করোনা মোকাবিলায় এই গ্যাজেটগুলি ব্যবহার করছে সারা বিশ্ব, আপনি কোনটিকে উপযুক্ত মনে করেন

সম্প্রতি ব্রডকাস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্ট ইন্ডিয়া নামক একটি কোম্পানি ভারত সরকারকে একটি রিপোর্টের মাধ্যমে জানিয়েছে যে, তারা হাসপাতাল এবং রাজ্য সরকারের জন্য আর কিছুদিনের মধ্যেই কিছু রিস্টব্যান্ডের ডিজাইন পেশ করতে চলেছে। এই রিস্টব্যান্ডগুলির মাধ্যমে ডাক্তাররা করোনা আক্রান্ত রোগীদের উপর সময়ে সময়ে নজর রাখতে পারবেন। পাশাপাশি তারা কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের লোকেশন অবধি ট্র্যাক করতে পারবেন। কোম্পানির চেয়ারম্যান জর্জ কুরুভিলা জানিয়েছেন যে, আগামী মে মাসে এই রিস্টব্যান্ডগুলিকে রোল আউট করা শুরু হবে। তার আগেই আসুন জেনে নিই বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলি করোনা সংক্রামিত ব্যক্তিদের ট্র্যাক করার জন্য কোন কোন গ্যাজেটের সাহায্য নিচ্ছে।

• কানাডা- এই দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে একটি স্মার্ট কাপড় যার নাম Skiin। এই স্মার্ট কাপড়টি কানাডার কোম্পানি মায়েন্ট তৈরি করেছে এবং এই কাপড়ে বেশ কয়েকটি সেন্সর রয়েছে যেগুলি ঘুমের গতিবিধি, তাপমাত্রা, ইসিজি লেভেলের মত বিভিন্ন জিনিস পরিমাপ করতে সক্ষম। এই কাপড়ে থাকা সেন্সরের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ঘরে বসে ডাক্তারের সাহায্যে টেস্ট করতে পারবেন, হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।

• আয়ারল্যান্ড- আয়ারল্যান্ড ব্যবহার করছে একটি স্মার্ট স্টিকারের মত জিনিস যার নাম RespiraSense, যা মানুষের শ্বাস প্রশ্বাসের উপর নজর রাখবে। আয়ারল্যান্ডের কোম্পানি পি এম ডি সলিউশন এই জিনিসটিকে তৈরি করেছে এবং এটি আপনার শরীরে আটকে থাকবে। বর্তমানে এই স্টিকারটির সাহায্যে আয়ারল্যান্ডের বেশকিছু হাসপাতলে সংক্রামিত ব্যক্তিদের শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর নজর রাখা হচ্ছে। এই ডিভাইসটি পর্যবেক্ষণ করে যে আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের হার কিরকম এবং সেই তথ্য ব্লুটুথের মাধ্যমে স্মার্টফোনে পাঠিয়ে দেওয়া হয় যা ডাক্তারের কাছেও পৌঁছে যায়।

• ইংল্যান্ড- ইংল্যান্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে VitalPatch যা আক্রান্ত ব্যক্তিদের বুকে বসিয়ে দেওয়া হয়। ইংল্যান্ডের কোম্পানি মেডিবায়োসেন্সের তৈরি এই ডিভাইসটি বায়ো সেন্সরের মাধ্যমে চলে এবং এটি কার্ডিয়াক সার্জারির রোগীদের ওপর নজর রাখার জন্য ব্যবহার করা হত। তবে বর্তমানে এই ডিভাইসটি ইংল্যান্ডের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনাভাইরাসের রোগীদের উপর নজর রাখার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হচ্ছে। ভাইটাল প্যাচের সেনসরগুলি রোগীদের হৃদয় গতি, ইসিজি, তাপমাত্রা, শ্বাস প্রশ্বাসের গতি এবং ব্লাড অক্সিজেন লেভেল পরিমাপ করতে সক্ষম।

• আমেরিকা- আমেরিকার একটি স্টার্টআপ কোম্পানি লাইফ থেরাপিউটিকস, মানুষের মেন্টাল হেলথ পর্যবেক্ষণ করার জন্য তৈরি করেছে একটি নতুন ডিভাইস যার নাম Lief Rx। মনে করা হচ্ছে করোনা ভাইরাসের কারণে জনগণের মধ্যে মানসিক রোগ জাতীয় সমস্যাও বৃদ্ধি পেতে চলেছে। তাই এই সময়ে এই ডিভাইসটি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করবে। ডিভাইসটিকে বুকের উপর বসিয়ে দেওয়া হয় এবং এই ডিভাইসটি ইসিজি সেনসরের মাধ্যমে হৃদয় গতি পর্যবেক্ষণ করে।

• ফিনল্যান্ড- ফিনল্যান্ড করোনা ভাইরাসের লক্ষণগুলিকে পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহার করছে অরা স্মার্ট রিং। এই স্মার্ট আংটিটি আপনার ঘুম পর্যবেক্ষণ করে করোনা ভাইরাসের লক্ষণগুলিকে চিহ্নিত করতে পারে। এটি আপনার শরীরের তাপমাত্রা এবং হৃদয় গতি মনিটর করতে পারে। এই ডিভাইসটির সবথেকে বড় সুবিধা হল এটি আকারে খুবই ছোট, এবং এটিকে একটি গহনার মত পরেও থাকা যায়।

• দুবাই- দুবাইতে সম্প্রতি পুলিশদের একটি বিশেষ হেলমেট প্রদান করা হয়েছে যা মানুষের শরীরের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে পারে। চীনের একটি কোম্পানি কেসি ওয়্যারেবল এই ডিভাইসটি তৈরি করেছে, যা ১৬ ফুট অবধি দূরে থাকা ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এছাড়াও কোম্পানির তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে এই ডিভাইসটি, ১ মিনিটে ২০০ জনের শরীরে তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করে বলতে পারে যে তাদের জ্বর হয়েছে কিনা। তবে শুধুমাত্র দুবাই পুলিশ নয়, শপিং সেন্টার, অফিসের মত জায়গাতে কর্মরত সুরক্ষা কর্মীরাও এই হেলমেট ব্যবহার করছেন।

• ভারত- চেন্নাইয়ের একটি স্টার্টআপ হেলিকোসাইন অক্সি-২ নামক একটি ডিভাইস তৈরি করেছে যা রিয়েল টাইম শরীরের তাপমাত্রা, হৃদয় গতি এবং অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপতে পারবে। এছাড়াও এই স্মার্ট ডিভাইসটি ডাক্তার এবং অ্যাটেনডেন্টদের এই তথ্যগুলি জানিয়ে দেবে। এছাড়াও কোম্পানিটি ৯৮.৬ ফিভার ওয়াচও তৈরি করেছে, যেটি লাগাতার ব্যবহারকারীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপতে সক্ষম, এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারদের রিপোর্ট দিতে সক্ষম। পাশাপাশি এই ডিভাইসটির দাম মাত্র ২,৫০০ টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *