OnePlus 11 5G যেন বাহুবলী ফোন, পুরো শক্তি লাগিলেও ভাঙা গেল না, দেখুন ভিডিও
বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন কমবেশি সব মানুষেরই প্রিয় বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এই সর্বক্ষণের সঙ্গীটির কোনো ক্ষতি হলেই...বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন কমবেশি সব মানুষেরই প্রিয় বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এই সর্বক্ষণের সঙ্গীটির কোনো ক্ষতি হলেই আমাদের মনটা যেন একেবারে ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। আচমকা হাত থেকে ফোন মাটিতে পড়ে গেলে আমাদের সকলেরই বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে। শুধু তাই নয়, পড়ে যাওয়ার পর সেটি ঠিকঠাক কাজ করবে কি না, এটা ভেবে আমাদের মন রীতিমতো অস্থির হয়ে যায়। যদিও কোনো কোনো সময় আমরা দেখি সেটা অক্ষত আছে, তবে কখনো আবার দেখি যে তার স্ক্রিনে স্ক্র্যাচ পড়ে গেছে বা ভেঙে গেছে। আবার, ভারী কোনো জিনিসের দ্বারা ফোনের ওপর অত্যধিক চাপ পড়লে অনেক সময় সেটি দুমড়ে-মুচড়েও যায়। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল, বাজেট রেঞ্জ থেকে শুরু করে অনেক বেশি দামি ফোনের ক্ষেত্রেও এই ধরনের ঘটনাগুলি একাধিকবার প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে। তাই একটি মজবুত ফোনের সন্ধান পেতে অনেক ক্ষেত্রেই ইউজারদেরকে প্রচুর খোঁজাখুঁজি করতে হয়। তবে আপনি যদি হালফিলে কোনো নামজাদা কোম্পানির প্রিমিয়াম রেঞ্জের একটি শক্তপোক্ত 5G স্মার্টফোন কিনতে আগ্রহী হন, তাহলে আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনটি আপনার অবশ্যই একবার খুব ভালো করে পড়ে নেওয়া উচিত। কারণ আজ আমরা এমনই একটি 'বাহুবলী' স্মার্টফোনের সন্ধান আপনাদেরকে দিতে চলেছি, যেটিকে খুব সহজে ক্ষতিগ্রস্ত করা মুশকিলই নয়, নামুমকিনও বটে।
ডিউরেবিলিটি টেস্টে কামাল করলো OnePlus 11 5G, শত চেষ্টা করেও ডিভাইসটির বিশেষ কোনো ক্ষতি করা গেল না
আসলে ব্যাপারটা হল, বেশ কয়েকটি ওয়ানপ্লাস ডিভাইসকে টেস্ট করার পরে সম্প্রতি জেরিরিগ এভরিথিং (JerryRig Everything)-এর ইউটিউবার জ্যাক নেলসন (YouTuber Zack Nelson) লেটেস্ট ওয়ানপ্লাস ১১ ৫জি (OnePlus 11 5G) ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনটির ডিউরেবিলিটি টেস্ট করেছেন (নীচে এই টেস্টিং ভিডিওটির লিঙ্ক দেওয়া হল)। বলে রাখি, এই টেস্ট করার পিছনে উক্ত ইউটিউবারের মূল উদ্দেশ্য ছিল, বিভিন্ন রকমের ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করার পরেও ওয়ানপ্লাসের ডিভাইসগুলি সুস্থভাবে টিকে থাকতে সক্ষম কি না, তা চেক করে দেখা। তিনি জানিয়েছেন যে, পূর্বে ওয়ানপ্লাস ১০টি (OnePlus 10T) ফোনটি এই টেস্টে পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। আবার, ওয়ানপ্লাস ১০ প্রো (OnePlus 10 Pro)-র পারফরম্যান্সও ছিল বেশ হতাশাজনক, যা স্মার্টফোন কোম্পানিটির জন্য মোটেই সুখকর খবর নয়। কিন্তু এদের তুলনায় সাম্প্রতিক টেস্টে বেশ অনেকটাই ভালো পারফর্ম করতে সক্ষম হয়েছে ওয়ানপ্লাস ১১, যার ফলে অনায়াসে এই ডিভাইসটিকে একটি মজবুত ফোনের তকমা দেওয়া যেতে পারে।
