5G: হাই স্পিড ইন্টারনেটই শেষ কথা নয়, দেশে ৫জি চালু হলে সুবিধা বাড়বে চিকিৎসা থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রেরও
ইতিমধ্যে Jio (জিও), Airtel (এয়ারটেল), Vi (ভোডাফোন আইডিয়া)-র মত প্রধান টেলিকম সংস্থাগুলি ঘোষণা করেছে যে, এই আগস্টেই দেশে...ইতিমধ্যে Jio (জিও), Airtel (এয়ারটেল), Vi (ভোডাফোন আইডিয়া)-র মত প্রধান টেলিকম সংস্থাগুলি ঘোষণা করেছে যে, এই আগস্টেই দেশে 5G নেটওয়ার্ক পরিষেবা চালু হবে। ফলে দুরন্ত গতির নেটওয়ার্কের নাগাল পেতে আপামর দেশবাসীকে আর মাত্র কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এমত পরিস্থিতিতে দ্রুত গতির ইন্টারনেট স্পিডকে কাজে লাগিয়ে কী কী কাজ অতি অনায়াসে করা যাবে, সেই নিয়ে বহু মানুষের মনেই ব্যাপক কৌতূহলের সঞ্চার হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 5G এলে নেটদুনিয়ায় রীতিমত বিপ্লব ঘটে যাবে। এর ফলে যে শুধু ফাস্ট ইন্টারনেট পরিষেবাই মিলবে তা নয়, আমাদের চারপাশে অন্যান্য অনেক বিষয়ের ওপরও এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। তাহলে চলুন, পরবর্তী প্রজন্মের নেটওয়ার্কের আগমনের সুবাদে আমাদের পারিপার্শ্বিক জগতে কী কী পরিবর্তন ঘটতে চলেছে, সে সম্পর্কে গুটিকয়েক কথা জেনে নেওয়া যাক।
মুছবে বাফারিং শব্দটির অস্তিত্ব, গেমিং সেক্টরেও আমূল পরিবর্তন ঘটবে
সূত্র মারফত পাওয়া খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে, ৫জি পরিষেবা ৪জি (4G)-র তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি ব্যয়বহুল হতে পারে। তবে একটু বেশি গাঁটের কড়ি খসলেও পরবর্তী প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সার্ভিস ব্যবহার করে ইউজাররা যে বেজায় আনন্দ পাবেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। জানা গিয়েছে যে, ৪জির তুলনায় ১০ গুণ বেশি গতিসম্পন্ন হবে ৫জি পরিষেবা। এই কানেক্টিভিটির দৌলতে ‘বাফারিং’ শব্দটির অস্তিত্বই মুছে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে, সেইসাথে চোখের পলকে ডাউনলোড করা যাবে একটা গোটা এইচডি মুভি! শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি অডিও ও ভিডিও কলের মানও আরও উন্নত হবে। এছাড়া, গেমিং সেক্টরেও আমূল পরিবর্তন আনতে চলেছে পরবর্তী প্রজন্মের দ্রুতগতির নেটওয়ার্ক, এর কল্যাণে মেটাভার্সের সঙ্গে জড়িত ইনোভেশন দেখতে পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসাক্ষেত্রে ঘটবে চমকপ্রদ বিপ্লব
বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন যে, ৫জি নেটওয়ার্ক আসার পরে মেডিকেল সায়েন্স সেক্টরেও বেশ কিছু বড়োসড়ো পরিবর্তন চোখে পড়বে। একদিকে যেমন দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে অস্ত্রোপচারের মতো বিষয়, আবার ভালো কানেক্টিভিটির সুবাদে অনেক অত্যাধুনিক অটোমেটিক সার্ভিসের উদ্ভাবন ঘটবে বলে আশা করা যেতে পারে। উপরন্তু, দুরন্ত গতির নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে ড্রোনের মাধ্যমে যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যাবে এবং প্রচলন ঘটবে স্মার্ট অ্যাম্বুলেন্সের। উল্লেখ্য যে, এই বছরের শুরুর দিকে এয়ারটেল, অ্যাপোলো হাসপাতাল (Apollo Hospitals) এবং সিসকো (Cisco) একজোট হয়ে ৫জি কানেক্টেড অ্যাম্বুলেন্সকে জনসমক্ষে এনেছিল। এর সুবিধা হল যে, হাসপাতালের চিকিৎসকরা রিয়েল টাইমে রোগীর টেলিমেট্রি ডেটা অতি অনায়াসে জানতে পারবেন। সব মিলিয়ে আগামী দিনে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও দ্রুত পৌঁছাবে চিকিৎসা পরিষেবা, আর চিকিৎসাক্ষেত্রে পরবর্তী প্রজন্মের নেটওয়ার্ক এক আমূল বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।
শিক্ষাক্ষেত্রের ভোল পাল্টে যাবে, কমবে সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা
এখানেই শেষ নয়, ৫জির আগমনের সুবাদে শিক্ষাক্ষেত্রেও বেশ বড়োসড়ো পরিবর্তন চোখে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন যে, এই পরিষেবাকে কাজে লাগিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষাদানের পদ্ধতির ভোল পাল্টে ফেলা যাবে, আর এর সুবাদে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী উভয়ই ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। উপরন্তু, এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রিমোট পরিচালিত যানবাহন ও মেশিনকেও নির্ঝঞ্ঝাটে চালানো সম্ভবপর হবে। আবার, অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রেও আরও বিশদ এবং নিখুঁত তথ্য পেতে সক্ষম হবেন গ্রাহকরা। এছাড়া, দ্রুত গতির নেটওয়ার্ক সার্ভিসের দরুন চটজলতি ডেটা ট্রান্সফার করা সম্ভবপর হবে; ফলে সড়ক দুর্ঘটনার মতো বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে যথোপযুক্ত জায়গা থেকে খুব সহজেই সাহায্য চাওয়া যাবে। তাই এই নেটওয়ার্ক সার্ভিসের সৌজন্যে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণও অনেকটাই কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
খনির নীচেও মিলবে নেট কানেকশন!
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল, অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই দাবি করছেন যে দূষণহীন নেটওয়ার্ক হবে 5G। 4G-র তুলনায় এই নেটওয়ার্ক কম পাওয়ার কনজিউম করবে, তাই ফোনের ব্যাটারির আয়ু বাড়বে। অন্যদিকে দুর্গম জায়গা, প্রত্যন্ত অঞ্চল, এমনকি খনির নীচেও কর্মীরা নির্ঝঞ্ঝাটে 5G নেটওয়ার্ক মারফত গোটা দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারবেন যা 2G (২জি), 3G (৩জি) ও 4G-তে ছিল অকল্পনীয়। অর্থাৎ এককথায় বললে, ভারতে 5G সার্ভিস চালু হলে আপামর জনগণ যেমন উন্নত পরিষেবা পাবেন, তেমনই সার্বিকভাবে সমস্ত ক্ষেত্রে দেশের প্রভূত উন্নতিসাধন হবে। এক্ষেত্রে বলে রাখি, লঞ্চের পর শুধুমাত্র ১০-১৫ টি শহরেই 5G পরিষেবা পাবেন গ্রাহকরা, তবে আগামী ১২-১৮ মাসের মধ্যে তা সারা দেশে চালু হয়ে যাবে। Ericsson (এরিকসন)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৭ সালের শেষে ভারতে 5G গ্রাহকের সংখ্যা ৫০ কোটি হতে পারে, যা রীতিমত এক চমকপ্রদ ব্যাপার।