6G: মানবদেহেই লাগানো হবে সিম কার্ড ও চিপ! ২০৩০ সালের মধ্যে চালু হবে ষষ্ঠ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি
বিশ্বের সমস্ত প্রান্তে এখনও পর্যন্ত 5G (৫জি) নেটওয়ার্ক লঞ্চ হয়নি, তবুও এরই মধ্যে 6G (৬জি)-কে কেন্দ্র করে মার্কেটে জোর...বিশ্বের সমস্ত প্রান্তে এখনও পর্যন্ত 5G (৫জি) নেটওয়ার্ক লঞ্চ হয়নি, তবুও এরই মধ্যে 6G (৬জি)-কে কেন্দ্র করে মার্কেটে জোর জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে Nokia (নোকিয়া)-র সিইও পেক্কা লুন্ডমার্কের (Pekka Lundmark) 6G নিয়ে kora সাম্প্রতিক ভবিষ্যদ্বাণী এখন টেক দুনিয়ার আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু। আসলে কিছুদিন আগে দাভোসে অনুষ্ঠিত ‘World Economic Forum’ (ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম)-এ লুন্ডমার্ক জানিয়েছেন যে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে 6G প্রযুক্তি চালু হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। এর পাশাপাশি এই ইভেন্টে স্মার্টফোনের ভবিষ্যৎ নিয়েও একটি বড়োসড়ো ঘোষণা করেছেন তিনি। তাঁর মতে, 6G নেটওয়ার্কের আগমন ঘটলে অকেজো হয়ে যেতে পারে স্মার্টফোন, অর্থাৎ আজকের দিনে ব্যবহৃত এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (পড়ুন নিত্য সঙ্গী) ডিভাইসটি তখন আর নাকি কোনো কাজেই লাগবে না! খুব স্বাভাবিকভাবেই Nokia-র সিইওর এই চাঞ্চল্যকর বিবৃতিতে টেক দুনিয়ায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে৷
6G-র আগমনে বাতিলের খাতায় চলে যাবে স্মার্টফোন?
লুন্ডমার্কের বক্তব্য, ২০৩০ সালের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে ৬জি চালু হয়ে গেলে তখন আর প্রাসঙ্গিক থাকবে না বর্তমান স্মার্টফোন। কারণ অদূর ভবিষ্যতে স্মার্ট গ্লাস বা স্মার্টওয়াচে স্মার্টফোনের সমস্ত ফিচার পাওয়া যাবে। তাই মানুষ ফোনের তুলনায় এই ধরনের অন্যান্য অত্যাধুনিক ডিভাইস অনেক বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা শুরু করবে। তাই বর্তমানে স্মার্টফোন সকলের জীবনের প্রয়োজনীয় তথা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হলেও ২০৩০ সাল নাগাদ ৬জি-র আগমন ঘটলে তখন মুঠোফোন আর এতটা বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হবে না। তবে তাই বলে স্মার্টফোনের অস্তিত্বই যে শেষ হয়ে যাবে এমনটা কিন্তু নয়। সেক্ষেত্রে চলতি সময়ে সবার হাতে এই যন্ত্রটিকে দেখা গেলেও অদূর ভবিষ্যতে ইউজারদের একাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করা একেবারেই ছেড়ে দেবে বলেই লুন্ডমার্কের অভিমত।
এখন প্রশ্ন হল, তাহলে স্মার্টফোনের জায়গা দখল করতে ভবিষ্যতে কোন অত্যাধুনিক ডিভাইসের আগমন ঘটতে চলেছে? সেক্ষেত্রে সাধারণ ইন্টারফেস হিসেবে স্মার্টফোনের বদলে কোন ইলেকট্রনিক গ্যাজেটটি আসবে সে সম্পর্কে খোলসা করে কিছু না বললেও, নোকিয়ার সিইও জানিয়েছেন যে – আগামী দিনে এমন ডিভাইস চালু করা হবে যা সরাসরি মানবদেহের সঙ্গে আবদ্ধ থাকবে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি যে, ইতিমধ্যেই সাইবোর্গ (Cyborg) এবং ব্রেন কম্পিউটারের মতো প্রযুক্তি নিয়ে বহু সংস্থা কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। এখন নিশ্চয়ই আপনাদের মনে প্রশ্ন আসছে যে সাইবোর্গ কী? আসুন জেনে নিই৷
Cyborg কী?
শরীরে এম্বেড (সংযুক্ত) করা যেতে পারে, এমন চিপ তৈরি এবং ডেভেলপের জন্য গত কয়েক বছর ধরে বহু কোম্পানি কাজ করা চালিয়ে যাচ্ছে। সোজা কথায় বললে, আগামী দিনে মানুষের শরীরে লাগানো থাকবে সিম কার্ড বা চিপ, যার সাহায্যে তারা তাদের মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে সমস্ত কাজ করতে সক্ষম হবে। হলিউডের কল্পবিজ্ঞানের ছবিগুলিতে ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে এই টেকনোলজি। আর এই অত্যাশ্চর্য ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির দিকে তাকিয়েই সাইবোর্গ অর্থাৎ সাইবারনেটিক অর্গানিজম (Cybernetic Organism) শব্দটির জন্ম হয়েছে। এই টেকনোলজির মাধ্যমে শরীরের যে-কোনো অংশে চিপ লাগিয়ে মানবশরীরের ক্ষমতা বাড়ানো হবে। অর্থাৎ এককথায় বললে, সবকিছু যদি পরিকল্পনামাফিক চলে, তাহলে ৬জি প্রযুক্তির আগমন ঘটলে ৬জি সিম কার্ড আর ফোনে লাগানোর দরকার পড়বে না, মানব শরীরেই লাগানো থাকবে সিম!
কি, শুনে নিশ্চয়ই খুব অবাক হচ্ছেন? তবে অবিশ্বাস্য বলে মনে হলেও লুন্ডমার্কের এই বক্তব্য যে আগামী দিনে ঘোর বাস্তব হতে চলেছে, তার কিছু ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই পাওয়া গেছে। কারণ ইলন মাস্কের মালিকানাধীন Neuralink (নিউরালিঙ্ক) কোম্পানি এই অত্যাশ্চর্য প্রযুক্তির একটি ঝলক জনসাধারণের সামনে তুলে ধরতে গত বছরের এপ্রিলে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল। সেখানে দেখা গেছে যে, একটি পুরুষ ম্যাকাকের (আফ্রিকান ল্যাঙ্গুর) ব্রেইনে একটি চিপ লাগানো হয়েছে, যার সাহায্যে সে মাইন্ড পং খেলছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপারটি হল, ম্যাকাকটির ব্রেইনে এই চিপ লাগানো থাকার দরুন সে কেবল তার মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়েই এই গেমটি খেলতে পারছে, এর জন্য তাকে আর বাহ্যিক অন্য কোনো যন্ত্রের সাহায্য নিতে হচ্ছে না। তবে জল্পনা-কল্পনা যতই জোরদার হোক না কেন, এই সমস্ত কর্মকাণ্ড এবং 6G রোলআউটের কাজ এখন একদম প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সেক্ষেত্রে লুন্ডমার্কের এই ভবিষ্যদ্বাণী আগামী দিনে সত্যি বলে প্রমাণিত হবে কি না, তার উত্তর একমাত্র সময়ের কাছেই রয়েছে।