এখন প্রশ্ন হল, ঠিক কী এমন ঘটলো এই ডিউরেবিলিটি টেস্টে, যার জন্য সত্যি সত্যিই ওয়ানপ্লাস ১১-কে 'বাহুবলী' আখ্যা দেওয়া যেতে পারে? সেক্ষেত্রে বলি, এই টেস্টের দরুন উক্ত ডিভাইসটির ওপর অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছেন জ্যাক নেলসন। উল্লেখ্য যে, যদিও ভিডিওর শুরুতেই তিনি ফোনটির ডিজাইনের ভূয়সী প্রশংসা করেন, তবে ডিভাইসটির আকর্ষণীয় লুকও কিন্তু ওই ইউটিউবারের হাতকে সংযত করতে পারেনি। তাই একটি ধারালো ছুরি দিয়ে গরিলা গ্লাস ৫ প্রোটেকশন সহ আসা ফোনটির স্ক্রিনের ওপর তিনি একাধিকবার ঘষাঘষি করতে থাকেন। কিন্তু এত কিছু করা সত্ত্বেও দেখা যায় যে, ফোনটির স্ক্রিন খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি; তবে সামান্য কিছু স্ক্র্যাচ পড়েছে। সবচেয়ে বড়ো কথা হল, এই স্ক্র্যাচের ফলে কিন্তু ফোনটির স্ক্রিনের কার্যকারিতা কোনোভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়নি, সেটি জ্যাকের আঙুলের প্রত্যেকটি স্পর্শেই সাড়া দিয়েছে। এরপর নেলসন ফোনটির স্ক্রিনকে ৫০ সেকেন্ডেরও অধিক সময় ধরে লাইটারের জ্বলন্ত আগুনের শিখায় ধরে রাখেন; কিন্তু তারপরেও সেটির পারফরম্যান্সে কোনো কমতি পরিলক্ষিত হয়নি, যা নিঃসন্দেহে এক চমকপ্রদ ব্যাপার!
তবে এখানেই শেষ নয়, এ তো গেল কেবল স্ক্রিনের কথা; এরপরে ফোনটির বাকি সমস্ত অংশের ওপর অকথ্য অত্যাচার চালানো শুরু করেন জ্যাক নেলসন। তিনি একটি ধারালো ছুরি দিয়ে ফোনের চারধারের অংশকে চাঁচতে শুরু করেন। কিন্তু দেখা গেছে যে, শুধুমাত্র কিছুটা রং চটে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই ঘটেনি (অর্থাৎ ফোনের পারফরম্যান্স অবিকল আগের মতোই রয়েছে)। এরপর তিনি ফোনের পিছনের বৃত্তাকার ক্যামেরা প্যানেল এবং সামনে সেলফি ক্যামেরার ওপরেও অজস্র আঁচড় ফেলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও হ্যান্ডসেটটির ক্যামেরা এতটুকুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
তবে এরপরে শুরু হয় আসল খেলা; জ্যাক তার দুই হাতকে ব্যবহার করে সজোরে ফোনের দুপাশে চাপ দিয়ে সেটিকে মাঝখান থেকে দু-টুকরো করে ফেলার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু অবাক কাণ্ড! দেখা যায় যে, বহুবার প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগ করা সত্ত্বেও ফোনের পিছনের প্যানেলে কেবলমাত্র বেশ কয়েকটি বড়োসড়ো স্ক্র্যাচ পড়ে যাওয়া ছাড়া ডিভাইসটির আর কোনোও ক্ষতি হয়নি; এত কিছু করার পরেও ফোনটি সম্পূর্ণ সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। এই প্রসঙ্গে জ্যাক