১২৪৯৯ টাকায় iPhone অর্ডার করেছিলেন মহিলা, ডেলিভারি না দিতে পারায় ৪২০০০ টাকা জরিমানা Flipkart কে

রোজকার ব্যস্ত জীবনযাপনে দশটা দোকান ঘুরে শপিং করা এখন অধিকাংশ মানুষের কাছেই কার্যত অসম্ভব। সেজন্য ইদানীংকালে কমবেশি সকলেই অনলাইন শপিং নির্ভর হয়ে গিয়েছেন। যেহেতু ঘরে বসে কয়েকটা ক্লিকেই হাতের মুঠোয় চলে আসে দরকারী সকল জিনিসপত্র, তাই আট থেকে আশি সকলেই এখন অনলাইনে কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন। তবে অন্যান্য সকল পরিষেবার মতো এরও সুবিধা-অসুবিধা দুটোই আছে। অনেক ক্ষেত্রেই ক্রেতাদের কাছে ভুল প্রোডাক্ট ডেলিভারি করা হয়। আবার, অনেকেই অগ্রিম টাকা দিয়ে পছন্দের জিনিস অর্ডার করা সত্ত্বেও সময়মতো সেটি হাতে পান না। অতীতেও এই ধরনের একাধিক ঘটনা বহুবার ঘটেছে, আর আজকের এই প্রতিবেদনেও এমনই একটি ঘটনার কথা আমরা আপনাদেরকে জানাতে চলেছি।

অনলাইনে ১২,৪৯৯ টাকার ফোন কিনলেও অর্ডার হাতে পাননি মহিলা, তাই মোটা টাকা জরিমানার মুখে Flipkart

উল্লেখ্য, এখন Amazon, Flipkart-এর মতো জনপ্রিয় ই-কমার্স শপিং প্ল্যাটফর্মগুলি থেকে বহু মানুষই স্মার্টফোন ও অন্যান্য হরেক রকমের জিনিস কিনে থাকেন, এবং অর্ডার করার কয়েকদিনের মধ্যেই ক্রেতাদের বাড়িতে হাজির হয় তাদের পছন্দের প্রোডাক্ট। ঠিক এভাবেই ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি Flipkart থেকে ১২,৪৯৯ টাকা মূল্যের একটি ফোন অর্ডার করেছিলেন বেঙ্গালুরুর রাজাজিনগরের বাসিন্দা দিব্যাশ্রী জে। তবে পুরো টাকা পেমেন্ট করলেও ফোনটি কিন্তু কোনোদিনই তার হাতে এসে পৌঁছোয়নি। এরপর বারংবার গ্রাহক পরিষেবার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে তিনি কনজিউমার কোর্টে সংস্থাটির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে মামলা করেন, এবং এর জেরেই হালফিলে Flipkart-কে মোটা টাকা জরিমানা করেছে বেঙ্গালুরু আরবান ডিসট্রিক্ট কনজিউমার ডিসপিউটস রিড্রেসাল কমিশন।

Flipkart-কে জরিমানা দিতে হবে ৪২,০০০ টাকা

আইএএনএস (IANS)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, সম্পূর্ণ টাকা পেমেন্ট করার পরেও ফোন ডেলিভারি দিতে না পারার কারণেই ফ্লিপকার্টকে এই জরিমানার মুখে পড়তে হয়েছে। সাম্প্রতিক রায়ে ই-কমার্স ওয়েবসাইটটিকে ২০,০০০ টাকা জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। সেইসাথে বার্ষিক ১২% সুদ সহ ফোনের দাম ১২,৪৯৯ টাকা এবং আইনি খরচ বাবদ ১০,০০০ টাকাও ফ্লিপকার্টকে দিতে হবে। কমিশনের চেয়ারপার্সন এম শোভা (M. Shobha) এবং সদস্য রেণুকাদেবী দেশপান্ডে (Renukadevi Deshapande) সম্প্রতি এই রায় দিয়েছেন। ফলে সুদ-জরিমানা সহ সবমিলিয়ে প্রায় ৪২,০০০ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ফ্লিপকার্টকে।

