চীনের কোম্পানি হয়েও ভারত কে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় Realme, আরও বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি

ভারতকে একটি ‘ম্যানুফ্যাকচারিং হাব’-এ পরিণত করতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকারের নীতির সাহায্য নিচ্ছে। আর ফলস্বরূপ, স্মার্টফোন থেকে শুরু করে অডিও প্রোডাক্ট এবং স্মার্ট ওয়াচের মতো গ্যাজেটগুলির উৎপাদন ভারতে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও, অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের তুলনায় স্মার্টফোন তৈরির দিকে থেকে সর্বাধিক এগিয়ে আছে ভারত। এক্ষেত্রে, দেশীয় সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল ভারতে নির্মিত প্রোডাক্টগুলিকে শুধুমাত্র এদেশের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, সারা বিশ্ব জুড়ে রপ্তানি করার মাধ্যমে একটা স্বতন্ত্র পরিচিতি গড়ে তোলা। আর ভারত সরকারের এই উদ্দেশ্য যে সাফল্যমন্ডিত হয়েছে তার প্রমাণ আমরা ২০২১ সালেই হাতেনাতে পেয়ে গিয়েছি। কেননা গত বছর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ স্মার্টফোনের চালান ১৯০ মিলিয়ন ইউনিট অতিক্রম করার রেকর্ড গড়েছিল।

যাইহোক, স্মার্টফোনের পাশাপাশি অডিও ডিভাইস এবং ওয়্যারেবল পণ্যের স্থানীয় উৎপাদনের জন্যেও টেক ব্র্যান্ডগুলিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ২০২২-২৩ ইউনিয়ন বাজেটে, ‘ডোমেস্টিক ম্যানুফ্যাকচারিং’ -কে উন্নীত করার জন্য ওয়্যারেবল ডিভাইস এবং ইলেকট্রনিক স্মার্ট মিটার সহ যাবতীয় ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের জন্য শুল্ক হারের ক্রমাঙ্কন প্রস্তাব করা হয়েছিল। এই সকল উদ্যোগ দেখে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে ভারত সরকার ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ (Made in India) তথা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ (Make in India) ক্যাম্পেইন -কে কতটা গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে। পাশপাশি এই পরিকল্পনাকে সফল করে তোলার নেপথ্যে আছে বিবিধ দেশি-বিদেশী সংস্থা-বৃন্দ।

‘Make in India’ উদ্যোগকে আরও ত্বরান্বিত করতে ও বিস্তৃত পরিসরের পণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করতে বিনিয়োগ চলমান রাখবে Realme

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ হল ভারত সরকার দ্বারা পরিচালিত এমন একটি উদ্যোগ, যা দেশী-বিদেশী সংস্থাগুলিকে ভারতে পণ্য বিকাশ, উৎপাদন এবং অ্যাসেম্বল বা একত্রিত করতে উৎসাহিত করে। এই ধরনের উদ্যোগ টেক ব্র্যান্ডগুলিকে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা প্রসারিত করতে এবং দক্ষতা (Expertise) বাড়াতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি তাদের মুনাফার হারও ত্বরান্বিত করার সুযোগ দেয়। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের অধীনে একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, স্থানীয়ভাবে পণ্য ম্যানুফ্যাকচারিং করার মাধ্যমে সংস্থাগুলি ভারত ভিত্তিক গ্রাহক-বেসের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বিপরীতে, এই জাতীয় উদ্যোগের দৌলতে বর্তমান সময়ে স্থানীয় ব্যবসার উন্নতিসাধন এবং যুবকদের জন্য আরও চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। যা শুধুমাত্র ‘পার্সোনাল প্রফিট’ -এর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে দেশের সার্বিক অর্থনীতিকেও সমান ভাবে উন্নীত করার প্রতি অবদান রাখছে।

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের সফলতা, স্মার্টফোন এবং অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির পারফরম্যান্স তথা মুনাফার গ্রাফেই স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত। যার দরুন এখন একাধিক নামিদামি বিদেশি সংস্থা ভারতে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব নির্মাণে তৎপর। এক্ষেত্রে না বললেই নয়, ভারত সরকারের এই প্রকল্পের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে যুক্ত একটি অন্যতম বিনিয়োগকারী সংস্থা হল রিয়েলমি (Realme)। উক্ত সংস্থাটি ভারত সরকারের এই উদ্যোগকে যেমন সমর্থন করেছে এবং তেমনি ঘনিষ্ঠভাবে কাজও করছে। আর তাই বর্তমান সময়ে ভারতে বিক্রি হওয়া সমস্ত রিয়েলমি স্মার্টফোনই ১০০% এদেশে তৈরি এবং দেশবাসীর দ্বারা তৈরী। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে এই শেনঝেন ভিত্তিক সংস্থাটি ভারতে স্মার্টফোন উৎপাদনের জন্য একটি SMT লাইন (SMT প্রোডাক্শন) স্থাপনের জন্য ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল। আর সর্বাধিক উল্লেখ্য বিষয় হল, রিয়েলমি তাদের ডিভাইসের জন্য প্রয়োজনীয় ডিসপ্লে প্যানেল, স্ক্রিন ইত্যাদি কম্পোনেন্টের ৬০-৭০% লোকাল ম্যানুফ্যাকচারারদের কাছেই বিকাশ করছে। এছাড়াও ভারতে এই সংস্থার একটি R&D কেন্দ্র রয়েছে, যা ব্র্যান্ডটিকে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে (Tech Innovation) সাহায্য করে।

