চীনের তুলনায় ভারতে সুবিধা কম থাকলেও কেন এদেশে iPhone তৈরি করতে আগ্রহী Apple? জানুন

সম্প্রতি অ্যাপল (Apple) ২০২৪ সালের অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার আগেই ১ লক্ষ কোটি টাকার 'মেড ইন ইন্ডিয়া' আইফোন (iPhones) উৎপাদনের...
SUPARNA 30 Nov 2023 8:10 PM IST

সম্প্রতি অ্যাপল (Apple) ২০২৪ সালের অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার আগেই ১ লক্ষ কোটি টাকার 'মেড ইন ইন্ডিয়া' আইফোন (iPhones) উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে বলে জানিয়েছিল। আবার দু'দিন আগেই উক্ত টেক জায়ান্টটির অন্যতম পুরোনো ম্যানুফ্যাকচারিং পার্টনার ফক্সকন (Foxconn) ভারতে ১.৬ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করে।

তবে এতকিছুর পরও বিশ্বের মোট আইফোন ভলিউমের মাত্র ৭% ভারতে উৎপাদিত হয়। যেখানে কিনা চীনে ৯০% আইফোন তৈরি হয়ে থাকে। ফলে আইফোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারত, চীনের অপেক্ষা অনেকটাই পিছিয়ে আছে। এই বড় সংখ্যার ব্যবধান মেটানো চারটিখানি কথা নয়! তাসত্ত্বেও কেন অ্যাপল ভারতকেই তাদের মূল ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসাবে পরিচিতি দিতে চায়? বা কোন কোন কারণে আইফোন উৎপাদনে ভারত চীনের মতো দক্ষতা অর্জনে সক্ষম হয়নি? এই প্রশ্নগুলি মনে জাগা খুবই স্বাভাবিক। যার উত্তর দেব আজ আমরা এই প্রতিবেদনে।

কোন কোন কারণে ভারতে iPhones প্রোডাকশন প্রভাবিত হচ্ছে?

বর্তমানে ভারতে অ্যাপলের হয়ে আইফোন নির্মাণের কাজ করছে দুটি অংশীদার প্রোডাকশন সংস্থা, যথা - ফক্সকন এবং টাটা গ্ৰুপ। এক্ষেত্রে ফক্সকন অ্যাপলের অতি পুরোনো অংশীদার, যাদের কারখানায় সর্বাধিক সংখ্যক আইফোন তৈরী হয়। অন্যদিকে, রতন টাটা মালিকাধীন টাটা গ্রুপ খুব সম্প্রতি এদেশে উইস্ট্রনের ম্যানুফ্যাকচারিং হাব অধিগ্রহণ করার মাধ্যমে সদ্য এই ব্যবসায় প্রবেশ করেছে।

সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট অনুসারে, ফক্সকনের ভারত-ভিত্তিক কারখানায় চীনে অবস্থিত ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টের তুলনায় অনেক কম পরিমাণ আইফোন উৎপাদিত হয়। এর অন্যতম কারণ হল, ভারতে প্রোডাক্ট সাপ্লাই চেইন সংক্রান্ত বিধিনিষেধে জটিলতা থাকার কারণে উৎপাদন খরচ অনেকটাই বেশি পড়ে যায়। যেকারণে এদেশে আইফোন সম্পূর্ণরূপে তৈরি করা সম্ভব হয় না। আরো সহজ ভাষায় বললে, স্থানীয়ভাবে নির্মিত আইফোনগুলিকে 'মেড ইন ইন্ডিয়া' বলা হলেও এগুলির পার্টস শুধুমাত্র এদেশের কারখানায় অ্যাসেম্বলি করা হয়, সামগ্রিকভাবে নির্মিত হয়না। আইফোনে ব্যবহৃত - প্রসেসর, ডিসপ্লে প্যানেল, ব্যাটারির মতো যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্টের বেশিরভাগই তৈরি এবং ভারতে আমদানি করা হয় চীন থেকে। এর কারণ হল, এই সব যন্ত্রাংশ তৈরি করার মতো ইকো-সিস্টেম এখনো এদেশে নেই।

ফলে হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, ভারতে আইফোনের যন্ত্রাংশগুলি আমদানি করার পেছনে যে পরিমাণ খরচ করে সংস্থা, তারও কম টাকায় চীনেই ভালোমতো প্রোডাক্ট অ্যাসেম্বলির কাজ হয়ে যাবে। তবে সম্পূর্ণ নির্মিত একটি আইফোন ভারতে রপ্তানি করতে যে পরিমান শুল্ক দিতে হয়, তার কম খরচ করে কম্পোনেন্ট আমদানি করা সম্ভব হয়। যেকারণেই অ্যাপল বা ফক্সকনের আইফোন নির্মাণের সামগ্রিক খরচ খুব একটা প্রভাবিত হয় না।

অতএব শুল্ক কিন্তু ভারতে কম আইফোন নির্মাণের আসল সমস্যা নয়। মূল সমস্যা হল উৎপাদনের গতি। ফক্সকন চীনে অবস্থিত তাদের কারখানা যে নীতিনিয়মের সাথে পরিচালনা করে, তা ভারতে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। চীনে ফক্সকনের ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টে কর্মীদের কাজের সময় দীর্ঘ, কিন্তু কাজের ফাঁকে বিরতি নেওয়ার সময় তুলনায় ছোট। যেকরণে উৎপাদনের গতি বেশি। কিন্তু চীন ও ভারতের 'ওয়ার্ক কালচার' ভিন্ন হওয়ার জন্য ফক্সকন এদেশে এই নিয়ম প্রবর্তন করতে পারেনি।

আরেকটি অন্যতম সমস্যা হল, ভারতে ফক্সকনের কারখানায় উৎপাদন প্রক্রিয়া চলাকালীন দেখা যাচ্ছে প্রচুর পরিমাণ ইউনিট ত্রুটিপূর্ণ। মূলত কর্মী বা ইঞ্জিনিয়াররা সঠিকভাবে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত না হওয়ায় এই সমস্যা দেখে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যার জন্য ফক্সকন চীন থেকে একটি প্রশিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার টিমও পাঠিয়েছে ভারতে।

এইসব কারণে ভারতে আইফোন তৈরীর কাজে একাধিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে ফক্সকন। তবে এরপরেও অ্যাপল এদেশে তাদের প্রোডাকশন লাইন প্রসারিত করতে অধিক আগ্রহী। আসলে চীনে অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা থাকলেও, বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ কারণে সাপ্লাই চেইনে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আবার ফক্সকনের উপর মিথ্যে মামলা চাপিয়ে ব্যতিব্যস্ত করার অভিযোগও এসেছে চীনা সরকারের বিরুদ্ধে। ফলে এইসকল অহেতুক ঝামেলা এড়াতে টিম কুকের সংস্থাটি চীনের বিকল্প হিসাবে ভারতকে বেছে নিয়েছে।

Show Full Article
Next Story