Cyber Fraud: অর্থ ফেরত নিতে গিয়ে খোয়া গেল প্রায় ৩ লক্ষ টাকা, এই ভুল আপনিও করছেন না তো

যত দিন যাচ্ছে, গোটা দেশজুড়ে সাইবার জালিয়াতির ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। হ্যাকারদের মস্তিষ্কপ্রসূত নিত্যনতুন উপায়ের সৌজন্যে প্রায়শই সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হচ্ছে গড়ের মাঠ, যার জেরে হামেশাই খবরের শিরোনামে এই ধরনের ঘটনাগুলিকে দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি এরকমই একটি অনলাইন জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের গৌতম বুদ্ধ নগরে, যেখানে এক মহিলাকে ঠকিয়ে তার থেকে প্রায় তিন লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে হ্যাকাররা। জানা গিয়েছে, প্রতারকরা ওই মহিলাকে একটি লিঙ্ক পাঠিয়েছিল, যেটিতে ক্লিক করা মাত্রই ঘটে গিয়েছে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

হ্যাকারদের পাঠানো লিঙ্কে ক্লিক করে ফেলায় প্রায় তিন লক্ষ টাকা খোয়ালেন এক মহিলা

পুলিশ জানিয়েছে যে, ওই মহিলা মেকমাইট্রিপ (MakeMyTrip) থেকে একটি ট্যুরিস্ট প্ল্যান কিনেছিলেন। তিনি উক্ত অ্যাপটির মারফত হোটেল এবং টিকিট বুক করেছিলেন, এবং এর দরুন তার অ্যাকাউন্ট থেকে নির্ধারিত অ্যামাউন্টের চাইতেও বেশি টাকা কেটে নেওয়া হয়েছিল। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই টাকা ফেরত চেয়ে ওই মহিলা সংস্থার কাছে আবেদন করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কোম্পানির প্রতিনিধি হয়ে ওই মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করে হ্যাকাররা, এবং তারা তাকে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয়। কিন্তু মহিলাটি ঘূণাক্ষরেও টের পাননি যে, তিনি টাকা ফেরতের আর্জি নিয়ে যাদের সাথে কথা বলছেন, তাদের সঙ্গে আদতে কোম্পানির কোনো যোগসূত্রই নেই।

এরপর টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য হ্যাকাররা ওই মহিলাকে একটি ফিশিং লিঙ্কে ক্লিক করার নির্দেশ দেয়, আর মহিলাটি ওই লিঙ্কে ক্লিক করা মাত্রই তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হয় ২.৯ লক্ষ টাকা। খুব স্বাভাবিকভাবে আচমকা এই বড়োসড়ো লোকসানে ভীষণভাবে ভেঙে পড়েন তিনি, এবং হ্যাকারদের সন্ধান পেতে অবিলম্বে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেন। জানা গিয়েছে যে, ওই মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মামলা রুজু করে বর্তমানে জোরকদমে তদন্ত চালাচ্ছে।

হ্যাকারদের হাত থেকে বাঁচতে হলে সাইবার জালিয়াতির ABCD মেনে চলা আবশ্যক

চলতি সময়ে সাইবার জালিয়াতির ঘটনা যে হারে বেড়ে চলেছে, তাতে যে-কোনো সময় যে-কোনো ব্যক্তিই হ্যাকারদের প্রতারণার শিকার হতে পারেন। এমত পরিস্থিতিতে নিরাপদে এবং সুরক্ষিত থাকতে চাইলে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করাই হল এক এবং একমাত্র উপায়। যে-কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার আগে ইউজারদের সচেতন থাকা একান্ত আবশ্যক। কখনোই কোনো অজানা সোর্স থেকে পাওয়া লিঙ্কে ক্লিক করবেন না। আর টাকা ফেরত চেয়ে যদি কখনো কোনো কোম্পানির কাছে আবেদন করেন, তবে টাকা ফেরত দেওয়ার নাম করে তারা কখনোই কোনো লিঙ্কে ক্লিক করতে বলবে না। তাই কেউ যদি কখনো আপনাদেরকে কোনো লিঙ্কে ক্লিক করতে বলে, তাহলে অবশ্যই সাবধান হয়ে যান। এই নির্দেশিকাগুলি এখন সকল সংস্থাই ইউজারদেরকে দিয়ে থাকে, ফলে এগুলি চলতি সময়ে সাইবার জালিয়াতির হাত থেকে বাঁচার বেসিক নিয়ম বা ABCD হয়ে গিয়েছে।

এছাড়া, অজানা যে-কোনো কিছু জানার দরকার হলে বর্তমান ডিজিটাল যুগের সকল বাসিন্দারাই গুগল সার্চ (Google Search) করে থাকেন। ফলে কখনো যদি কোনো কোম্পানির কাছে টাকা ফেরত চাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে সেই সংস্থার কাস্টমার কেয়ার নম্বরের সন্ধান করার জন্য সকলেই প্রথমে গুগল সার্চ করেন; আর এই সুযোগটিরই ফায়দা তোলে হ্যাকাররা। জালিয়াতরা অনেক সময় গুগল পেজে প্রদর্শিত কাস্টমার কেয়ার নম্বরগুলিকে এডিট করে দেয়। ফলে গুগল সার্চ করে পাওয়া কোনো নম্বরে ফোন করলে কিন্তু ইউজাররা যে-কোনো সময়েই সাইবার জালিয়াতির শিকার হতে পারেন। এমত পরিস্থিতিতে সর্বোত্তম উপায় হল, সর্বদা কোনো সংস্থার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে কাস্টমার কেয়ার নম্বরটি সংগ্রহ করা। কোম্পানির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে নম্বর কালেক্ট করলে সেটি জাল হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

লোভনীয় পুরস্কার পাওয়ার হাতছানিতে ভুলেও কখনো মজবেন না
 
এসবের পাশাপাশি বর্তমান সময়ে বিনামূল্যে সিম কার্ড, মোটা টাকার চাকরি সহ আরও নানারকম আকর্ষণীয় পরিষেবা ও পুরস্কার দেওয়ার নাম করে সহজসরল সাধারণ মানুষকে প্রতারণার জালে ফাঁসায় হ্যাকাররা। ইউজারদেরকে দুর্বৃত্তরা বিনামূল্যে এমন কিছু লোভনীয় সার্ভিস অফার করে থাকে, যার প্রতি আকৃষ্ট হওয়া যে কারোর পক্ষেই খুবই স্বাভাবিক। এছাড়া, ব্যাঙ্ক এক্সিকিউটিভের রূপ ধারণ করে ব্যবহারকারীদেরকে ফোন করে তাদের অ্যাকাউন্ট ডিটেইলস জেনে নিয়ে তাদেরকে সাইবার জালিয়াতির ফাঁদে ফেলার একাধিক ঘটনার কথা তো আমাদের সকলেরই জানা। দিনের পর দিন ধরে এই যাবতীয় ছলাকলাগুলিকে হাতিয়ার করে ইউজারদেরকে ঠকিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করে চলেছে স্ক্যামাররা। তাই অজানা কোনো নম্বর থেকে ফোন বা এসএমএস এলে সেগুলির কোনো রিপ্লাই দেবেন না এবং কারোর সাথে কোনো পার্সোনাল ডিটেইলস ভুলেও কখনো শেয়ার করবেন না। সবসময় মনে রাখবেন, হ্যাকারদেরকে আটকানোর যেহেতু বিশেষ কোনো উপায় নেই, তাই সুরক্ষিত থাকতে হলে নিজেদেরকেই সতর্ক থাকতে হবে। তাই চোখকান খোলা রাখুন, নিরাপদে থাকুন।