Smartphone Blast: ফোনে কথা বলতে বলতে বিস্ফোরণ, মারা গেলেন সদ্য স্ত্রী হারা দীনেশ বাবু, সামনে এল কারণ

কথা বলার সময় ফোন বিস্ফোরিত হয়ে প্রাণ হারালেন এক ব্যক্তি

রোজকার জীবনে স্মার্টফোন ঠিক যতটা অপরিহার্য, মাঝেমধ্যে এগুলির ব্লাস্ট (Smartphone Blast) হয়ে যাওয়ার খবর ঠিক ততটাই ত্রাস সৃষ্টি করে। আসলে সাধের স্মার্টফোন বিস্ফোরিত হয়ে নষ্ট হয়ে গেলে এমনিতে তো ক্ষতি হয়ই, পাশাপাশি সেটির মালিকেরও আহত হওয়ার, এমনকি প্রাণহানিরও আশঙ্কা থাকে। যদিও গ্রাহকরা বেশিরভাগ সময়ই এর জন্য নির্মাতা সংস্থাগুলিকেই দোষারোপ করেন, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ইউজারদের কিছু খারাপ অভ্যাসের জেরেও এমনটা ঘটে থাকে (যেমন – ফোন চার্জে দিয়ে ব্যবহার করা বা সারারাত ধরে ফোনে চার্জ দেওয়া)। দীর্ঘদিন ধরেই প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা ব্যবহারকারীদেরকে সতর্ক করে আসছেন যে, চার্জে থাকাকালীন ফোন ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয়, কিন্তু অনেকেই বিষয়টিকে মোটেই পাত্তা দেন না। আর এই অসতর্কতার কারণে হালফিলে নিজের প্রাণটাই খোয়ালেন বারনগর তহসিলের দয়ারাম বারোদ (Dayaram Barod) নামের ৬৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। আসুন ঘটনাটি ঠিক কী ঘটেছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

কথা বলার সময় ফোন বিস্ফোরিত হয়ে প্রাণ হারালেন এক ব্যক্তি

উক্ত মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটির প্রসঙ্গে মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রবীন্দ্র বয়াত (Ravindra Boyat) জানিয়েছেন যে, ঘটনার সময় বারোদ তার বন্ধু দীনেশের সাথে কথা বলছিলেন বলে জানা গেছে। ফোনে তারা জনৈক কোনো ব্যক্তির শেষকৃত্যে অংশ নেওয়ার কথা বলছিলেন। পুলিশকে দীনেশ বলেছেন যে, কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে ফোনটি কেটে যায়। কিন্তু এরপরে অপর প্রান্ত থেকে বহুক্ষণ ফোন না আসায় উদ্বিগ্ন হয়ে দীনেশ রুনিজা রোডে দয়ারামের বাড়িতে তার খোঁজখবর নিতে যান, যেখানে তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি একাই থাকতেন। কিন্তু গিয়ে এক ভয়াবহ দৃশ্যের মুখোমুখি হন দীনেশ; তিনি দেখেন যে, দয়ারাম মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন, এবং তার মাথা, মুখ ও বুকের একাধিক ক্ষতস্থান থেকে ব্যাপকভাবে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

এরপর এই শোচনীয় দুর্ঘটনাটির সরেজমিনে তদন্ত করতে গিয়ে ফরেনসিক টিম একটি বিস্ফোরিত মোবাইল ফোন খুঁজে পায়। এই প্রসঙ্গে বয়াত জানিয়েছেন যে, হ্যান্ডসেটের চার্জারটি একটি স্যুইচ বোর্ডের সাথে সংযুক্ত ছিল, যা পুরোপুরিভাবে পুড়ে গেছে। ফলে নিশ্চিতভাবে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, বারোদ ফোনটি চার্জে থাকাকালীন ব্যবহার করছিলেন, কারণ ফোনটিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বিষয়টিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অ্যানালিসিসের জন্য ফরেনসিক টিম ফোন এবং স্যুইচ বোর্ডের সমস্ত তারকে ল্যাবে নিয়ে গেছে, এবং বারোদের মৃত্যুর সঠিক কারণ খুঁজে বের করার জন্য হালফিলে তারা জোরকদমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

চার্জে থাকাকালীন ফোন ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয়

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই ইউজারদেরকে পরামর্শ দিয়ে আসছেন যে, চার্জে থাকাকালীন ফোন ব্যবহার করা কোনোমতেই উচিত নয়। এর অন্যতম কারণ হল, চার্জে বসানো থাকলে ফোন অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন করে, যার ফলে এটি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই গরম হয়ে যায়। তার ওপর আবার স্মার্টফোন চার্জে বসিয়ে যদি কেউ অনর্গল গেম খেলেন বা ফোনে কথা বলেন, তাহলে মোবাইল যে কী চরম পরিমাণে গরম হতে পারে, তা নিশ্চয়ই আপনারা আন্দাজ করতে পারছেন। এর জেরে স্মার্টফোন খুব তাড়াতাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ফোনটি বিস্ফোরিত হওয়ার বা সেটিতে আগুন লেগে যাওয়ার মতো নানা ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তদুপরি, ব্যবহারকারীর প্রাণহানির সম্ভাবনাও যে প্রবল, সেকথা নিশ্চয়ই এখন আর আলাদা করে বলে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাই চার্জিংয়ের সময় স্মার্টফোন ব্যবহার না করাই শ্রেয়।

এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্য আর-একটি কারণেও চার্জ দেওয়ার সময় ইউজারদের ফোনে কথা বলা অবশ্যই এড়িয়ে যাওয়া উচিত, এবং তা হল এলট্রোকুশন (eltrocution)। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, চার্জ দেওয়ার সময় ফোন ব্যবহার করলে ইউজাররা শর্ট সার্কিটজনিত একাধিক বৈদ্যুতিক বিপদের মুখোমুখিও হতে পারেন। উল্লেখ্য যে, আর্দ্র বা ভেজা জায়গায় দাঁড়িয়ে চার্জে থাকাকালীন ফোন ব্যবহার করার সময় ব্যবহারকারীদের বিদ্যুৎপৃষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হল, চার্জে বসিয়ে অনেকক্ষণ ধরে ফোন ব্যবহার করলে তারপর সেটি গরম হয়ে বিস্ফোরিত হতে পারে; কিন্তু ভেজা জায়গায় দাঁড়িয়ে ইলেকট্রিক স্যুইচ বোর্ডে কানেক্ট করা ফোন মারফত কল বা অন্য কোনো কাজ করলে আচমকাই যে-কোনো মুহূর্তে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে যেতে পারেন ইউজাররা। ফলে উক্ত বিষয়গুলি মাথায় রাখা ব্যবহারকারীদের জন্য একান্ত আবশ্যক।