বর্তমান স্মার্টফোন কেন্দ্রিক সময়ে, কোনো অ্যাপ্লিকেশন দ্বারা ইউজারের ডেটা সংগ্রহের বিষয়টি অনেকের জন্যেই মাথা-ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হালফিল সময়ে WhatsApp-ই হোক বা Google Pay – প্রায় প্রতিটি প্ল্যাটফর্মই ডেটা সংগ্রহের সময় জানাচ্ছে যে তারা পরিষেবা উন্নত করতেই বিশেষ কিছু তথ্য নিজেদের কাজে ব্যবহার করবে; কোনোরকম তথ্যই তৃতীয় পক্ষের সাথে শেয়ার করা হবে না। কিন্তু তাতেও ইউজারদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা থামছে না। কোনো স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইউজারের ঠিক কতটা ডেটা কোনো কোম্পানির হাতে পৌঁছাচ্ছে সেই নিয়েও উঠছে প্রশ্ন! সেক্ষেত্রে সম্প্রতি এক রিসার্চার, এই ধরণের কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন যা অ্যান্ড্রয়েড (Android) বা আইওএস (iOS) উভয় ধরণের ডিভাইসের ক্ষেত্রেই অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
আর্স টেকনিকার (Ars Technica) রিপোর্ট অনুযায়ী, Google এবং Apple তাদের ডিভাইস থেকে ঠিক কী ধরণের ডেটা সংগ্রহ করে এবং সংগৃহীত ডেটার পরিমাণ কতটা, তা তুলনা করে দেখিয়েছেন আয়ারল্যান্ডের ট্রিনিটি কলেজের গবেষক ডগলাস লেথ। এক্ষেত্রে ডেটা সংগ্রহের ক্ষেত্রে আইওএসকে প্রায় ২০% পেছনে ফেলেছে অ্যান্ড্রয়েড।
লেথের মতে, যখন হ্যান্ডসেটে সেটিংসের স্ক্রীনটি ব্রাউজ করা হয় বা তাতে কোনো সিম কার্ড সন্নিবেশ করা হয়, তখন আইওএস বা অ্যান্ড্রয়েড উভয় ধরণের অপারেটিং সিস্টেমই সাধারণ কিছু ডেটা মালিক সংস্থা Apple বা Google-কে পাঠিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে কোনো ইউজার ডিভাইসে লগ ইন না করলেও কিংবা এই জাতীয় ডেটা সংগ্রহ এড়াতে গোপনীয়তা সেটিংস স্পষ্টভাবে কনফিগার করে রাখলেও, ডিভাইসগুলি নিজ নিজ সংস্থাগুলিতে টেলিমেট্রি ডেটা প্রেরণ করে। এমনকি আইডল মোডে থাকাকালীন অবস্থাতেও, প্রতিটি ডিভাইস গড়ে ৪.৫ মিনিটে তার ব্যাক-এন্ড সার্ভারের সাথে সংযোগ স্থাপন করে বলে জানা গিয়েছে।
রিসার্চার লেথ আরো জানিয়েছেন যে, এই দুটি অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলিই নিখুঁত পরিমাণে ইউজারদের থেকে বেশি ডেটা সংগ্রহ করে। যেখানে একটি আইওএস অ্যাপল (Apple)-কে ৪২ কেবি ডেটা পাঠায়, সেখানে একটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস গুগল (Google)-কে প্রায় ১ এমবি ডেটা প্রেরণ করে; ফলত, শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই অ্যান্ড্রয়েড প্রতি ১২ ঘন্টায় প্রায় ১.৩ টিবি ডেটা সংগ্রহ করে। ওই একই সময়কালে, আইওএস প্রায় ৫.৮ জিবি সংগ্রহ করে।
এক্ষেত্রে লেথের মতামত সামনে আসার মাত্রই গুগল সত্ত্বর এই বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলে এবং তাঁর দাবির সম্যক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বলে যে, ডেটা সংগ্রহ কোনো ইন্টারনেট-সংযুক্ত ডিভাইসের মূল ফাংশন। এক্ষেত্রে গুগল নির্মিত ওএস দ্বারা সংগৃহীত ডেটা পরিমাপের সময় কোনো ভুল হয়েছে বলে তাদের অভিমত। এক বিবৃতিতে গুগলের এক মুখপাত্র বলেছেন যে, তারা ওই রিসার্চারের পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির কিছু ত্রুটি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন এবং তারা কোনোমতেই এই দাবির সাথে একমত নন যে একটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস আইফোনের চেয়ে ২০ গুণ বেশি ডেটা সংগ্রহ করে।
অন্যদিকে, অ্যাপলের মুখপাত্রও লেথের রিপোর্টটি নির্ভুল নয় বলে মনে করছেন। তিনি বলেছেন যে, সংস্থাটি ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। বরঞ্চ, অ্যাপল ডিভাইসগুলি এমন গোপনীয়তা সুরক্ষা দেয় যা সংস্থাকে ইউজারের অবস্থানগুলি ট্র্যাক করতে বাধা দেয় এবং ইউজারদের লোকেশন সংগ্রহের বিষয়ে অবহিত করে। ফলত, সব মিলিয়ে কী ঠিক কী ভুল সেই ধাঁধা এখনো থেকেই যাচ্ছে! তবে আশা করা যায় আগামী দিনে এই বিষয়ে আরো যথাযথ তথ্য প্রকাশিত হবে।