করোনা অতিমারীর পর থেকেই বাড়ির বাইরে অন্য শহরে ভাড়ায় থাকা নিয়ে বেশ একটা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বেশি টাকা ভাড়া, পর্যাপ্ত সুবিধা না পাওয়া এবং ল্যান্ডলর্ডদের (মানে বাড়ি মালিকের) মনমর্জির শিকার হচ্ছেন। তবে সম্ভবত ভারতের সিলিকন ভ্যালি হিসেবে পরিচিত বেঙ্গালুরু বা ব্যাঙ্গালোরে এই পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি সমস্যাজনক আকার ধারণ করেছে! আসলে বিগত কয়েক বছর ধরে চিকিৎসা, পড়াশোনা এবং কাজের জন্য অধিকাংশই এই শহরে ভিড় জমাচ্ছেন। এদিকে সবসময়ই উচ্চ হারের ভাড়া এবং বাড়িওয়ালাদের অযৌক্তিক দাবির মতো সমস্যা সম্পর্কে বেঙ্গালুরুর দিকে আঙুল তোলা হয়। অভিযোগ, এই শহরে আগত নতুন মানুষজনের জন্য ভাড়ায় থাকার জায়গা খুঁজে পাওয়া সবসময়ই কঠিন। এমনকি কেউ কেউ বেঙ্গালুরুতে ভাড়াঘর পাওয়ার চেয়ে IIT জাতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সহজ বলে ব্যঙ্গ করেন। সেক্ষেত্রে সম্প্রতি LinkedIn-এ কিছু মানুষ এই বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, যার মধ্যে একজন দাবি করেছেন যে তিনি দ্বাদশ শ্রেণীতে কম নম্বর পাওয়ার কারণে তাঁকে ভাড়া দেওয়া হয়নি। হ্যাঁ শুনতে হাস্যকর এবং আশ্চর্যজনক মনে হলেও এটিই সত্যি!
LinkedIn-এ ভাইরাল বেঙ্গালুরুতে ঘর ভাড়ার সমস্যার কথা
লিঙ্কডইন প্ল্যাটফর্মটি সাধারণত বিভিন্ন ধরণের কাজ পেতে এবং কর্মখালি সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দিতে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি এর এক ইউজার হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) চ্যাটের একটি ভাইরাল স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন যেখানে দেখা গেছে একজন দালাল, ঘর ভাড়া নিতে উৎসুক এক ব্যক্তির কাছে ক্লাস ১২-র মার্কশিট চায়। কিন্তু কথোপকথনের কিছু পরে, সেই দালাল অনুসন্ধানকারী ব্যক্তিকে জানায় যে বাড়িওয়ালা তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, কারণ মার্কশিট বা রিপোর্ট কার্ড অনুযায়ী তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৫ শতাংশ। ওই বাড়ি মালিক নাকি দ্বাদশ শ্রেণীতে কমপক্ষে ৯০ শতাংশ মার্কস প্রাপ্ত কাউকেই ভাড়া দিতে দেবেন, এমনটাই শর্ত। শুধু তাই নয়, স্ক্রিনশট অনুযায়ী, ওই বাড়ির মালিক কেবল বাড়ি ভাড়া দেওয়ার মার্কশিটের পাশাপাশি লিঙ্কডইন এবং টুইটার প্রোফাইলের লিঙ্ক দিতে বলেন। এমনকি চাওয়া হয় বিশেষ পরীক্ষার ইন্ট্রোডাকশন বা নিজের পরিচয়ের মুখবন্ধও।
সেক্ষেত্রে লিঙ্কডইন ইউজার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের স্ক্রিনশটটি শেয়ার করার সময় বিদ্রুপ করে ক্যাপশন দিয়েছেন যে, শুধুমাত্র উচ্চ শিক্ষার জন্য জন্য নয়, বরঞ্চ এখন থাকার জায়গা ভাড়া করার জন্যও নিতেও দ্বাদশ শ্রেণীর নম্বর ভালো থাকা প্রয়োজন। সত্যিই ব্যাঙ্গালোর এগিয়েছে! আর পোস্টের উত্তরে কিছু নেটিজেন মজার ছলে বলেছেন, বিষয়টি এত জটিল হয়ে পড়েছে যে হয়তো শীঘ্রই বেঙ্গালুরুর উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভাড়াটেদের জন্য ক্যাট (CAT) বা জিএমএটি (GMAT)-এর মতো একটি প্রবেশিকা পরীক্ষা হবে। তাছাড়া আগামী দিনে এই শহরে অ্যালগরিদমের মাধ্যমে ভাড়াটেদের তথ্য যাচাই করার জন্য অ্যাপ ব্যবহার হতে পারে বলেও অনেকে কৌতুক ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।
সব মিলিয়ে একথা নিশ্চিত যে, বেঙ্গালুরুতে ভাড়ায় বাড়ি পাওয়ার জন্য শহরে চাকরির আবেদন করার চেয়ে বেশি প্রস্তুতি (পড়ুন কাঠ-খড় পোড়ানো) প্রয়োজন। তাই আপনি বা পরিচিত কেউ যদি এই শহরে যাওয়ার পরিকল্পনায় থাকেন, তাহলে একটু সচেতন থাকুন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উচ্চ চাহিদার কারণে শহরটিতে বর্তমানে বাড়িওয়ালারা ভাড়া ২৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। আবার অনেকে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, এই খরচ আরও ৭-১২ শতাংশ বাড়তে পারে।