নাবালিকার আত্মহত্যার চেষ্টা, Facebook-এর তৎপরতায় বাঁচল প্রাণ, কিন্তু কীভাবে?

সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশ একটি মেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছিল। কিন্তু Facebook তথা Meta কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানতে পেরে ততক্ষণাৎ পদক্ষেপ নিয়েছে এবং পুলিশকে জানিয়ে তার প্রাণ বাঁচিয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে অধিকাংশ মানুষ দিনের বেশিরভাগ সময়টা কাটালেও, এগুলি ব্যবহার ঠিক কতটা নিরাপদ তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠে। বিশেষ করে Facebook, WhatsApp-এর মত Meta মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলি তাদের ইউজারদের ট্র্যাক করে, এমন অভিযোগের কথা আগে অনেকবার শোনা গেছে; যদিও সেইসব ক্ষেত্রে নিজেদের স্বপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করেছে কোম্পানি। কিন্তু সম্প্রতি এমন একটি ঘটনার কথা সামনে এসেছে, যা দেখে ইউজারদের ওপর Facebook-এর নজরদারির প্রসঙ্গটি আবার আলোচিত হচ্ছে। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে যে, হালফিলে মধ্যপ্রদেশের সিংরাউলি জেলার এক নাবালিকা Instagram-এ একটি ভিডিও পোস্ট করেছিল, যাতে তাকে আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। এদিকে এই ভিডিওর প্রেক্ষিতে (বলতে গেলে প্রায় সাথে সাথেই) Meta-র টিম বিষয়টি ভোপাল সাইবার পুলিশকে জানায়। আর ভোপাল পুলিশ, সিংরাউলি থানার সঙ্গে যোগাযোগ করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। গোটা ঘটনাটিতে Meta যে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই! কিন্তু এরপর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে, Facebook বা Instagram কীভাবে কারও আত্মহত্যার খবর জানতে পারে? 

এই প্রসঙ্গে অনেকেই মনে করছেন যে প্ল্যাটফর্মগুলির পরিচালন ক্ষমতা হাতে নিয়ে বসে থাকা লোকজন হয়তো ম্যানুয়ালি সবার পোস্ট দেখছে, নতুবা হয়তো তারা কোনো বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। কারণ, অতীতেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে পুলিশ ফেসবুক বা মেটার কাছ থেকে কল পেয়েছে। সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাটিতে যে মেয়েটি আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছিল, সে প্রথমে ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও আপলোড করেছিল যেখানে তাকে গলার ফাঁস তৈরি করতে এবং আত্মহত্যার অন্যান্য প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে যে, এই ঘটনা সম্পর্কে কীভাবে ইনস্টাগ্রাম কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দিয়েছে? এক্ষেত্রে আপনাদের বলি, ততটাও ঘাবড়ানোর কিছু নেই, কারণ এখানে দুটি সম্ভাবনা কাজ করতে পারে। 

এই দুই পন্থা ব্যবহার করে নাবালিকা প্রাণ বাঁচিয়েছে Meta

মেটার এই পদক্ষেপ যে তার নজরদারির স্বপক্ষে ইঙ্গিত দেয়, এমনটা কিন্তু জোর দিয়ে বলা যায়। হতে পারে কেউ নিশ্চয় মেয়েটির ভিডিও দেখে সেটি নিয়ে রিপোর্ট করেছে। আর সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে কোনো কন্টেন্ট সম্পর্কে রিপোর্ট করার সাথে সাথে মেটার কমিউনিটি অপারেশন টিম সেটিকে রিভিউ করে। প্রয়োজন পড়লে টিম, স্থানীয় কোনো কর্তৃপক্ষ, হেল্পলাইন বা এনজিওর সাথে যোগাযোগ করে তাদের বিষয়টি সম্পর্কে জানায়। মানে ভোপালের ঘটনাটিতেও হয়তো এমনটাই ঘটেছে বলে ধরে নেওয়া যায়।

এছাড়াও দ্বিতীয় যে উপায়টি মেটার কাজে আসতে পারে তা হল এআই (AI) টুল। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে ফেসবুক (এখন মেটা) জানিয়েছিল যে, তারা আগে শুধুমাত্র ইউজারদের রিপোর্টিংয়ের উপর নির্ভর করত, কিন্তু আত্মহত্যার উপসর্গ ইত্যাদি জাতীয় বিষয়গুলির ক্ষেত্রে রিপোর্ট সিস্টেম ততটাও ফলপ্রসূ হতোনা। তাই এই ধরনের ঘটনার সাথে মোকাবিলা করার জন্য সংস্থাটি মেশিন লার্নিংয়ের ব্যবহার শুরু করে। এক্ষেত্রে মেটার এআই মডেল ইউজারদের পোস্টের কোনো কীওয়ার্ড বা বাক্যাংশ চিহ্নিত করে। আর কোনো ইউজার যদি নিজের পোস্টে হত্যা (kill), বিদায় (bye/goodbye), দুঃখ (sadness), হতাশাগ্রস্ত (depressed) বা মারা যাওয়ার (die) মতো শব্দ ব্যবহার করে, তাহলে এই টুলটি সেই পোস্টগুলি শনাক্ত করে এবং কমিউনিটি অপারেশন টিমকে বিষয়টি জানায়। টিম, বিষয়টি দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়। উল্লেখ্য, এই সুবিধা যে শুধুমাত্র ইংরেজিতে উপলব্ধ তা নয়। বরঞ্চ এই মেশিনটি সমস্ত স্থানীয় ভাষাও বোঝে।

এই বিষয়টি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে ফেসবুক। তাই এমন কোনো অপ্রত্যাশিত ব্যাপার সামনে এলেই সংস্থাটি পুলিশকে সেই তথ্য দেয় এবং লোকেশন শেয়ার করে। সুতরাং এমন ঘটনা দেখে আপনার ডেটা ট্র্যাক হচ্ছে, সবসময় এই ভাবনা-চিন্তার প্রয়োজন নেই।