KYC জালিয়াতি নিয়ে ফের গ্রাহকদের সতর্ক করল SBI, কষ্টার্জিত অর্থ বাঁচাতে কী কী করণীয় জেনে নিন

যত দিন যাচ্ছে, গোটা দেশ তথা বিশ্বজুড়ে সাইবার জালিয়াতির ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর আগমনের পর থেকে এই জাতীয় কেলেঙ্কারির পরিমাণ চরম হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সময়ে নানাবিধ অনলাইন জালিয়াতির ঘটনা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এতটাই প্রভাব ফেলছে যে, তারা সেগুলি এড়ানো বা সাবধানে থাকার পন্থা খুঁজতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। যদিও সরকার, ব্যাংক, সংবাদমাধ্যম এবং অন্যান্য সংস্থা অনবরতই এই ধরনের কেলেঙ্কারী থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়ে চলেছে। সেক্ষেত্রে এখন দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া বা SBI (এসবিআই) সাধারণ মানুষকে KYC (কেওয়াইসি) জালিয়াতি নিয়ে সতর্ক করে একটি বিবৃতি জারি করেছে।

নেট ব্যাংকিং জালিয়াতির ক্রমবর্ধমান ঘটনা সম্পর্কে গ্রাহকদের সতর্ক করে এসবিআই সম্প্রতি তার টুইটার হ্যান্ডেলে একটি ইনফোগ্রাফিকসহ একটি টুইট শেয়ার করেছে, যা কেওয়াইসি জালিয়াতি সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে। সাইবার জালিয়াতির ফাঁদে ফেলে সাধারণ মানুষকে সর্বস্বান্ত করার লক্ষ্যে হ্যাকাররা এখন তাদেরকে কেওয়াইসি সংক্রান্ত জাল লিঙ্ক সেন্ড করছে, যেগুলিতে ভুলবশত ক্লিক করলে অচিরেই ইউজারদের অ্যাকাউন্ট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তাই এসবিআই তার গ্রাহকদের সতর্ক করে বলেছে যে, তারা যেন এসএমএসের মাধ্যমে প্রাপ্ত এই জাতীয় কোনো এম্বেডেড লিঙ্কে খবরদার ক্লিক না করেন।

এসবিআই-এর টুইট অনুযায়ী, “#YehWrongNumberHai লেখা এসএমএসগুলি কেওয়াইসি জালিয়াতির একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। এই ধরনের মেসেজ দ্বারা প্রভাবিত হলে আপনি কিন্তু নিজের অজান্তেই বড়ো রকমের সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়ে নিজের কষ্টার্জিত টাকা খোয়াতে পারেন। তাই এই ধরনের ভুয়ো মেসেজে থাকা কোনো এম্বেডেড লিঙ্কে ভুলেও ক্লিক করবেন না। যে-কোনো এসএমএস পাওয়ার পর এসবিআই-এর শর্ট কোড চেক করে নিন। সতর্ক থাকুন, নিরাপদে থাকুন।” টুইটের পাশাপাশি, ব্যাংকটি একটি ইনফোগ্রাফিক শেয়ার করেছে, যাতে ভুয়ো এসএমএস এবং এম্বেডেড লিঙ্কগুলিতে ক্লিক করা এড়াতে প্রয়োজনীয় টিপসের উপর আলোকপাত করা হয়েছে, যা গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য।

ইউজারদের বিভ্রান্ত করার জন্য বিভিন্ন রকমের জাল এসএমএস পাঠাচ্ছে হ্যাকাররা। উদাহরণস্বরূপ, এরকমই একটি ভুয়ো মেসেজের কথা নীচে উল্লেখ করা হল –
‘প্রিয় গ্রাহক, আপনার এসবিআই-এর ডকুমেন্টসের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনার অ্যাকাউন্টটি ব্লক হয়ে যাবে। তাই অনুগ্রহ করে আপনার কেওয়াইসি আপলোড করার জন্য https://ibit.ly/oMwK লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন।’ এই ধরনের ভুয়ো মেসেজগুলিতে সর্বদা একটি এম্বেডেড লিঙ্কের উল্লেখ থাকে, যাতে ক্লিক করার পরে হ্যাকাররা সম্পূর্ণভাবে ইউজারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অ্যাক্সেস পেয়ে যায়। আর এর ফলে তাদের অ্যাকাউন্টে সঞ্চিত কষ্টার্জিত টাকা যে নিমেষেই ফাঁকা হয়ে যায়, সেকথা নিশ্চয়ই আর আলাদা করে বলার কোনো প্রয়োজন নেই।

তাহলে এখন নিশ্চয়ই আপনার মনে প্রশ্ন আসছে যে, এই ধরনের জালিয়াতির মামলার শিকার হওয়া এড়াতে আপনার কী করা উচিত? সে সম্পর্কে গ্রাহকদের সতর্ক করে এসবিআই চারটি গুরুত্বপূর্ণ টিপস দিয়েছে, যেগুলি নীচে উল্লেখ করা হল:

  • স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া গ্রাহকদের সতর্ক করে বলেছে যে, ব্যাংক কখনোই কোনো এসএমএসে উল্লেখ থাকা লিঙ্কের মাধ্যমে গ্রাহকদেরকে তাদের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট ডিটেলস আপডেট করতে বলবে না। তাই কোনো এসএমএসে যদি এই ধরনের কোনো কাজ করার কথা বলা থাকে, তাহলে খবরদার তা করবেন না। অজানা সোর্স থেকে পাওয়া কোনো মেসেজে থাকা এম্বেডেড লিঙ্কে ক্লিক না করার নির্দেশ দিয়েছে এসবিআই।
  • কখনোই আপনার পিন বা ওটিপি কারোর সাথে শেয়ার করবেন না। হ্যাকাররা অনেক সময় অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার প্রলোভন দেখিয়ে ইউজারদের কাছ থেকে তাদের ওটিপি বা পিন চেয়ে নেয়। কিন্তু সবসময় মনে রাখবেন, অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার জন্য কিন্তু কখনোই ওটিপি কিংবা পিনের প্রয়োজন পড়ে না। তাই কেউ যদি আপনার কাছ থেকে ওটিপি বা পিন চায়, তাহলে অবশ্যই বুঝে নেবেন যে সেই ব্যক্তির কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে।
  • লোভনীয় ব্যাংক অফার থেকে সর্বদা সাবধানে থাকুন। জালিয়াতরা অনেক সময় প্রলুব্ধকর অফারের নাম করে গ্রাহকদের এসএমএস পাঠিয়ে তাতে থাকা ম্যালিশিয়াস লিঙ্কে ক্লিক করতে বলে এবং লোভের বশবর্তী হয়ে সেই লিঙ্কে ক্লিক করলেই সম্পূর্ণভাবে ইউজারের অ্যাকাউন্টের অ্যাক্সেস পেয়ে যায় হ্যাকাররা। এর ফলে অ্যাকাউন্টে টাকা আসার পরিবর্তে অচিরেই অ্যাকাউন্ট থেকে সব টাকা গায়েব হয়ে যায়। তাই লোভে পড়ে কখনোই এই ধরনের কোনো লিঙ্কে ক্লিক করবেন না।
  • পেমেন্ট করার জন্য সর্বদা অফিসিয়াল ব্যাংক ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা পোর্টাল ব্যবহার করুন। অর্থ প্রদানের জন্য কখনোই কোনো অজানা পোর্টাল কিংবা থার্ড-পার্টি অ্যাপ ব্যবহার করবেন না।