মোদীর চালে বড় ধাক্কা চীনের, Dell, HP ও Lenovo সহ 32 টি ব্র্যান্ড ভারতে তৈরি করবে ল্যাপটপ
কেন্দ্রীয় সরকার বর্তমানে ভারতের প্রযুক্তি ও ইলেক্ট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিকে একটা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে বিশেষ উদ্যোগী।...কেন্দ্রীয় সরকার বর্তমানে ভারতের প্রযুক্তি ও ইলেক্ট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিকে একটা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে বিশেষ উদ্যোগী। যেকারণে একের পর এক নয়া স্কিম ও ক্যাম্পেইন চালু করা হচ্ছে। যার মধ্যে অন্যতম হল ২০২১ সালে ঘোষিত 'প্রোডাকশন-লিঙ্কড ইনসেনটিভ' (PLI) স্কিম। এই স্কিম নিয়ে আসার অন্যতম উদ্দেশ্য হল, বিদেশী সংস্থাগুলিকে 'মেড ইন ইন্ডিয়া' প্রোডাক্ট তৈরি করতে উৎসাহ দেওয়া। যাতে দেশীয় ও স্থানীয়ভাবে প্রোডাক্ট উৎপাদনের ফলে নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব হয়।
এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য হালফিলে, গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলিকে তাদের কম্পিউটিং ডিভাইস এদেশে আমদানি করার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই সিদ্ধান্তের কারণে বেশ কয়েকটি বড় ব্র্যান্ড এদেশে তাদের ল্যাপটপ লঞ্চ করা বন্ধ করে দেবে বলে সাফ জানিয়ে দেয়। তবে আজ ৩২টি নামজাদা ইলেক্ট্রনিক্স সংস্থা স্থানীয়ভাবে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট এবং সার্ভার তৈরির জন্য 'প্রোডাকশন-লিঙ্কড ইনসেনটিভ' উদ্যোগের নয়া সংস্করণ 'PLI 2.0' প্রোগ্রামের অধীনে আবেদন করল। এই তালিকায় - Dell, HP, ASUS, Acer, Lenovo -এর মতো নাম সামিল রয়েছে।
জানিয়ে রাখি 'ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেন ট্রেড' (DGFT) সম্প্রতি ঘোষণা করে যে, ভারত সরকার এইচএসএন কোড ৮৭৪১ (HSN code 8741) -এর অধীনে কম্পিউটিং প্রোডাক্ট (ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, অল-ইন-ওয়ান পিসি এবং আল্ট্রা-স্মল কম্পিউটার) আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
Dell, HP, Lenovo সহ মোট ৩২টি গ্লোবাল ব্র্যান্ড ভারতে 'মেড ইন ইন্ডিয়া' ল্যাপটপ তৈরির জন্য PLI 2.0 স্কিমের অধীনে আবেদন করল
তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন যে, ভারত সরকারের তরফ থেকে কম্পিউটিং ডিভাইসের আমদানি বন্ধ করার নোটিশ জারি হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ৩২টি আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি সংস্থা স্থানীয়ভাবে ডিভাইস তৈরির জন্য আবেদন করেছে। এই আবেদনগুলি, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বারা ২০২৩ সালের মে মাসে ঘোষিত PLI 2.0 স্কিমের অধীনে গৃহীত হয়েছে। আইটি হার্ডওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নের জন্য চালু করা এই প্রকল্পের কারণে প্রায় ২,৪৩০ কোটি টাকার বিনিয়োগ আসতে পারে এবং সম্ভবত ৭৫,০০০ জন নাগরিকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে দাবি করেছেন অশ্বিনী বৈষ্ণব।
চলতি মাসের শুরুতে DGFT বিভাগের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয় যে - ভারতে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট এবং পার্সোনাল কম্পিউটার আমদানি করার জন্য লাইসেন্স থাকা আবশ্যক। আর যারা লাইসেন্স জোগাড়ে সক্ষম হবে না, তাদের স্থানীয়ভাবে প্রোডাক্ট নির্মাণ করতে হবে। মূলত দেশীয়ভাবে পণ্য তৈরী করতে এবং বহির্দেশীয় আমদানির উপর নির্ভরতা কমাতেই যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা সহজেই বোধগম্য।
তবে ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি নয় বেশ কয়েকটি টেক জায়ান্ট। কেননা, অ্যাপল (Apple), স্যামসাং (Samsung) এবং এইচপি (HP) ব্র্যান্ড আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের এই ঘোষণা সামনে আসার পর এদেশে তাদের ল্যাপটপ নিয়ে আসা বন্ধ করে দেবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। যদিও আজ এইচপি (HP) -কে তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে PLI 2.0 স্কিমে অংশগ্রহণ করার জন্য আবেদন করতে দেখা গেল। তবে অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের তরফ থেকে এখনো কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। যাইহোক, ডেল (Dell), আসুস (ASUS), এসার (Acer) এবং লেনোভো (Lenovo) সহ মোট ৩৮টি সংস্থাকে সম্প্রতি 'মেড ইন ইন্ডিয়া' ল্যাপটপ নির্মাণের জন্য PLI 2.0 প্রোগ্রামে অংশ নিতে দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, বিশেষ সূত্র মারফত জানা গেছে যে, স্থানীয়ভাবে ল্যাপটপ তৈরির কাজ ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে শুরু হবে। অর্থাৎ আগামী বছরের তৃতীয় বা চতুর্থ কোয়ার্টার থেকেই বাজারে 'মেড ইন ইন্ডিয়া' ল্যাপটপ লঞ্চ হতে শুরু করবে বলেই আমাদের অনুমান।
জানিয়ে রাখি, আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় নতুন লাইসেন্সিং সিস্টেম হঠাৎ করে নিয়ে আসার কারণে কেন্দ্রীয় সরকার সংস্থাগুলিকে তিন মাসের ট্রানজিশন পিরিয়ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে, আমদানিকারকরা বিনা লাইসেন্সেই চালানকার্য সচল রাখতে পারবে। তবে ১লা নভেম্বর থেকে প্রোডাক্ট আমদানির জন্য সরকারি অনুমতি বাধ্যতামূলক করা হবে।