ভারতে দাম বাড়তে চলেছে Smart TV-র, উঠে আসল আসল কারণ

ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে প্রায় দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে রীতিমতো তোলপাড় গোটা বিশ্ব। দুটি দেশের ওপর তো এই যুদ্ধের যারপরনাই প্রভাব পড়ছেই, তদুপরি গোটা বিশ্বের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিকাঠামোও ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এই নেতিবাচক প্রভাবগুলি ইতিমধ্যেই অস্থির শেয়ার মার্কেট এবং ক্রমবর্ধমান অপরিশোধিত তেলের দামের মাধ্যমে খুব স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে পাওয়া খবর অনুযায়ী, চলতি যুদ্ধের বেশ ভালোরকম প্রভাব এবার পড়তে চলেছে ভারতের ওপর। আর এর ফলে আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে বিভিন্ন জিনিসের দাম, যার মধ্যে অন্যতম একটি হল টিভি। সাম্প্রতিক যুদ্ধের কারণে আগামী দিনগুলিতে টিভি নির্মাতারা ভারতে তাদের টিভি মডেলগুলির দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। যদিও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধই নয়, হালফিলে চীনের জোরদার লকডাউনও এর এক অন্যতম কারণ বলে জানা গিয়েছে।

একথা অনেকেরই জানা যে, রাশিয়া বিশ্বের এক অন্যতম প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশ। আর রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে গোটা বিশ্বে অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জ্বালানির এই অকস্মাৎ দাম বাড়ার ফলে কাঁচামাল সরবরাহ এবং প্রোডাক্টের শিপমেন্ট বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ফলে যথেষ্ট পরিমাণ মুনাফা না হওয়ায় অগত্যা এই বিপুল মূল্যবৃদ্ধির বোঝা অবশেষে গ্রাহকদের ঘাড়ে চাপাতেই বাধ্য হচ্ছে সংস্থাগুলি! আর সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্ত এরই এক চরম পরিণতি।

চলতি যুদ্ধের দরুন বিভিন্ন কাঁচামাল, পরিষেবা এবং পরিশেষে উৎপন্ন প্রোডাক্টগুলির দাম আগামী দিনে ৫-১০% বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন Blaupunkt, Thomson, Kodak এবং Westinghouse টিভির নয়ডা-ভিত্তিক প্রস্তুতকারক সুপার প্লাস্ট্রোনিকস (Super Plastronics বা SPPL)-এর সিইও অবনীত সিং মারওয়াহ (Avneet Singh Marwah)। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, চীনে লকডাউনের কারণে ভেসেল সার্ভিস হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিপমেন্ট ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। আর খুব স্বাভাবিকভাবেই শিপমেন্ট বিলম্বিত হওয়ায় আগামী দিনে টিভির দাম খানিকটা হলেও বাড়বে বলে তিনি গ্রাহকদের আগাম সতর্ক করে দিয়েছেন। আর এর ফলে টিভি বিক্রির হারও যে বেশ খানিকটা কমতে চলেছে, সেকথা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

সবথেকে বড়ো ব্যাপার হল, গ্রাহকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে টিভি নির্মাতা সংস্থাগুলির বেশিরভাগই এন্ট্রি-লেভেল এবং বাজেট রেঞ্জের মডেল ভারতের মার্কেটে লঞ্চ করে। আর এই ডিভাইসগুলির দাম অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যের হওয়ায় লাভের পরিমাণও খুবই কম থাকে। আর সাম্প্রতিক যুদ্ধের কারণে কাঁচামাল এবং জ্বালানির দাম হঠাৎ করে বেশ খানিকটা বেড়ে যাওয়ায় এখন লাভের পরিমাণটি যে একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, সেকথা বলাই বাহুল্য। ফলে দাম বাড়ানো ছাড়া টিভি নির্মাতা কোম্পানিগুলির কাছে আর কোনো পথ খোলা নেই বললেই চলে।

তবে এই প্রথম নয় যে ভারতে টিভির দাম বাড়তে চলেছে। এর আগে গত বছর করোনা ভাইরাস মহামারীর জন্য লকডাউনের কারণে শাওমি, স্যামসাং, এলজি, এবং রিয়েলমি সহ একাধিক নামজাদা সংস্থা তাদের টিভি সেটগুলির দাম প্রায় ১০ শতাংশ বাড়িয়েছিল। তারপর আবার এখন যুদ্ধ পরিস্থিতির আবির্ভাবের সুবাদে টিভির দাম যে আরও একবার নিশ্চিতভাবে বাড়তে চলেছে, তা স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে। ফলে গত দু-বছরে প্রাকৃতিক কিংবা রাজনৈতিক – সবদিক দিয়েই একাধিক বিপর্যয় এসে যাওয়ায় এখন মানুষের জীবন থেকে মূল্যবৃদ্ধির ভয়াল ছায়া আর যেন কিছুতেই কাটছে না! কবে যে সমস্ত বাধাবিপত্তি দূর হয়ে মানুষ আবার এক সুন্দর পৃথিবীকে দেখতে পাবে, তার উত্তর একমাত্র সময়ের কাছেই রয়েছে!