ভারতে ১৩৩৮ কোটি টাকা জরিমানা Google কে, ৩০ দিনের মধ্যে দিতে হবে জবাব
অনৈতিক ব্যবসায়িক কার্যকলাপের জন্য ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন Google-কে বিশাল অঙ্কের টাকা জরিমানা করল কম্পিটিশন কমিশন অফ...অনৈতিক ব্যবসায়িক কার্যকলাপের জন্য ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন Google-কে বিশাল অঙ্কের টাকা জরিমানা করল কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া (Competition Commission of India)। গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের অধীনস্থ জাতীয় প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রক সংস্থা অর্থাৎ সিসিআই (CCI)-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য মার্কিনি টেক কোম্পানিটিকে প্রায় ১,৩৩৮ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেইসাথে সমস্তরকম অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে অবিলম্বে সরে আসারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিশ্বখ্যাত এই টেক জায়েন্টটিকে। এখন নিশ্চয়ই আপনাদের মনে প্রশ্ন আসছে যে, আচমকা কেন Google-কে এই মোটা টাকা জরিমানা করা হল? আর এমন কী অনৈতিক কাজ করেছে সংস্থাটি? আসুন, এ সম্পর্কে একটু বিশদে জেনে নেওয়া যাক।
অন্যায়ভাবে একচেটিয়া বাজার দখলের অভিযোগে Google-কে প্রায় ১,৩৩৮ কোটি টাকা জরিমানা করলো CCI
আসলে ব্যাপারটা হল, বিভিন্ন অ্যাপ এবং প্রোগ্রাম চালানোর জন্য এখন বেশিরভাগ ফোনেই থাকে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম (Android Operating System), এবং ২০০৫ সাল থেকেই এই ওএস গুগলের মালিকানাধীন। মার্কিনি টেক কোম্পানিটি শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম তৈরি ও পরিচালনাই করে না, এর পাশাপাশি এই ওএসটির যাবতীয় দেখভালের দায়িত্বেও রয়েছে সংস্থাটি। সেইসাথে নিজেদের মালিকানাধীন অন্য অ্যাপগুলিকে লাইসেন্সও প্রদান করে গুগল। তাই স্মার্টফোন প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি ফোনে অ্যান্ড্রয়েড ওএস দিতে চাইলে তাদেরকে একপ্রকার বাধ্য হয়েই গুগলের বিভিন্ন অ্যাপ ও সার্ভিস ব্যবহার করতে হয়। এর জন্য হ্যান্ডসেট নির্মাতা সংস্থাগুলিকে একাধিক চুক্তিও স্বাক্ষর করতে হয় কার্পেটিনো ভিত্তিক টেক জায়েন্টটির সঙ্গে, আর এখান থেকেই ঘটেছে সমস্যার সূত্রপাত!
সিসিআই-এর বিবৃতি অনুযায়ী, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আধিপত্য ধরে রাখতে অনৈতিকভাবে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমকে হাতিয়ার করে প্রতিযোগীদের পথ আটকানোর চেষ্টা করছে গুগল, এবং এর সুবাদে কোম্পানিটি অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে লাভবান হচ্ছে। আরও ভালোভাবে বললে, জোর করে নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের দুনিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের তাগিদে প্রতিযোগিতার শর্ত লঙ্ঘন করছে মার্কিনি সংস্থাটি, আর এই অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্লোবাল সার্চ ইঞ্জিনটিকে প্রায় ১,৩৩৮ কোটি টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছে সিসিআই।
পাল্টা জবাব দিতে Google-কে ৩০ দিন সময় দিয়েছে CCI
উল্লেখ্য যে, সিসিআই-এর সরকারি ওয়েবসাইটে উপরিউক্ত বিষয়টি সংক্রান্ত বিশদ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সেখান থেকে জানা গিয়েছে যে, নিজেদের ফোনে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এবং গুগল অ্যাপ ব্যবহার করার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিনি টেক জায়েন্টটির তৈরি অধিকার এবং বাধ্যবাধকতা সংক্রান্ত একাধিক চুক্তিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েই সই করতে হয় স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলিকে, যার মধ্যে অন্যতম একটি হল মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডিস্ট্রিবিউশন এগ্রিমেন্ট। এর আওতায় গুগলের সার্চ ইঞ্জিন অ্যাপ, ক্রোম ব্রাউজার, উইজেট আগে থেকেই অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনগুলিতে ইনস্টল করে দেওয়া হয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে অন্যদের তুলনায় বেশ অনেকটাই এগিয়ে থাকে গুগল, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক বলে দাবি করেছে সিসিআই।
কেন্দ্রের তরফে আরও জানা গিয়েছে যে, Android মোবাইল ফোনগুলিতে YouTube-ও প্রি-ইনস্টল করা থাকে, যা থেকে বেশ মোটা টাকা উপার্জন করে Google। ফলে ইউজাররা YouTube ব্যতীত অন্য কোনো অ্যাপ ব্যবহার করার কথা সচরাচর ভাবার সুযোগই পান না, আর এই কারণেই বাজার দখলের লড়াইয়ে অন্যান্য ভিডিও স্ট্রিমিং প্রদানকারী সংস্থাগুলি কোনোমতেই পাল্লা দিতে পারছে না Google-এর সঙ্গে। তাই CCI-এর পক্ষ থেকে টেক জায়েন্টটিকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, অন্যায়ভাবে কোনো স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানিকে জোরাজোরি করা চলবে না, নতুন ফোন সেট আপ করার সময় সার্চ ইঞ্জিন সহ বিভিন্ন অ্যাপ এবং প্রোগ্রাম বেছে নেওয়ার অপশন দিতে হবে গ্রাহককে। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, প্রয়োজনীয় আর্থিক বিবরণ এবং সহায়ক নথি সরবরাহ করার জন্য CCI, Google-কে ৩০ দিন সময় দিয়েছে। এবার মার্কিন মুলুকের টেক কোম্পানিটি কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ নেয়, এখন সেটাই দেখার…