ভারতে চীনা অ্যাপ ব্যান হওয়ায় চূড়ান্ত লাভবান এই কোম্পানি, ৫,০০০ টাকার ব্যবসা পৌঁছেছে ৬৪ কোটি টাকায়!
বিগত বছর দুয়েক ধরে একের পর এক চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করছে ভারত সরকার। ২০২০ সালের জুন মাসে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক প্রথমবার...বিগত বছর দুয়েক ধরে একের পর এক চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করছে ভারত সরকার। ২০২০ সালের জুন মাসে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক প্রথমবার প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্পর্কযুক্ত ৫৯টি অ্যাপকে নিষিদ্ধ করে। দেশের জনসাধারণের সুরক্ষার খাতিরে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯ নম্বর ধারায় TikTok (টিকটক), ShareIt (শেয়ার ইট), UC Browser (ইউসি ব্রাউজার), Likee (লাইকি), We Chat (উই চ্যাট)-এর মত জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে ওই সময় ব্যান করা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে ২০২০ সালের জুন মাসে শুরু হওয়া সেই ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি সরকার আরও বেশ কয়েকটি অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে, যার মধ্যে অন্যতম একটি হল Battlegrounds Mobile India (ব্যাটেলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া) বা BGMI (বিজিএমআই)। ২০২০ সালে PUBG Mobile (পাবজি মোবাইল) নিষিদ্ধ হওয়ার পর নির্মাতা সংস্থা Krafton (ক্রাফটন) BGMI নাম দিয়ে গেমটিকে আবার দেশে ফিরিয়ে আনে। কিন্তু এবার কেন্দ্রের নির্দেশে এই গেমটিও পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হয়েছে।
তবে কথায় আছে, কারোর পৌষ মাস তো কারোর সর্বনাশ! কেন্দ্রীয় সরকারের চাপে একের পর এক চীনা অ্যাপ যখন ভারতকে আলভিদা (বিদায়) জানাতে বাধ্য হচ্ছে, তখন সেই জায়গা দখল করতে মাঠে নামছে বেশ কিছু দেশীয় সংস্থা; এবং চীনা অ্যাপগুলির দুর্দশাগ্রস্ত সময়টিকে কাজে লাগিয়ে রীতিমতো মালামাল হয়ে যাচ্ছে তারা। এমনকি ৫,০০০ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করা ভারতীয় স্টার্টআপের ব্যবসা এখন ৬৪ কোটি টাকায় ঠেকেছে! কীভাবে? আজ বলব সেই গল্পই।
অ্যাপ দুনিয়ায় নতুন চমক AppyHigh
উল্লেখ্য যে, যখন পাবজি মোবাইল এবং টিকটক নিষিদ্ধ করা হয়, তখন একাধিক দেশীয় কোম্পানি ভারতে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। অনেক স্টার্টআপ, বড়ো এবং ছোটো সংস্থা তাদের ভাগ্যের তালা খোলার চাবিকাঠির সন্ধানে জোরদার প্রয়াস শুরু করে। এমনই একটি কোম্পানি হল অ্যাপিহাই (Appyhigh)। এখন এটিকে কোম্পানি বলা হলেও, ২০২০ সালে এটি ছিল একটি স্টার্টআপ। অনীশ রায়ঞ্চা (Aneesh Rayancha) এবং ভেনাস ধুরিয়া (Venus Dhuria) ২০১৮ সালে এটি শুরু করেছিলেন। তারপর থেকে জোরকদমে কাজ চালিয়ে অবশেষে সমাজে বিশেষ পরিচিতি পায় সংস্থাটি ইতিমধ্যেই তারা টিয়ার-২ শহরগুলির জন্য ইউটিলিটি অ্যাপস তৈরি করছে। আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, ২০২০ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংস্থাটি শেয়ার করো ইন্ডিয়া (Share Karo India), ব্রাউজার গো (Browser Go) এবং স্ক্যানার গো (Scanner Go) – এই তিনটি অ্যাপ্লিকেশন চালু করেছে। এবং ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত এই অ্যাপগুলি ১৩৬ মিলিয়ন বার ডাউনলোড করা হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে এক চমকপ্রদ ব্যাপার।
কীভাবে এল এই দুর্দান্ত সাফল্য?
অ্যাপিহাই একদিনেই কিন্তু এই সাফল্য মেলেনি, এর জন্য প্রতিষ্ঠাতাদের রীতিমতো মাথার ঘাম পায় ফেলতে হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, অনীশ এবং ভেনাস ২০১৪ সালে রুতুগো (Rutugo) নামের ক্যাব এগ্রিগেটর শুরু করেন। এরপর ২০১৫ সালে তারা এটি ইক্সিগো (Ixigo)-র কাছে বিক্রি করে দেন এবং তখন এর নাম বদলে হয় ইক্সিগো ক্যাবস (Ixigo Cabs)। ইন্টিগ্রেশন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দুজনেই ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইক্সিগোর জন্য কাজ করতে থাকেন। তবে ২০১৬ সালে তারা চাকরি ছেড়ে দেন এবং নিজেদের স্বাধীন ব্যবসা শুরুর কাজে মনোনিবেশ করেন। শুরুতেই বেশ কিছু অ্যাপ লঞ্চ করেন দুজনে। এই তালিকায় জব সার্চ ইঞ্জিন এনিজব (AnyJob) এবং শপিং ব্রাউজার স্মার্টশপার (Smartshoppr) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই দুটি অ্যাপই ২০১৭ সালে চালু হয়েছিল। পরবর্তীকালে অনীশ এবং ভেনাস অ্যাপিহাই তৈরি করেন, যারপরে আরও বেশ কয়েকটি অ্যাপ্লিকেশন চালু হয়।
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতারা জানিয়েছেন যে, মাত্র ৫,০০০ টাকার পুঁজিকে অবলম্বন করে অ্যাপিহাই শুরু হয়েছিল। তবে দুজনের কঠোর পরিশ্রমের জেরে ২০২১ সালে সংস্থাটি ৬৪ কোটি টাকার (৮৬ মিলিয়ন ডলার) ব্যবসা করে। এরপর থেকেই বিভিন্ন অ্যাপ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এবং আগামী দিনে আরও সাফল্যের জন্য বেশ বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে এগোচ্ছে অ্যাপিহাই, তাই তারা এমন অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে বন্ধ করে দিচ্ছে যেগুলি ইউজারদের খুব বেশি পছন্দ নয় বা যেগুলির মারফত খুব বেশি মুনাফা হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, এই মুহূর্তে কোম্পানির বেশিরভাগ আয় Share Karo India (শেয়ার করো ইন্ডিয়া), Instore (ইনস্টোর), Browser Go (ব্রাউজার গো), App Lock Go (অ্যাপ লক গো), Scanner Go (স্ক্যানার গো), QR Code Reader (কিউআর কোড রিডার) এবং TV Lens (টিভি লেন্স)-এর মতো জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশনগুলি থেকে আসে। তদুপরি, কোম্পানিটি এখন ইন-অ্যাপ পারচেজ থেকেও মুনাফা অর্জন করা শুরু করেছে। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে উন্নতির লক্ষ্যে সংস্থাটি যেভাবে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে, তাতে আগামী দিনে Appyhigh যে খুব বিশালভাবে ফুলেফেঁপে উঠবেই – সেকথা বলাই বাহুল্য।