সমস্ত ডিভাইসে এক চার্জার, পাশ হয়ে গেল নতুন নিয়ম, বিপাকে Apple থেকে Samsung
বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ সহ একাধিক ইলেকট্রনিক গ্যাজেট আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। নিত্যদিন...বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ সহ একাধিক ইলেকট্রনিক গ্যাজেট আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে। নিত্যদিন নানা কাজে ব্যবহার করার জন্য এই ডিভাইসগুলিকে সময়ে সময়ে চার্জ দিতে হয়; তবে গ্যাজেটগুলিতে বিভিন্ন রকমের চার্জিং পোর্ট থাকার কারণে প্রয়োজন হয় একাধিক তথা আলাদা আলাদা চার্জারের। ফলে গ্রাহকদেরকেও অগত্যা একের অধিক চার্জার ব্যবহার করতে হয়, যা নিতান্তই এক মুশকিল ব্যাপার। তাই একটি চার্জার দিয়েই যাতে সমস্ত ডিভাইসে চার্জ দেওয়া যায়, সেই নিয়ে বহুদিন ধরেই ইউরোপীয় দেশগুলিতে আলোচনা চলছিল। আর দীর্ঘ জল্পনাকল্পনার পর অবশেষে সম্প্রতি ইউজারদের সুবিধার্থে এক কড়া আইন প্রণয়ন করল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (European Union বা EU), যার সুবাদে গ্রাহকরা একাধিক চার্জার ব্যবহার করার ঝামেলার হাত থেকে রেহাই পাবেন।
প্রতিটি ডিভাইসে বাধ্যতামূলকভাবে রাখতে হবে ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট, জানালো ইউরোপীয় পার্লামেন্ট
আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, গত মঙ্গলবার ইউরোপীয় পার্লামেন্ট অ্যান্ড্রয়েড (Android) ভিত্তিক ডিভাইসগুলিতে ব্যবহৃত ইউএসবি টাইপ-সি (USB Type-C) পোর্টকে একটি সাধারণ চার্জিং পোর্ট হিসেবে গ্রহণ করার কথা ঘোষণা করেছে। এর ফলে ২০২৪ সাল থেকে ইউরোপীয় দেশগুলিতে বিক্রি হওয়া সমস্ত ডিভাইসে শুধুমাত্র টাইপ-সি পোর্ট দেখা যাবে। সেক্ষেত্রে মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, ক্যামেরা, ই-রিডার, ইয়ারবাড সহ যে-কোনো ডিভাইসকে চার্জ করার জন্য ইউজারদের কাছে কেবলমাত্র একটি টাইপ-সি চার্জার থাকাই যথেষ্ট।
বিভিন্ন ডিভাইসে আলাদা আলাদা পোর্ট থাকায় অযথা একাধিক চার্জার কিনতে হচ্ছে গ্রাহকদেরকে, তাই মুশকিল আসান করতে লাগু হচ্ছে এই নয়া নিয়ম
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, বহু বছর ধরেই ইউরোপীয় দেশগুলিতে বিভিন্ন ডিভাইসে আলাদা আলাদা পোর্ট থাকার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আলোচনা চলছিল। মূলত আইফোন (iPhone) এবং অ্যান্ড্রয়েড ফোনের চার্জিং পোর্ট আলাদা হওয়ায় ইউজারদেরকে আলাদা আলাদা চার্জার ব্যবহার করতে হয়। তবে কোনো ব্যক্তি অ্যান্ড্রয়েড থেকে আইফোনে স্যুইচ করলে তখন পুরোনো চার্জারটিকে ফেলে দিয়ে তাকে কিনে নিতে হয় সম্পূর্ণ নতুন একটি চার্জার। এর ফলে একটি চার্জার তো সম্পূর্ণভাবে অচল হয়েই যায়, তদুপরি অযথা বেশ খানিকটা গাঁটের কড়ি খসে যায় ইউজারদের পকেট থেকে। আর বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসেও যে আলাদা আলাদা চার্জিং পোর্ট বিদ্যমান, সেকথাও কারোরই অজানা নয়। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ব্যবহারকারীরা দীর্ঘদিন ধরেই তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন। মূলত এই ঘটনাগুলিকে প্রত্যক্ষ করেই ইউরোপীয় দেশগুলিতে আলোচ্য আইনটি প্রণয়ন করার কথা বহুদিন ধরেই চিন্তাভাবনা করা হচ্ছিল, এবং অবশেষে হালফিলে তা সমঝোতায় এসে পৌঁছেছে।
উল্লেখ্য যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনপ্রণেতারা এই নয়া নিয়মটিকে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাথে সমর্থন করেছেন, যার ফলে এর পক্ষে ৬০২ টি ভোট এবং বিপক্ষে মাত্র ১৩ টি ভোট পড়েছে। উপরন্তু ইউরোপীয় কমিশন অনুমান করছে যে, 'সব ডিভাইসের জন্যই একক চার্জার' - এই নয়া নিয়ম ইউরোপের সকল ইউজারদের ২৫০ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ২০১৬ কোটি টাকা) সাশ্রয় করবে, যা এতদিন পর্যন্ত অযথা চার্জার কেনার পিছনেই ব্যয় করা হতো। তদুপরি, এই আইন প্রতি বছর হাজার হাজার টন ই-বর্জ্যের পরিমাণও কমাতে সাহায্য করবে।
নয়া আইনের জেরে বেশ বড়োসড়ো বিপদে পড়েছে Apple সহ আরও একাধিক নামজাদা টেক কোম্পানি
সম্প্রতি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের তরফে বলা হয়েছে যে, ২০২৪ সালে নয়া আইনটি লাগু হয়ে যাবে। আর একবার এই আইন কার্যকর হয়ে গেলে Android ডিভাইস নির্মাতাদের চাইতেও সবচেয়ে বেশি মুশকিলে পড়বে বিশ্বখ্যাত টেক জায়েন্ট Apple। কেননা ইতিমধ্যেই অনেক Android ফোনে ইউএসবি-সি পোর্টের দেখা মেলে, কিন্তু অন্যদিকে Apple-ই একমাত্র সংস্থা যারা তাদের iPhone-এ ইউএসবি টাইপ-সি -এর পরিবর্তে কোম্পানির নিজস্ব লাইটনিং পোর্ট ব্যবহার করে। সেক্ষেত্রে ইউরোপে iPhone সহ কোম্পানির অন্যান্য ডিভাইসের বিক্রি বজায় রাখতে হলে কার্পেটিনো ভিত্তিক টেক জায়েন্টটিকে খুব শীঘ্রই তাদের যাবতীয় প্রোডাক্টের চার্জিং পোর্ট বদলাতে হবে। এছাড়া, নয়া নিয়মটি ই-রিডার, ইয়ারবাডের মতো ডিভাইসগুলির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়ায় স্যামসাং (Samsung), হুয়াওয়ে (Huawei) সহ আরও অনেক কোম্পানিই এই নতুন আইনের দ্বারা প্রভাবিত হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে Apple, Samsung, বা Huawei-এর তরফে এই প্রসঙ্গে এখনও বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। যদিও Apple এর আগে জানিয়েছিল যে, এই নিয়ম কার্যকর হলে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি দেশে ই-বর্জ্যের পরিমাণ অনেকাংশে বাড়বে। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে কোথাকার জল কোথায় গড়ায়, এখন সেটাই দেখার…