স্মার্টফোন সম্পর্কে প্রচলিত রয়েছে এই ১০টি ভুল ধারণা, আপনি কি এর মধ্যে কোনোটি বিশ্বাস করেন?
যত দিন যাচ্ছে, মানুষের রোজকার প্রতি মুহূর্তের সঙ্গী তথা দৈনন্দিন জীবনে এককথায় অপরিহার্য হয়ে উঠছে স্মার্টফোন। তাই এই...যত দিন যাচ্ছে, মানুষের রোজকার প্রতি মুহূর্তের সঙ্গী তথা দৈনন্দিন জীবনে এককথায় অপরিহার্য হয়ে উঠছে স্মার্টফোন। তাই এই প্রিয় বন্ধুটিকে কীভাবে ভালো রাখা যায় বা এর আয়ুষ্কাল কীভাবে বাড়াতে হয়, কিংবা কীভাবে এটিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত – সে নিয়ে নানা মুনির নানা মত শোনা যায়। আর এই কারণে স্মার্টফোনের সম্বন্ধে অনেক ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয় আমাদের মনে। কিন্তু লোকের কথা অনুযায়ী চলা নয়, নিজের সর্বক্ষণের সঙ্গী অর্থাৎ স্মার্টফোনকে ভালোভাবে চিনে নেওয়া আমাদের অবশ্যই উচিত। তাই এই প্রতিবেদনে আমরা আপনাদেরকে এমন দশটি স্মার্টফোন মিথ বা প্রচলিত ধারণার কথা জানাতে চলেছি, যা অধিকাংশ লোকই সঠিক বলে মনে করলেও কথাগুলি কিন্তু পুরোপুরিভাবে একদমই সত্যি নয়।
মন থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এই ভুল ধারণাগুলি
সারারাত ধরে ব্যাটারি চার্জ করবেন না: বেশিরভাগ মানুষই বিশ্বাস করেন যে, সারারাত ধরে মোবাইলে চার্জ দেওয়ার ফলে ফোনের ব্যাটারি দ্রুত খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু সেটা সত্যি নয়, কারণ আপনার স্মার্টফোন কিন্তু এখন আগের থেকে অনেক বেশি স্মার্ট হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে স্মার্টফোনকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে ১০০% হয়ে গেলেই অটোমেটিক চার্জ হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তাই প্রযুক্তিগত কোনো সমস্যা না থাকলে ওভারনাইট চার্জে কোনো ক্ষতি হওয়ার কথা নয়।
অটোমেটিক ব্রাইটনেস অন থাকলে ব্যাটারি কম খরচ হয়: বহু লোকের মুখে একথা শোনা যায় যে, ফোনে যদি অটোমেটিক ব্রাইটনেস ফিচারটি অন করা থাকে তাহলে ফোনের ব্যাটারি কম খরচ হয়; ফলে ফোনটি দীর্ঘক্ষণ অ্যাক্টিভ থাকতে পারে। কিন্তু আপনাদেরকে বলে রাখি, এই কথাটি কিন্তু সত্যি নয়। বরং অটোমেটিক ব্যাটারি ফিচার অন করলে ব্যাটারি খরচ হওয়ার সম্ভাবনা খানিকটা বেড়ে যায়। কেননা আপনি যদি প্রচণ্ড রোদের মধ্যে যান এবং তারপর সেখান থেকে আবার কোনো অন্ধকার জায়গায় চলে আসেন, তাহলে ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ব্রাইটনেসের মাত্রা চটজলদি পরিবর্তন করতে থাকে এবং এর ফলে চার্জ অনেকটাই বেশি খরচ হয়।
ব্যাকগ্রাউন্ডে চলা অ্যাপ বন্ধ থাকলে ব্যাটারি কম খরচ হয়: স্মার্টফোনে কাজ করার সময় একইসাথে আমরা একাধিক অ্যাপ ব্যবহার করে থাকি। ফলে রানিং অ্যাপের পাশাপাশি ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেকগুলি অ্যাপ চলতে থাকে। কথিত আছে যে, ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রচুর অ্যাপ চলতে থাকলে স্মার্টফোনের ব্যাটারি খুব তাড়াতাড়ি খরচ হয়। কিন্তু এসব কথা বিশ্বাস করার আগে সবসময় মনে রাখবেন যে, এখন কিন্তু আপনি আর আগের মান্ধাতার আমলের পড়ে নেই, আপনার ফোন এখন অনেক বেশি স্মার্ট হয়ে গিয়েছে। বিশ্বখ্যাত টেক জায়েন্ট Apple এবং Google এখন এমন অ্যালগরিদম নিয়ে এসেছে, যাতে ব্যাকগ্রাউন্ডে চলা অ্যাপগুলি রিফ্রেশ না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তাই সেক্ষেত্রে দ্রুত ব্যাটারি ক্ষয় হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
বেশি মেগাপিক্সেল মানেই আরও ভালো ছবি পাওয়া যাবে: বর্তমানে স্মার্টফোন শুধু ফোন করা বা ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্যই নয়, বরং সেইসাথে অন্যান্য অনেক যন্ত্রের কাজ করতে সক্ষম যার মধ্যে অন্যতম একটি হল ক্যামেরা। সত্যিই এখন স্মার্টফোনে উন্নতমানের ক্যামেরা উপলব্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই আলাদা করে ক্যামেরা কেনার কথা ভুলে গেছেন বললেই চলে। আর স্মার্টফোনে বেশি মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা থাকলেই সকলে মনে করেন যে তাতে ডিএসএলআরের মতো ভালো ছবি পাওয়া যাবে। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। স্মার্টফোনে ভালো ছবি তুলতে গেলে শুধুমাত্র বেশি মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাই নয়, তার সাথে আরও অনেক জরুরি ফিচারের প্রয়োজন হয়। সাধারণভাবে আপনিই ভেবে দেখুন না, শুধুমাত্র বেশি মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাতেই যদি ডিএসএলআরের মতো ভালো ফটো তোলা সম্ভব হতো, তাহলে কি কেউ আলাদা করে এত বেশি টাকা খরচা করে ক্যামেরা কিনতো?
ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করা নিরাপদ: বেশিরভাগ মানুষই ফ্রি ওয়াই-ফাইকে নিরাপদ বলে মনে করেন। তাই পথেঘাটে চলতে চলতে মাঝে কোথাও যদি ফ্রি ওয়াই-ফাইয়ের সন্ধান পাওয়া যায়, তাহলে অনেকেই যেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ হাতে পেয়ে গেছেন বলে মনে করেন! কিন্তু জেনে রাখবেন, ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করা কিন্তু একেবারেই নিরাপদ নয়। তাই ভ্রমণকালে বা কোনো অচেনা জায়গায় গিয়ে ফ্রি ওয়াই-ফাই পাওয়া গেলে তা কিন্তু খবরদার ব্যবহার করবেন না, কারণ এটি আপনার তথা আপনার ফোনের নিরাপত্তা ও সুরক্ষাকে প্রভাবিত করতে পারে।
3G-র চেয়ে 4G-তে ডেটা খরচ বেশি হয়: অনেকেই মনে করেন যে, 3G-র চেয়ে চাইতে 4G-তে বেশি পরিমাণ ডেটা খরচ হয়। কিন্তু আসল কথাটা হল, আপনি যত বেশি ডেটা ব্যবহার করবেন, তত বেশি ডেটা খরচ হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হল, 3G-র চাইতে 4G-র নেট স্পিড এবং নেট কোয়ালিটি দুটোই আরও উন্নত। তাই সেক্ষেত্রে খুব সাধারণভাবে ভেবে দেখলে, একটু ডেটা বেশি খরচ হওয়া খুব স্বাভাবিক নয় কি?
স্মার্টফোনের রেডিয়েশন ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়: স্মার্টফোন সম্পর্কে প্রচলিত মিথগুলির মধ্যে অন্যতম একটি হল, স্মার্টফোনের রেডিয়েশন ক্যান্সারের জন্য দায়ী। কিন্তু একথা সত্যি নয়, স্মার্টফোন থেকে নির্গত রেডিয়েশনের জন্য কখনোই ক্যান্সার হয় না। কারণ ফোন থেকে নির্গত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের ফ্রিকোয়েন্সি যাতে মানব শরীরের জন্য সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ হয়, তার জন্য গবেষণা সংস্থাগুলি অহরহ পরিশ্রম করে চলেছে। তাছাড়া যথাযথভাবে রেডিয়েশনের ফ্রিকোয়েন্সি চেক করার পরে তবেই কোনো স্মার্টফোনকে মার্কেটে লঞ্চ করা হয়।
ফোনের সাথে ক্রেডিট কার্ড না রাখা: অনেকেই ক্রেডিট কার্ডের সাথে স্মার্টফোন না রাখার পরামর্শ দেন। কারণ তারা মনে করেন যে, এর ফলে ক্রেডিট কার্ডের ম্যাগনেটিক স্ট্রিপটি খারাপ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু একথা একেবারেই ভুল, স্মার্টফোনের সাথে ক্রেডিট কার্ড রাখা সম্পূর্ণ নিরাপদ। এতে কোনোটিরই কোনোরকম ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
চার্জ দেওয়ার সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন না: অনেকেই মনে করেন যে, চার্জিংয়ের সময় ফোন ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ফোন ও তার ব্যাটারির ওপর চাপ পড়ে, ফলে স্মার্টফোনটি দ্রুত খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু আবারও আপনাদেরকে বলছি যে, আপনার স্মার্টফোন কিন্তু এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি স্মার্ট! তাই ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলি এখন সমস্ত স্মার্টফোনকে সেইভাবেই প্রস্তুত করছে যাতে যথেচ্ছ ব্যবহার করলেও তার ওপর কোনো কুপ্রভাব না পড়ে। তাই এই ধারণাটি পুরোপুরিভাবে সঠিক নয়৷
ভেজা ফোনের জন্য হেয়ারড্রায়ার ব্যবহার করা: ভুলবশত কখনো জলে পড়ে গেলে ভেজা ফোন শুকানোর জন্য হেয়ারড্রায়ার ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু এটা করা উচিত নয়, কারণ হেয়ারড্রায়ার তৈরি করা হয়েছে চুল শুকানোর জন্য, ফোন শুকানোর জন্য নয়। ফলে অকস্মাৎ হেয়ারড্রায়ারের ব্যবহারের ফলে আপনার স্মার্টফোন কিন্তু অধিক পরিমাণে গরম হয়ে যেতে পারে, যার ফলে ফোনের সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ভুলেও এই ধরনের কাজ কখনও করবেন না।