উল্লেখ করেছেন যে, পূর্বেও তিনি একাধিক ওয়ানপ্লাস ফোনের ওপর এইরকম ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। সেক্ষেত্রে ওয়ানপ্লাস ১০টি তো একেবারে ভেঙে চৌচির হয়ে গিয়েছিল, আবার ওয়ানপ্লাস ১০ প্রো ফোনটিও বেশ ভালোরকমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু এবারে জ্যাকের নির্মম অত্যাচার সহ্য করে ডিউরেবিলিটি টেস্টে জয়ী হতে পেরেছে ওয়ানপ্লাস ১১, যা স্মার্টফোন নির্মাতা সংস্থাটির জন্য নিঃসন্দেহে এক দারুণ সুসংবাদ। সেক্ষেত্রে এত কিছু ঘটে যাওয়ার পর নিঃসন্দেহে আলোচ্য হ্যান্ডসেটটিকে 'বাহুবলী' বলা যেতেই পারে।
OnePlus 11 5G ফোনের দাম
ওয়ানপ্লাস ১১-এর ৮ জিবি + ১২৮ জিবি স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্টটি ভারতে ৫৬,৯৯৯ টাকায় লঞ্চ হয়েছিল। আবার, হ্যান্ডসেটটির ১৬ জিবি + ২৫৬ জিবি স্টোরেজযুক্ত মডেলটির এদেশে দাম ৬১,৯৯৯ টাকা।
OnePlus 11 5G-এর ফিচার এবং স্পেসিফিকেশন
ওয়ানপ্লাসের এই স্মার্টফোনটিতে রয়েছে ৬.৭ ইঞ্চি কিউএইচডি প্লাস ই৪ ২.৭৫ডি ফ্লেক্সিবল কার্ভড ওএলইডি এলটিপিও ৩.০ ডিসপ্লে, যা এইচডিআর১০+ (HDR10+) টেকনোলজি, ডলবি ভিশন, ১২০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট, এবং ১৩০০ নিটস পর্যন্ত পিক ব্রাইটনেস অফার করে। ফাস্ট পারফরম্যান্স প্রদান করার জন্য ডিভাইসটি স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ২ (Snapdragon 8 Gen 2) এসওসি সহ এসেছে। হ্যান্ডসেটটি অ্যান্ড্রয়েড ১৩ (Android 13) ভিত্তিক অক্সিজেনওএস ১৩ (OxygenOS 13) কাস্টম স্কিনে রান করে। এছাড়া, এই ফোনে রয়েছে অ্যাড্রেনো ৭৪০ জিপিইউ (Adreno 740 GPU), ১৬ গিগাবাইট পর্যন্ত এলপিডিডিআর৫এক্স (LPDDR5X) র্যাম এবং কোম্পানির বিশেষ হাইপারবুস্ট (HyperBoost) গেমিং ইঞ্জিন। ইন-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর সহ আসা এই হ্যান্ডসেটটি আইপি৫৪ (IP54) রেটিংপ্রাপ্ত হওয়ায় এটি সম্পূর্ণভাবে জল এবং ধুলো প্রতিরোধী।
ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে, ওয়ানপ্লাস ১১ ফোনটিতে ট্রিপল রিয়ার ক্যামেরা সেটআপ বিদ্যমান। এই ক্যামেরাগুলি হল - অপটিক্যাল ইমেজ স্টেবিলাইজেশন (OIS) সহ ৫০ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি সনি আইএমএক্স৮৯০ (IMX890) সেন্সর, ৪৮ মেগাপিক্সেল আল্ট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল সনি আইএমএক্স৫৮১ (IMX581) সেন্সর এবং এফ/২.০ অ্যাপারচারসহ ৩২ মেগাপিক্সেল টেলিফটো সনি আইএমএক্স৭০৯ (IMX709) সেন্সর। আবার, সেলফির জন্য ফোনটিতে ১৬ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ফেসিং ক্যামেরার দেখা মিলবে। পাওয়ার ব্যাকআপের জন্য ওয়ানপ্লাসের এই ফোনে ৫,০০০ এমএএইচ ক্যাপাসিটির ব্যাটারি দেওয়া হয়েছে, যা ১০০ ওয়াট সুপারভোক (SuperVOOC) ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট করে।