বিনামূল্যে দেশবাসীর জন্য ওয়াইফাই পরিষেবা, চালু হচ্ছে PM-Wani প্রকল্প

ইন্টারনেট ছাড়া দিন কাটানোর কথা এখন ভাবাই যায়না! এক্ষেত্রে অফুরন্ত ডেটা এবং হাই স্পিড পরিষেবা পাওয়ার আশায় অনেকেই Wi-Fi কানেকশন ব্যবহার করেন, যার জন্য মাসের শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ব্যয় করতে হয়। তবে এবার, বিনামূল্য ওয়াইফাই পরিষেবার দিকে ডিজিটাল ভারতের যাত্রা আরও একধাপ এগিয়ে গেল। গত পরশু অর্থাৎ বুধবার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রক সারা দেশ জুড়ে ফ্রি পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছে। সরকার, পাবলিক ডেটা অফিস (PDO)-গুলির মাধ্যমে দেশবাসীকে এই ফ্রি পরিষেবা সরবরাহ করবে। টেলিকম মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানিয়েছেন, প্রাইম মিনিস্টার ওয়াইফাই অ্যাক্সেস নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস বা PM-WANI প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে এই পরিষেবা প্রদান করা হবে, এটির রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধনের জন্য সরকারকে আলাদা করে কোনো অর্থ প্রদান করতে হবেনা।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে দেশের টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা TRAI সর্বপ্রথম বিনামূল্যে ওয়াইফাই পরিষেবা সরবরাহের পক্ষে সওয়াল করে। এর প্রায় তিন বছর পর, সরকার এখন এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে চলেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের যে সমস্ত অঞ্চলে 4G নেটওয়ার্ক কভারেজ উপলব্ধ নয়, সেই সব স্থানে বসবাসকারী মানুষের ডেটার চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে PM-WANI প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে সরকারকে আরো বেশি করে পাবলিক ওয়াইফাই জোন গড়ে তুলতে হবে।

জানিয়ে রাখি, যে পাবলিক ডেটা অফিস বা PDO-গুলির মাধ্যমে সরকার জনতাকে ফ্রি ওয়াইফাই পরিষেবা প্রদান করবে, সেগুলির দেখভাল এবং হিসাবরক্ষণের দায়িত্ব থাকবে পিডিও আধিকারিকদের ওপর। ইউজাররা, থার্ড পার্টি অ্যাপ প্রোভাইডারের ডেভেলপ করা অ্যাপের মাধ্যমে PM-WANI প্রকল্পে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। এই অ্যাপগুলি PM-WANI প্রকল্পের অনুবর্তী ওয়াইফাই হটস্পট জোনগুলিকে খুঁজে পেতেও সাহায্য করবে।

Google -এর ফ্রি ওয়াইফাই পরিষেবা

জানিয়ে রাখি, এদেশে ফ্রি ওয়াইফাই পরিষেবা চালু হয়েছিল ২০১৫ সালে, গুগলের হাত ধরে। সেসময় গুগল, ভারতীয় রেলওয়ে এবং রেলটেল (RailTel)-এর যৌথ ব্যবস্থাপনায় দেশের ৪০০টি ব্যস্ততম রেল স্টেশনে বিনামূল্যে ওয়াইফাই পরিষেবা প্রদানের কথা ঘোষণা করে। ২০১৮ সালের মধ্যে এই ঘোষণা কার্যকরী হয়। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে, গুগল এই পরিষেবাটি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে ভারতে মোবাইল ডেটা প্ল্যান অতীব সস্তা হওয়ার কারণেই সংস্থার এই সিদ্ধান্ত বলে জানা গিয়েছে। আসলে, আনলিমিটেড ডেটা প্ল্যানের কারণে এখন আর মানুষের বিনামূল্যে ওয়াইফাই পরিষেবার প্রয়োজন নেই বলেই তাদের অভিমত। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, ভারতীয় রেলের সাথে চুক্তি শেষ হওয়ার আগে (মে, ২০২০) গুগল রণে ভঙ্গ দিলেও, রেলটেল এখনও নিজের দায়িত্বে দেশের প্রায় ৫,৬০০-টিরও বেশী স্টেশনে বিনামূল্যে ওয়াইফাই সরবরাহ বজায় রেখেছে।

Facebook এর WiFi পরিষেবা

ভারতে ফ্রী পাবলিক ওয়াইফাই পরিষেবাকে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে মার্ক জুকারবার্গের সংস্থাটির অবদানও কিছু কম নয়। প্রায় দেড় বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ২০১৭ সালে এই সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ‘ফেসবুক এক্সপ্রেস ওয়াইফাই’ পরিষেবা সর্বসমক্ষে নিয়ে আসে। প্রায় পাঁচশো স্থানীয় ইন্টারপ্রিনিউয়ার বা ব্যবসায়ীর সাথে জোট বেঁধে ফেসবুক এই পদক্ষেপ নয়। এক্ষেত্রে তারা দৈনিক ১০/২০ টাকা থেকে মাসিক ২০০/৩০০ টাকা মূল্যের ভাউচার চালু করে যেগুলি ব্যবহার করে খুব সহজেই ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করা সম্ভব। এখনও পর্যন্ত, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফেসবুকের এই পরিষেবা উপলব্ধ রয়েছে।

তাই সবশেষে এই কথাই বলতে হয় যে, উত্তরোত্তর ইন্টারনেটের চাহিদা বৃদ্ধির কালে বিনামূল্যে পাবলিক ওয়াইফাই পরিষেবা প্রদানের জন্য সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে যেহেতু আনলিমিটেড মোবাইল ডেটা প্ল্যানের কারণে বর্তমানে আমাদের হাতে এমনিতেই অজস্র ডেটা জমে থাকে, সেক্ষেত্রে সরকারের PM-WANI প্রকল্প কতটা সাফল্যের মুখ দেখবে – সেটাই দেখার!