Sidhu Moosewala: জনপ্রিয় গায়ক সিধুর হত্যায় ব্যবহার হয়েছে VoIP কল, এই প্রযুক্তি আসলে কী

দিনকয়েক আগে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে খুন করা হয়েছে কংগ্রেস নেতা এবং জনপ্রিয় পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালাকে (Sidhu MooseWala)। এই নৃশংস হত্যার ঘটনায় বর্তমানে গোটা দেশ…

দিনকয়েক আগে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে খুন করা হয়েছে কংগ্রেস নেতা এবং জনপ্রিয় পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালাকে (Sidhu MooseWala)। এই নৃশংস হত্যার ঘটনায় বর্তমানে গোটা দেশ শোকস্তব্ধ। প্রখ্যাত এই গায়কের উপর এমন হামলায় বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েছে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের সরকার। এদিকে মুস ওয়ালার হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিদিনই নতুন নতুন তথ্য উঠে আসছে। জানা গিয়েছে যে, এই হত্যার ষড়যন্ত্রের পিছনে রয়েছে লরেন্স বিষ্ণোই (Lawrence Bishnoi) নামক এক কুখ্যাত গ্যাংস্টার।

উল্লেখ্য যে, কানাডার বাসিন্দা গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রার (Goldy Brar) সিধুর হত্যার দায় স্বীকার করার পরে ৭০০ সদস্যের বিষ্ণোই গ্যাং পুলিশের রাডারে এসেছে। বর্তমানে দিল্লির তিহার জেলে বন্দী রয়েছে গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই। কিন্তু সাত সমুদ্র তেরো নদীর পাড়ে থেকে কীভাবে এই জঘন্য ষড়যন্ত্র করা সম্ভবপর হল? সূত্র মারফত পাওয়া খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, এখানেও প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে লরেন্স বিষ্ণোই নাকি তিহার জেল থেকে গোল্ডি ব্রারের সাথে যোগাযোগ রাখছিলেন। তিনি ভিওআইপি কলে (VoIP Call) গোল্ডি ব্রারের সাথে কথা বলতেন। বলে রাখি যে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা ভয়েস কলকে ভিওআইপি কল বলা হয়ে থাকে। এটি ভারতের অনেক মানুষই ব্যবহার করে থাকেন। এখন নিশ্চয়ই আপনাদের মনে প্রশ্ন আসছে যে, এরকম একজন প্রখ্যাত গায়ককে জনসমক্ষে হত্যা করার জন্য এই পন্থাটিই বেছে নেওয়া হল কেন? এই কলে কী এমন টেকনোলজি ব্যবহৃত হয় যার সাহায্যে এত সহজে এমন একটি নৃশংস ঘটনা ঘটানো সম্ভবপর হল? তাহলে চলুন, ভিওআইপি কল কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কে গুটিকয়েক কথা জেনে নেওয়া যাক।

VoIP Call কী?

ভিওআইপি-এর পুরো কথা হল ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (Voice Over Internet Protocol)। ইন্টারনেট এবং মাল্টিমিডিয়া অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে ভয়েস, ডেটা, এবং ভিডিও আদান-প্রদান করার পদ্ধতিকে ভিওআইপি টেকনােলজি বলে। ভিওআইপি কলগুলি ইন্টারনেটের সাহায্যে করা হয়। এর জন্য সিম কার্ডের কোনো প্রয়োজন হয় না, তবে ফোনটি কিন্তু অবশ্যই একটি ওয়াই-ফাই (Wi-Fi) নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড থাকতে হবে। অর্থাৎ এককথায় বললে, কোনো সিম কার্ড ছাড়াই ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে টেলিফোন করার মাধ্যম বা পদ্ধতিই হল ভিওআইপি। স্কাইপ (Skype) বা হ্যাংআউটস (Hangouts)-এর মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করে ইউজাররা মূলত ভিওআইপি কল করে থাকেন।

VoIP Call কীভাবে কাজ করে?

আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি যে, প্রচলিত টেলিফোন পদ্ধতিতে পাবলিক স্যুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্ক বা পিএসটিএন (Public switiched Telephone Network বা PSTN) ব্যবস্থায় সার্কিট স্যুইচিং (Circuit switching) ব্যবহার করে ডেটা আদান-প্রদান করা হয়ে থাকে। এতে ফোন লাইন ব্যস্ত থাকলে লাইন ফ্রি না হওয়া পর্যন্ত অন্য ব্যবহারকারীকে অপেক্ষা করতে হয়। এই অসুবিধা দূর করার জন্য ভিওআইপি-তে সার্কিট স্যুইচিংয়ের পরিবর্তে প্যাকেট স্যুইচিং (Packet switching) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। আর সবচেয়ে বড়ো কথা হল, সিম কার্ডের প্রয়োজন না থাকায় রেগুলার কলের থেকে অনেক কম খরচে ভিওআইপি কল করা সম্ভব। তাই মূলত বিদেশে বসবাসকারী মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে ইউজাররা এই ধরনের কল করে থাকেন।

কেন এই পদ্ধতি বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়?

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি যে, এই ধরনের কল করার জন্য ইউজারদেরকে এমন কোনো অ্যান্ড্রয়েড (Android) বা আইওএস (iOS) অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করতে হবে, যার মারফত ভিওআইপি কল করা যায়। তবে এমন অনেক ওয়েবসাইটও রয়েছে যার মাধ্যমে কোনো অ্যাপ ডাউনলোড না করেই এই ধরনের কল করা যেতে পারে। এখন প্রশ্ন হল, সিধু হত্যাকাণ্ডের মতো এরকম ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র করার ক্ষেত্রে কেন গ্যাংস্টাররা এই পদ্ধতিটিই বেছে নিলেন? এর মূল কারণ হল, ভিওআইপি কলগুলি ট্রেস করা বেশ কঠিন। যেহেতু এই কলগুলি ইন্টারনেট মারফত করা হয়, তাই কলের প্রাপক একটি ভার্চুয়াল নম্বর দেখতে পান। আবার, অনেক সার্ভিস প্রোভাইডার ব্যবহারকারীদেরকে পার্সোনাল ভার্চুয়াল নম্বর প্রদান করে থাকে। তবে এর জন্য ইউজারদেরকে আলাদা করে চার্জ দিতে হয়।

এখন নিশ্চয়ই আপনারা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন যে, ভিওআইপি কলের ক্ষেত্রে উপলব্ধ এই বিপুল সুবিধার জন্যই অনেক বড়োসড়ো ষড়যন্ত্রই এই পদ্ধতিতে করা হয়ে থাকে। অতীতেও এই ধরনের প্রচুর ঘটনা ঘটেছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে বলেই আশঙ্কা করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি কর্তৃপক্ষের তরফে যথাযথ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আগামী দিনে আরও অনেক মানুষকেই যে এরকম জঘন্য ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হবে, সেকথা নিঃসন্দেহে বলাই বাহুল্য।