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প বিষয়ে রিয়েলমি ইন্ডিয়ার সিইও তথা ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং রিয়েলমি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট মাধব শেঠের বিবৃতি অনুযায়ী, “রিয়েলমি নিজের স্থানীয় উৎপাদন ক্ষমতা (Local Manufacturing Capabilities) বাড়ানোর প্রচেষ্টায় বরাবরই অধিক মনোযোগী। আর তাই আমরা সরকারের মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগকে সমর্থনও করেছি। আমরা বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টমেন্ট করে আসছি এবং পরবর্তী সময়েও এই একই পরিকল্পনাকে অনুসরণ করবো। আমরা স্থানীয় নির্মাতাদের সহযোগিতায় রিয়েলমি স্মার্টফোন তৈরি করতে শুরু করেছিলাম এবং ২০২২ সালে এসে ১০০% মেক ইন ইন্ডিয়া রিয়েলমি হ্যান্ডসেট তৈরি করছি।” তবে শুধুমাত্র স্মার্টফোন তৈরী করেই ক্ষান্ত থাকেনি সংস্থাটি, “রিয়েলমি স্মার্ট টিভি, রিয়েলমি ওয়াচ ২ প্রো এবং রিয়েলমি বাডস ওয়্যারলেস” -এর মতো প্রোডাক্টগুলিও এখন নির্মাণ করা হচ্ছে এদেশের মাটিতেই। আর এর জন্য “OEM (Original equipment manufacturer) অংশীদাররা আমাদের সমর্থন করায় তাদের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ আমরা” বলে জানিয়েছেন মাধব শেঠ।

বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তর প্রযুক্তি সংস্থা রিয়েলমি সীমিত সংখ্যক প্রোডাক্ট নির্মাণেই থামবে বলে মনে হচ্ছে না। কেননা, স্মার্টফোন, স্মার্টওয়াচ, স্মার্ট টিভির বাদেও স্থানীয়ভাবে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অফ থিংস’ বা AIoT পণ্য তৈরি করার মাধ্যমে সংস্থাটি তাদের প্রোফাইলকে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করেছে বলে জানা গেছে। রিয়েলমির মতানুযায়ী, মূলত ব্যবহারকারীদের আরো উন্নত অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আর এর জন্য সংস্থাটি ‘Realme Smart TV’ মডেলকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের জন্য ভগবতী ইলেকট্রনিক্স, ভিডিওটেক্স ইন্টারন্যাশনাল এবং স্কাইওয়ার্থের মতো বেশ কয়েকটি OEM-এর সাথে অংশীদারিত্ব করেছে। একই সাথে, ওয়্যারেবল ও অডিও গ্যাজেটগুলি নির্মাণের জন্য KHY ইলেক্ট্রনিক্সের সাথে হাত মিলিয়েছে। এক্ষেত্রে ২০২২ সালের শেষ নাগাদ ১০০% ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ পরিধানযোগ্য এবং অডিও পণ্য তৈরি করার টার্গেট নিয়েছে রিয়েলমি।

প্রসঙ্গক্রমে আপনাদের জানিয়ে রাখি, রিয়েলমি সম্প্রতি Realme Buds Air 3 নামক তাদের একটি লেটেস্ট ফ্ল্যাগশিপ TWS -এর উৎপাদন স্থানীয়করণের জন্য ২৬.৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ভারতে৷ পাশাপাশি ভবিষ্যতে এদেশে ট্যাবলেট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের লক্ষ্যে ব্র্যান্ডটি ইতিমধ্যেই কিছু OEM সংস্থার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেছে।

ভারতের অর্থনৈতিক স্তম্ভকে আরো শক্তিশালী করার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদনের প্রচার করা যে কতটা প্রয়োজন তা ইতিমধ্যেই আমরা বুঝতে পেরেছি। আর এই উদ্দেশ্যেকে বাস্তবায়িত করতে রিয়েলমি যথেষ্টই সাহায্য তথা বিনিয়োগ করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে বলে ভরসা দিয়েছে।