতুন শ্রেণীবিন্যাসের রেকর্ডও প্রকাশিত হয়েছে। Larsemann Hills-এর Bryoerythrophyllum Recurvirostra (ব্রায়োরিথ্রোফিলাম রেকুরভিরোস্ট্রা) এবং Schirmacher Oasis-এর Coscinodon Lawianus (কসিনোডন লইয়ানাস) নামক দুটি মসের কথা প্রথমবারের মতো রেকর্ড করা হয়েছে। এই আবিষ্কারের কথা বর্ণনাকারী গবেষণাপত্রটি শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক জার্নাল Journal of Asia-Pacific Biodiversity-তে গৃহীত হয়েছে।

স্বভাবতই এই আবিষ্কারের ফলে যারপরনাই খুশি ডাঃ ফেলিক্স বাস্ট। তিনি জানিয়েছেন যে, ৪০ বছরের ইন্ডিয়ান অ্যান্টার্কটিক মিশনের ফলে এটিই প্রথম এবং একমাত্র উদ্ভিদ প্রজাতি আবিষ্কার। এই মিশনের অংশ হিসেবে প্রথম স্টেশনটি ১৯৮৪ সালে স্থাপন করা হয়েছিল এবং ১৯৯০ সালে বরফের নীচে ডুবে যাওয়ার পরে এটি পরিত্যক্ত হয়। BBC-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮৯ ও ২০১২ সালে মৈত্রী ও ভারতী নামে দুটি স্টেশন চালু করা হয় এবং সারা বছর ধরে চালু থাকে। এর পাশাপাশি এও জানা গেছে যে, এ পর্যন্ত শুষ্কতম, শীতলতম ও বায়ুময় মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকায় ১০০ টিরও বেশি প্রজাতির মস আবিষ্কৃত হয়েছে।

তবে সবার মনেই প্রথমেই যে প্রশ্নটি আসে সেটি হল, এই ধরনের প্রতিকূল পরিবেশে মস কীভাবে টিকে থাকে? বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, এই মসটি মূলত সেইসব অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পায় যেখানে ব্যাপক মাত্রায় পেঙ্গুইনের প্রজনন হয়। মূলত এখানকার উদ্ভিদগুলি পেঙ্গুইন পুপের (মল) ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। পেঙ্গুইন পুপে নাইট্রোজেন আছে যা উদ্ভিদগুলির সারের কাজ করে এবং এখানকার জলবায়ুতে টিকে থাকতে সাহায্য করে। তবে শীতের ছয় মাস যখন সূর্যালোক থাকে না এবং তাপমাত্রা −৭৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নীচে নেমে যায়, তখন কীভাবে এই উদ্ভিদগুলি ঘন বরফের নীচে বেঁচে থাকে তা বিজ্ঞানীদের কাছেও এক অবাক বিস্ময়। তবে তারা মনে করেন যে, এই সময় মস একটি সুপ্ত পর্যায়ে থাকে, প্রায় একটি বীজের মতো শুকিয়ে যায় এবং সেপ্টেম্বরে গ্রীষ্মের সময় আবার অঙ্কুরিত হয়, যখন তারা আবার সূর্যের আলো পেতে শুরু করে, শুকনো মস তখন গলে যাওয়া বরফ থেকে জল শোষণ করে পুনরায় সজীব হয়ে ওঠে।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন