ফোনের ব্যাটারি বিস্ফোরিত হওয়ার ঘটনা আজকাল যেন টেক দুনিয়ায় খবরের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। চলতি বছরে বিশ্বজুড়ে প্রায়শই একাধিক নামিদামি কোম্পানির স্মার্টফোন ব্লাস্টের খবর আমাদের কানে এসেছে, এবং বহুক্ষেত্রেই ইউজাররা বেশ গুরুতরভাবে জখম হয়েছেন। আর এরকম ঘটনা ঘটলে স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি বেশিরভাগ সময়ই নিজেদের দায় এড়িয়ে দোষটা কাস্টমারদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়।
কিন্তু সংস্থাগুলির তরফ থেকে সত্যিই ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের সময়ে স্মার্টফোনে কম্পোনেন্টগত কোনো ত্রুটি থাকার কারণেই ব্লাস্ট হচ্ছে কি না সেটা এখন আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় নয়। বরং বেশিরভাগ মোবাইল ইউজাররা অনেকসময় ভুলবশত এমন কিছু কাজ করে ফেলেন, যার প্রভাব সরাসরি স্মার্টফোনের উপর গিয়ে পড়ে, আর পরিণামে ফোনে আগুন ধরা ও ব্লাস্ট হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে থাকে। তাই আজ আমরা এই প্রতিবেদনে এমন ৫ টি বিষয় সম্পর্কে জানাবো, যেগুলির জন্য সাধারণত স্মার্টফোনের ব্যাটারি বিস্ফোরিত হয়। এই বিষয়গুলি মাথায় রাখলে স্মার্টফোন ব্লাস্টের ঘটনা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব।
ডিভাইস বা ব্যাটারির শারীরিক ক্ষতি
ফোনের ব্যাটারি বিস্ফোরণের সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলির মধ্যে অন্যতম একটি হল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাটারি। তাড়াহুড়োর মধ্যে প্রায়শই আমাদের হাত থেকে মোবাইল ফোন মাটিতে পড়ে যায়। ফলস্বরূপ আমরা বুঝতে না পারলেও ভেতরে ভেতরে ব্যাটারিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে সেটি অতিরিক্ত গরম হওয়ার পাশাপাশি শর্টসার্কিটের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারিটির শারীরিক অবস্থার দিকে যথাযথভাবে নজর দিন। আপনার ফোনের ব্যাটারি খারাপ হয়ে গিয়ে থাকলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা ফুলে যায় এবং সেটা আপনি রিয়ার প্যানেলের দিকে চোখ রাখলেই বুঝতে পারবেন। যদি দেখেন আপনার ফোনের ব্যাটারি ফুলে উঠেছে, তাহলে আর দেরি না করে অবিলম্বে ফোনটিকে সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যান।
ভিন্ন কোম্পানি বা সস্তার চার্জার ব্যবহার
এটি ব্যাটারি বিস্ফোরণের একটি অন্যতম কারণ। স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি সবসময় যে কোনো ফোনের সাথে প্রদত্ত চার্জারটি ব্যবহার করার কথা বলে। কিন্তু অনেক সময় বাইরে চার্জার নিয়ে যেতে ভুলে যাওয়ার কারণে এসব কথা মানুষের আর মাথাতেই থাকে না, হাতের সামনে যে চার্জার পায় সেটা দিয়েই ফোন চার্জ করে ফেলে। পাশাপাশি চার্জার খারাপ হয়ে গেলে বা হারিয়ে গেলে অনেকেই থার্ড-পার্টি চার্জার সস্তায় কিনে নেন। কিন্তু এই কাজগুলি করলে আপনার ফোনের ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ফোন ব্লাস্ট হওয়া এড়াতে সর্বদা ফোনের রিটেল বক্সে থাকা চার্জার ব্যবহার করুন এবং চার্জার খারাপ হয়ে গেলে সংস্থার অনলাইন বা অফলাইন স্টোর থেকে সেটি কিনে নিন।
সারারাত ধরে ফোন চার্জে বসিয়ে রাখা
এমন অনেকেই আছেন যারা কাজকর্ম সেরে দিনান্তে ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে ফোন চার্জে বসিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন এবং সারারাত ধরে সেটি চার্জ হতে থাকে। এটা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়, কারণ দীর্ঘ সময় ধরে চার্জে থাকার ফলে ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম, শর্টসার্কিট হওয়ার পাশাপাশি কখনো কখনো বিস্ফোরণও ঘটে থাকে। এখনকার বেশ কিছু ফোন ১০০% চার্জ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে চার্জে বসানো থাকলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফোনটির ভেতরের সমস্ত কারেন্ট ফ্লো বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সব ফোনে এই সিস্টেম থাকে না। তাই সারারাত ধরে ফোন চার্জে বসিয়ে রাখবেন না, নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ দেওয়া হয়ে গেলে ফোনটি চার্জিং প্লাগ থেকে যথাসময়ে খুলে নিন।
জল বা সরাসরি সূর্যালোকের সংস্পর্শে ব্যাটারি রাখা
সূর্যের আলো বা জলের সরাসরি সংস্পর্শ থেকে আপনার স্মার্টফোনকে দূরে রাখুন। অত্যধিক তাপ কোষগুলিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে এবং অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো গ্যাস তৈরি হওয়ার জন্য ব্যাটারি ফুলে যাওয়ার পাশাপাশি বিস্ফোরণ পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই সরাসরি সূর্যালোকের সংস্পর্শে আপনার ফোন না নিয়ে যাওয়াই ভালো। আর যতই আপনার স্মার্টফোনটি IP সার্টিফাইড হোক না কেন, হাজার হোক ফোন একটা ইলেকট্রনিক গ্যাজেট তো! যে কোনো ইলেকট্রনিক গ্যাজেটকেই সর্বদা জল থেকে দূরে রাখাই শ্রেয়। তাই বিস্ফোরণের সম্ভাবনা এড়াতে আপনিও আপনার স্মার্টফোনকে সর্বদা জলের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখুন।
প্রসেসর ওভারলোড
বেশিরভাগ পরিস্থিতিতে মাল্টি-টাস্কিং এবং গেমিং সেশনের ফলে প্রসেসরে চাপ পড়ায় ফোন গরম হতে পারে। আর ফোন গরম হওয়া মানেই তার সরাসরি প্রভাব গিয়ে পড়ে ব্যাটারির উপর, যা বহু ক্ষেত্রেই বিস্ফোরণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাই একইসাথে ব্যাকগ্রাউন্ডে একাধিক অ্যাপ খুলে রেখে বা অতিরিক্ত ভারী কোনো অ্যাপ ডাউনলোড ও ইনস্টল করে অযথা প্রসেসরের ওপর চাপ ফেলবেন না। আর বেশ অনেকটা সময় কাজ করার পর গরম হয়ে গেলে ফোনটিকে কিছুক্ষণ বিশ্রাম দিতে ভুলবেন না যেন!