ভারতে মুড়ি মুড়কির মতো বিক্রি হচ্ছে iPhone, ৮ শতাংশ আয় বাড়লো অ্যাপলের
অর্থবছর ২০২২ -এর চতুর্থ কোয়ার্টারের (Q4) আর্নিং কনফারেন্স কল চলাকালীন টেক জায়ান্ট Apple জানিয়েছে তারা সেপ্টেম্বরের...অর্থবছর ২০২২ -এর চতুর্থ কোয়ার্টারের (Q4) আর্নিং কনফারেন্স কল চলাকালীন টেক জায়ান্ট Apple জানিয়েছে তারা সেপ্টেম্বরের প্রান্তিকে বিপুল সংখ্যক আইফোন, ম্যাক এবং আইপ্যাড বিক্রয়ের মাধ্যমে রেকর্ড পরিমান রেভেনিউ হস্তগত করতে সক্ষম হয়েছে। এবিষয়ে সংস্থার সিইও, টিম কুকের দাবি, Apple -এর ত্রৈমাসিক প্রতি রেভেনিউ ৯০.১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৮% বেশি৷ এছাড়া, আইফোন মডেলগুলি স্বতন্ত্রভাবে ডুয়েল-ডিজিট গ্রোথের মাধ্যমে ভারত সহ আরো বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক বাজারে সর্বকালের সেরা রেভেনিউ প্রাপ্ত করেছে।
ভারতে রেকর্ড সংখ্যক আইফোন বিক্রি করছে Apple, দাবি সংস্থার সিইও টিম কুকের
কনফারেন্স কল চলাকালীন টিম কুক বলেছে - “প্রায় প্রতিটি ভৌগলিক অংশ জুড়ে আমরা তৃতীয় ত্রৈমাসিকের জন্য নতুন রেভেনিউ রেকর্ড করতে সক্ষম হয়েছি। বিশেষত ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার মতো উদীয়মান বাজারে অত্যন্ত শক্তিশালী ডাবল-ডিজিট গ্রোথ প্রাপ্ত করার মাধ্যমে অবিশ্বাস্যভাবে ভাল পারফর্ম করেছে অ্যাপল ডিভাইসগুলি।" এক্ষেত্রে, সেপ্টেম্বরের কোয়ার্টারে আইফোন মডেলগুলি একাই মোট ৪২.৬ বিলিয়ন ডলার আয় দিয়েছে, যা ১০% অধিক ইয়ার-অন-ইয়ার গ্রোথ হিসেবে ৷ এছাড়া, অ্যাপল চলতি বছরে ৩৯৪.৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা ২০২১ সালের একই কোয়ার্টারের তুলনায় ৮% বেশি।
প্রসঙ্গত কোয়ার্টারলি রেভেনিউ রিপোর্ট সামনে আসার পর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় আমাদের নজরে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে, বিগত বেশ কয়েকটি ত্রৈমাসিক ধরে ধারাবাহিকভাবে বেশি আয় হওয়ায় ভারত বর্তমানে অ্যাপলের অন্যতম একটি মুখ্য মার্কেটে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য বাজারের থেকেও অনেক বেশি দামে লঞ্চ হওয়া সত্ত্বেও সংস্থাটির আইফোন মডেলগুলি ভারতে সর্বাধিক সেল গ্রোথ প্রত্যক্ষ করছে। ফলে উচ্চ মূল্য থাকা সত্ত্বেও অ্যাপলের ফোনগুলির বিক্রয়কার্য কীভাবে ভারতে বৃদ্ধি পাচ্ছে? এই প্রশ্ন জাগা খুবই স্বাভাবিক। চলুন নেপথ্যের কারণগুলি একটু বিশ্লেষণ করা যাক…
আমরা সকলেই জানি যে, লঞ্চ-পরবর্তী সময় আইফোনের দাম অন্যান্য বাজারের তুলনায় ভারতে অনেকটাই ব্যয়বহুল থাকে। যেমন, ভারতে এই বছর iPhone 14 -কে ৭৯,৯০০ টাকায় লঞ্চ করা হলেও, মার্কিন বাজারে কিন্তু এটিকে ৭৯৯ ডলার (প্রায় ৬৫,৮০০ টাকা) মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। একই ভাবে, iPhone 14 Pro মডেলগুলিও কিন্তু পশ্চিমা দেশের তুলনায় ভারতে অনেকটাই বেশি দামের সাথে আসে। এক্ষেত্রে iPhone 14 Pro মডেলটির ভারতে দাম ১,২৯,৯০০ টাকা, যেখানে কিনা আমেরিকায় এটি ৯৯৯ ডলার (প্রায় ৮২,৩০০ টাকা) মূল্যে উপলব্ধ। iPhone 14 Pro Max -এর দাম এদেশে ১,৩৯,৯০০ টাকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১,০৯৯ ডলার (প্রায় ৯০,৫০০)। এরূপ মূল্য বৈষম্যের কারণস্বরূপ, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার হার কমতে থাকাকে কম্পোনেন্ট ও লজিস্টিক ব্যয়ের কারণ বলে দায়ী করেছে অ্যাপল। এছাড়া, বিদেশে নির্মিত আইফোনগুলিকে আমদানি করার ক্ষেত্রেও ভালোই ট্যাক্স এবং শুল্ক চাপানো হয় তা ভুললে চলবে না।
তবে ভারতীয় বাজারে অ্যাপল প্রোডাক্টের বিক্রি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে ই-কমার্স সাইট প্রদত্ত অফার। যেমন ফ্লিপকার্ট সেল চলাকালীন iPhone 13 এবং iPhone 12 -কে যথাক্রমে প্রায় ৫০,০০০ টাকা ও ৪০,০০০ টাকায় বিক্রি করছিল। ফলে, দাম সস্তা হওয়ায় বহু ক্রেতা পুরানো প্রজন্মের এই আইফোন মডেলগুলি কিনেছেন। যদিও, এই সেলগুলির মাধ্যমে অ্যাপল খুব লাভ করতে পারেনি। কিন্তু আরো বেশি সংখ্যক ভোক্তাদের অ্যাপল পরিষেবার সাথে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে টেক জায়ান্টটি। যার দরুন, অ্যাপলের নিজেস্ব ক্লাউড স্টোরেজ iCloud+, Apple TV+, Apple Arcade বা Apple Music অ্যাপের মেম্বারশিপ ইত্যাদির থেকে ৯০০ মিলিয়নেরও বেশি টাকার সমতুল্য সাবস্ক্রিপশন পেয়েছে টিম কুকের সংস্থা, যা গত বছরের তুলনায় ১৫৫ মিলিয়নেরও বেশি। আবার, ভারতীয় গ্রাহকদের আইফোনের সাথে ব্যবহারের জন্য অন্যান্য ইকো-সিস্টেম প্রোডাক্ট কেনার জন্য প্রলুব্ধ করার মাধ্যমেও ভালোই মুনাফা কামাচ্ছে অ্যাপল।