২৪ ঘন্টা বন্ধ এই পরিষেবা, ১৫ দিনের মধ্যে চালু হচ্ছে সরকারের নতুন নিয়ম, জেনে নিন
সম্প্রতি নতুন মোবাইল সিম নেওয়ার নিয়মে একটি গুরুত্বপূর্ণ বদল আনলো টেলিকম বিভাগ বা ডিওটি (DoT)৷ চলতি সময়ে ক্রমবর্ধমান...সম্প্রতি নতুন মোবাইল সিম নেওয়ার নিয়মে একটি গুরুত্বপূর্ণ বদল আনলো টেলিকম বিভাগ বা ডিওটি (DoT)৷ চলতি সময়ে ক্রমবর্ধমান সিম স্যুইচ স্ক্যাম এবং এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য সাইবার জালিয়াতির ঘটনাগুলিকে রুখতে হালফিলে টেলিযোগাযোগ বিভাগ এসএমএস (শর্ট মেসেজ সার্ভিস)-এর জন্য একটি নতুন নিয়ম জারি করেছে। নয়া নিয়মে টেলিকম বিভাগ Reliance Jio, Airtel এবং Vodafone Idea সহ সমস্ত টেলিকম অপারেটরকে সিম এক্সচেঞ্জ বা আপগ্রেড করার প্রক্রিয়া চলাকালীন এসএমএস ফেসিলিটি (ইনকামিং এবং আউটগোয়িং উভয়ই) বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে এবার থেকে নতুন সিম কার্ড চালু হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টা এসএমএস পরিষেবা বন্ধ থাকবে। ডিওটি-এর তরফে আরও জানানো হয়েছে যে, সমস্ত টেলিকম অপারেটরদেরকে এই নিয়মটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই কার্যকর করতে হবে।
সিম বদলের জন্য আবেদন করলে টেলিকম অপারেটরদের কাছ থেকেও পাওয়া যাবে রিকোয়েস্ট নোটিফিকেশন
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, সিম কার্ড বা নম্বর বদলের আবেদন পাওয়ার পর টেলিকম অপারেটরদেরকেও গ্রাহকদের কাছে রিকোয়েস্ট নোটিফিকেশন পাঠাতে হবে। সিম কার্ড ধারককে আইভিআরএস (IVRS) কলের মাধ্যমে এই রিকোয়েস্টটি কনফার্ম করতে হবে। এই অথেন্টিকেশন প্রসেসের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, সিম কার্ড বদলের জন্য রিকোয়েস্টটি একজন অথোরাইজইড সিম কার্ড ধারকই করেছেন, কোনো স্ক্যামার এই কাজ করেনি। টেলিযোগাযোগ বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী, গ্রাহক যদি কোনো মুহূর্তে সিম কার্ড আপগ্রেডের রিকোয়েস্ট অস্বীকার করে, তাহলে টেলিকম অপারেটরদেরকে তৎক্ষণাৎ সিম আপগ্রেড প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। এখন চলুন, যে সিম সোয়াপ জালিয়াতি রুখতে টেলিযোগাযোগ বিভাগ এত কাঠখড় পোড়াচ্ছে, সেটির সম্পর্কে একটু বিশদে জেনে নেওয়া যাক।
SIM Swap Fraud কী?
