সাবধান! গুগল প্লে স্টোরের এই ২৩টি অ্যাপ আপনাকে সর্বস্বান্ত করতে পারে

কোনো অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করার জন্য Android ইউজাররা কোনো থার্ড পার্টি অ্যাপ স্টোরের থেকে গুগলের প্লে স্টোরকেই সবচেয়ে বেশী সুরক্ষিত বলে মনে করেন। তবে অনেকসময় প্লে…

কোনো অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করার জন্য Android ইউজাররা কোনো থার্ড পার্টি অ্যাপ স্টোরের থেকে গুগলের প্লে স্টোরকেই সবচেয়ে বেশী সুরক্ষিত বলে মনে করেন। তবে অনেকসময় প্লে স্টোরে স্পাইওয়্যার, অ্যাডওয়্যার এমনকি ম্যালওয়্যার যুক্ত অ্যাপ থাকার কথা আমরা শুনেছি। এই অ্যাপগুলি কিভাবে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে এবং ফোনের নিয়ন্ত্ৰণ নিতে সক্ষম সেই বিষয়ে আমাদের সবারই মোটামুটি কমবেশী ধারনা আছে। তবে যদি এবার আপনাদের ‘Fleeceware’ অ্যাপ্লিকেশনের কথা বলি সেক্ষেত্রে আপনারা একটু মাথা চুলকে প্রশ্ন করতেই পারেন, ‘এটা আবার কি রকম জিনিস?’ তাহলে শুনুন, আইটি সিকিরিউটি ফার্ম, Sophos গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই শব্দটির প্রথম ব্যবহার করেছিল। আপাতদৃষ্টিতে এমন কিছু অ্যাপ আছে যাদের প্রোগ্রামিং কোডে সন্দেহজনক কিছু থাকে না। কিন্তু ব্যবহারকারীদের বোকা বানিয়ে আর্থিক জালিয়াতিতে এদের জুরি মেলা ভার।

এবার প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কোন অ্যাপ্লিকেশানগুলোকে ফ্লসওয়্যার বলবো ? সোফোস মোবাইলের ম্যালওয়্যার অ্যানালিসিস্ট, জগদীশ চন্দ্রাইয়া ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘ফ্লসওয়্যার অ্যাপ্লিকেশান একটি ব্যাবসায়িক মডেল অনুসরন করে, যেখানে গ্রাহকদের বোকা বানিয়ে এরা অনৈতিকভাবে অত্যাধিক টাকা চার্জ হিসাবে নেয়।’ প্লে স্টোরের কোনো সাধারন অ্যাপের ক্ষেত্রে যেটা হয়—অ্যাপটি সাবস্ক্রিপশন নিতে আগ্রহী এমন ইউজারকে একটি ট্রায়াল পিরিয়ড অফার করে। ডেবিট কার্ড/ক্রেডিট কার্ডের তথ্য দিয়ে সাইন আপ করার পর ট্রায়াল শুরু হয়। এই ট্রায়াল পিরিয়ড শেষ হওয়ার পর তারা ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে সাবস্ক্রিপশন চার্জ বাবদ একটি নির্দিষ্ট টাকা কেটে নেয়, এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাতে অ্যাপটি টাকা না কাটতে পারে সেজন্য ইউজারকে ম্যানুয়ালি ট্রায়াল পিরিয়ড ক্যানসেল করতে হয়।

যদি ইউজার অনুরূপভাবে সেটি ক্যানসেল না করেন সেক্ষেত্রে ট্রায়াল পিরিয়ড শেষ হওয়ার পর গ্রাহককে সাবস্ক্রিপশন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আগ্রহী বলে বিবেচিত করা হয় এবং সাবস্ক্রিপশন চার্জ কেটে নেওয়া হয়৷ তবে ট্রায়াল পিরিয়ড শেষ হওয়ার আগেই যদি ইউজার অ্যাপটি আনইনস্টল করে দেন, সেক্ষেত্রে ট্রায়াল পিরিয়ড সমাপ্ত বলে গণ্য করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের কাছ থেকে কোনো চার্জ নেওয়া হবে না। প্লে স্টোরে থাকা অজস্র অ্যাপ এভাবেই তাদের কাস্টমার বেস বাড়িয়ে থাকে।

কিন্তু Fleeceware অ্যাপ্লিকেশানের ক্ষেত্রে, ফ্রী ট্রায়াল পিরিয়ডে ইউজার যদি অ্যাপটি আনইনস্টলও করে দেন, তবুও এটি অনৈতিকভাবে গ্রাহকের সম্মতি ছাড়াই সাবস্ক্রিপশন চার্জ এবং অনেক সময় তার থেকেও বেশী টাকা চার্জ করে থাকে। অর্থাৎ, অ্যাপটি যদি আপনি আর ব্যবহার করতে ইচ্ছুক নাও হন তবুও আনইনস্টল করাকে সাবস্ক্রিপশন বাতিল হিসাবে বিবেচিত হবে না। অনেক ইউজার এমনও অভিযোগ করেছেন, তারা নাকি অ্যাপে সাবস্ক্রিপশন ক্যানসেল করার অপশানই খুঁজে পেতে অসমর্থ হয়েছেন। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ফ্লসওয়্যার অ্যাপ্লিকেশানে ডিভাইস থেকে ব্যক্তিগত তথ্যও হাতায় না আবার ফোনে অ্যাড ফ্রডও চালায় না। ফলে সন্দেহজনক না হয়েই এটি খুব দক্ষতার সাথে এভাবে ইউজারদের বোকা বানিয়ে কার্যসিদ্ধি করে।

প্রসঙ্গত কিছুদিন আগে সোফোস, প্লে স্টোরে ২৫টি অ্যাপকে ফ্লসওয়্যার হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। সোফোসের গবেষকরা আবার অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের চিন্তা বাড়িয়ে একটি ব্লগে পোস্টে লিখেছেন, প্লে স্টোরে তারা আরো এরকম ২৩ টি অ্যাপের সন্ধান পেয়েছেন, যেগুলি গ্রাহকদের অত্যাধিক সাবস্ক্রিপশন ফি দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করছে এবং তারই সাথে প্লে স্টোরের সিকিরিউটি পলিসিও ভঙ্গ করেছে। পূর্বে বিষয়টি প্রথম সামনে আসার পর গুগল গত জুনে তাদের ডেভলপার পলিসিগুলি নতুন নির্দেশিকা সহ আপডেট করেছিল। সোফোস জানিয়েছে, নতুন নির্দেশনাবলী কার্যকর হওয়ার পরও ফ্লসওয়্যার অ্যাপের ডেভলপাররা তাদের এই জালিয়াতি চালিয়ে যাচ্ছেন।

সোফোস এটাও হাইলাইট করেছে, Fleeceware ক্রিয়েটাররা একটি ‘ব্ল্যাইন্ড সাবস্ক্রিপশন’ মডেল ব্যবহার করছে। যেটি ব্যবহারকারীকে সম্পূর্ণ বিলিং ডিটেলস দেখায় না। এই ব্লাইন্ড সাবস্ক্রিপশনের সাথে কয়েকটি অ্যাপ্লিকেশনে আবার ‘স্প্যাম সাবস্ক্রিপশন’ মডেল পাওয়া গেছে, যেটি চন্দ্রাইয়া বলেছেন, এটি ‘rabit hole’ হিসেবে কাজ করে। যেখানে একবার ব্যবহারকারী সাইন আপ করলে দেখতে পান সংশ্লিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনের সাথে একগুচ্ছ অন্য অ্যাপ্লিকেশনও তিনি সাবস্ক্রাইব করে ফেলেছেন। যেহেতু এই ফ্লসওয়্যার অ্যাপগুলি একে অপরের সাথে সংযুক্ত, তাই ইউজার নিজের অজান্তেই এগুলির পেছনে প্রচুর টাকা খরচ করে ফেলেন। গুগলের মতে, এই ধরনের অ্যাপগুলি অফারের মাধ্যমে গ্রাহককে বিনামূল্যে ট্রায়াল নেওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে। কিন্তু ব্যবহারকারীরা বুঝতে পারেন না, ট্রায়ালের শেষে তাদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ করা হবে।

সোফোস প্লে স্টোরে পাওয়া ফ্লসওয়্যার অ্যাপগুলির একটি সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করেছে। এগুলির মধ্যে তো কয়েকটি অ্যাপ ২০০ ডলারের বেশী গ্রাহকদের কাছে চার্জ করেছে। এখানে অ্যাপ্লিকেশনগুলির সম্পূর্ণ তালিকা দেখতে পারেন।

ফটো – Sophos