Flipkart-এর চূড়ান্ত অবহেলার জেরে আর্থিক ক্ষতি এবং মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়েছেন ক্রেতা

বেঙ্গালুরু কনজিউমার কোর্টের রায় অনুযায়ী, ফ্লিপকার্ট যে শুধুমাত্র পরিষেবার ক্ষেত্রেই ‘সম্পূর্ণ অবহেলা’ দেখিয়েছে তাই নয়, বরং অনৈতিক পন্থাও অবলম্বন করেছে। ক্রেতা অগ্রিম টাকা দিয়ে ফোন অর্ডার করা সত্ত্বেও তাকে সময়মতো ডেলিভারি তো দেয়ইনি, বরঞ্চ খরিদ্দার বারংবার কাস্টমার কেয়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজের সমস্যার কথা জানাতে চাইলেও তাকে সংস্থাটি কোনো পাত্তাই দেয়নি। খুব স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে অভিযোগকারী আর্থিক ক্ষতি এবং মানসিক যন্ত্রণার সম্মুখীন হয়েছেন, আর সেই কারণেই ফ্লিপকার্টের বিরুদ্ধে এই জরিমানার নির্দেশ দিয়েছে উপভোক্তা আদালত।

অনলাইনে কেনাকাটার সময় এই টিপসগুলি মেনে চলা খুবই জরুরী

আগেই বলেছি যে, এই প্রথম নয়, অনলাইন শপিংয়ের ক্ষেত্রে হামেশাই এরকম নানাবিধ গোলযোগের কথা শোনা যায়। কিন্তু এখনকার ব্যস্ত জীবনযাপনে যেহেতু মানুষের হাতে সময় একেবারেই নেই, তাই গ্রাহকদেরকে একপ্রকার বাধ্য হয়েই অনলাইনে কেনাকাটা করতে হয়। সেক্ষেত্রে খরিদ্দারীর সময় ক্রেতারা যদি নিম্নোক্ত টিপসগুলি মেনে চলেন, তাহলে এই ধরনের ঝামেলাগুলিকে অনেকটাই এড়িয়ে চলা সম্ভবপর হবে।

  • ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলিতে বিভিন্ন রিসেলার তালিকাভুক্ত রয়েছে। সুতরাং, অনলাইনে কিছু অর্ডার করার আগে বিক্রেতার খুঁটিনাটি জেনে নেওয়া খুবই জরুরী। বিশেষ করে যদি কোনো ব্যয়বহুল প্রোডাক্ট অর্ডার করা হয়, তাহলে তো এই কাজটি করা একান্ত আবশ্যক।
  • ব্যয়বহুল অর্ডারের ক্ষেত্রে ক্যাশ অন ডেলিভারি বিকল্পটি বেছে নেওয়াই শ্রেয়।
  • অতীতে এরকম বহু ঘটনা ঘটেছে যেখানে ক্রেতারা আইফোন কিংবা দামি ল্যাপটপের মতো প্রোডাক্ট অর্ডার করে হাতে পেয়েছেন চকলেট কিংবা কাপড় কাচার সাবান। তাই এই ধরনের সমস্যা এড়াতে ফ্লিপকার্টের মতো বেশ কিছু প্ল্যাটফর্ম বর্তমানে ওপেন-বক্স ডেলিভারির অপশন দেয়। এর সুবাদে ডেলিভারির সময় প্যাকেটে সঠিক প্রোডাক্টটি এসেছে কি না, তা ইউজাররা অন-স্পট চেক করে নিতে পারবেন। তাই নির্ঝঞ্ঝাটে অনলাইন শপিং করতে চাইলে গ্রাহকরা এই অপশনটি বেছে নেওয়ার কথা ভেবে দেখতে পারেন।
  • অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কোনো ব্যয়বহুল পণ্য কেনার আগে সর্বদা বিক্রেতার রেটিং চেক করুন, সেইসাথে কাস্টমার রিভিউকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া খুবই জরুরী।