ব্যাংকিং সহ অনলাইনে বিভিন্ন জরুরি পরিষেবা পাওয়ার জন্য চলতি সময়ে মোবাইল নম্বর আমাদের জীবনের এক অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড, নেট সিকিওর কোড, বা যে-কোনো আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে মোবাইল নম্বর বিশেষভাবে কাজে লাগে। সোজা কথায় বললে, মোবাইলে এসএমএস পরিষেবার মাধ্যমেই চলতি সময়ে বিভিন্ন অনলাইন সার্ভিসের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ওটিপিগুলি গ্রাহকদের কাছে আসে, যার সহায়তায় ইউজাররা সেই পরিষেবাগুলি ব্যবহার করতে পারেন। ফলে এই বহুল ব্যবহারের জেরে এখন সহজসরল সাধারণ মানুষদের মোবাইল নম্বরকে অসৎ উপায়ে হ্যাক করে নিজেদের পকেট ভারী করার জন্য জোরকদমে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হ্যাকাররা।
বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে অন্যের সিম কার্ড নিজের নামে পোর্ট করানোর মাধ্যমে বেশ ভালোই রমরমিয়ে চলছে লোক ঠকানোর ব্যবসা। আর ইউজারদের অজান্তে এইরকম মোবাইল নম্বর পোর্টিং বা সিম কার্ড অদলবদল করার ঘটনাই ‘সিম কার্ড সোয়াপিং’ (Sim Card Swapping) নামে পরিচিত। এই ধরনের জালিয়াতির ক্ষেত্রে প্রতারকরা প্রথমে ফিশিং, ভিশিং, কিংবা স্মিশিং-এর মতো সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও পার্সোনাল ডিটেইলস এবং রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বর জোগাড় করে ফেলে, এবং তারপর নিজেদের মস্তিষ্কপ্রসূত সুচতুর দুর্বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে শুরু করে আসল খেলা।
এর পরবর্তী ধাপে হ্যাকাররা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটির আসল সিম কার্ডকে ব্লক করার জন্য চুরি করা যাবতীয় ডকুমেন্টসগুলিকে সাথে নিয়ে ওই একই নম্বরে একটি নতুন সিম কার্ড ইস্যু করার জন্য টেলিকম পরিষেবা সরবরাহকারীর সাথে যোগাযোগ করে। খুব স্বাভাবিকভাবেই হ্যাকারদের কাছে যথাযথ প্রমাণ থাকায় টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডাররাও তৎক্ষণাৎ তাদেরকে নতুন সিম কার্ড দিয়ে দেয়। হ্যাকারদের সুনিপুণ হাতযশের সৌজন্যে এরপরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পুরোনো সিম কার্ডটি ডিঅ্যাক্টিভেট হয়ে যায় এবং সেই নম্বরটিকে ব্যবহার করে যাবতীয় অসৎ কার্যকলাপ করতে শুরু করে জালিয়াতরা। ইউজারদের মোবাইল নম্বরের অ্যাক্সেস পেয়ে যাওয়ায় ফোনে আসা সমস্ত গোপনীয় ওটিপি এবং মেসেজ হ্যাকারদের হাতের নাগালে চলে আসে, যেগুলিকে কাজে লাগিয়ে তারা এক নিমেষেই সাফ করে দেয় ব্যবহারকারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।
নতুন নিয়মের ফলে ইউজারদের অজান্তে আর কেউ তাদের মোবাইল নম্বরের অপব্যবহার করতে পারবে না
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল, এই ভয়াবহ ঘটনা সম্পূর্ণভাবে ইউজারদের অজান্তেই ঘটে যায়, এবং ইতিমধ্যেই এদেশের বহু সংখ্যক মানুষ এই ধরনের জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। তাই ভবিষ্যতে যাতে আর কাউকে হ্যাকারদের প্রতারণার ফাঁদে না পড়তে হয়, তার জন্যই হালফিলে টেলিযোগাযোগ বিভাগ আলোচ্য নতুন নিয়মটি কার্যকর করেছে। নতুন নিয়মের সুবাদে এখন সিম কার্ড বদলের জন্য ব্যবহারকারীরা কোনো টেলিকম অপারেটরকে অনুরোধ করলে তারাও সংশ্লিষ্ট টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারীর কাছ থেকে নোটিফিকেশন রিকোয়েস্ট পাবেন। এর ফলে সিম কার্ড এক্সচেঞ্জের পুরো ঘটনার মধ্যে যে কোনো স্ক্যামার জড়িত নয়, সে বিষয়টি সম্পর্কে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হওয়া যাবে।