PLI Scheme: মোদী সরকারের মাস্টারস্ট্রোক, এই সুবিধা পেয়ে বিদেশি সংস্থারা ভারতে তৈরি করছে কোটি কোটি স্মার্টফোন
ভারত সরকার শক্তিশালী প্রযুক্তি ও ইলেক্ট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ২০২১ সালে 'প্রোডাকশন-লিঙ্কড ইনসেনটিভ'...ভারত সরকার শক্তিশালী প্রযুক্তি ও ইলেক্ট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ২০২১ সালে 'প্রোডাকশন-লিঙ্কড ইনসেনটিভ' (পিএলআই) নামের একটি স্কিমের ঘোষণা করেছিল। এই স্কিমের অধীনে বিদেশী সংস্থাগুলিকে 'মেড ইন ইন্ডিয়া' প্রোডাক্ট তৈরিতে উৎসাহিত করা হয়। এক্ষেত্রে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এদেশের কেন্দ্রীয় সরকার এই উদ্দেশ্যে পূরণে যথেষ্ট সফল হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই একাধিক নামিদামি ব্র্যান্ড ভারতের মাটিতে তাদের প্রোডাকশন প্লান্ট গড়ে তুলেছে। বিশেষ করে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে পিএলআই উদ্যোগের কারণে ভারতীয় মোবাইল ফোন সেক্টর কতটা লাভবান হয়েছে তার পরিসংখ্যান দেখে আমরা অবাক!
২০১৪ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে মোবাইল রপ্তানি প্রায় ৫গুন বেড়েছে, অন্যদিকে আমদানি কমে ৩% হয়ে গেছে। আবার উৎপাদনও এই এক দশকের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ইন্ডিয়া সেলুলার অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স অ্যাসোসিয়েশন' (আইসিইএ) এখন এই প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে মোবাইলের পাশাপাশি স্বতন্ত্র কম্পোনেন্ট ইকোসিস্টেম স্থাপনের প্রচেষ্টায় আছে।
পিএলআই স্কিমের কারণে মোবাইল ফোনের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আমদানি হ্রাস পাচ্ছে
আইসিইএ দ্বারা শেয়ার করা রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতের মোবাইল ফোন ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে যেখানে প্রোডাকশন ভ্যালু ১৮,৯০০ কোটি টাকার ছিল, সেখানেই ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪,২০,০০০ কোটি টাকা হয়ে গেছে। যা প্রমাণ করছে ২০২১ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের চালু করা পিএলআই স্কিম কতটা কার্যকরী।
বিগত ১০ বছরে মোবাইল ফোন উৎপাদনের গ্রাফ :
২০১৪-১৫: ১৮,৯০০ কোটি টাকা
২০১৫-১৬ : ৫৪,০০০ কোটি টাকা
২০১৬-১৭: ৯০,০০০ কোটি টাকা
২০১৭-১৮: ১,৩২,০০০ কোটি টাকা
২০১৮-১৯: ১,৮১,০০০ কোটি টাকা
২০১৯-২০: ২,১৪,০০০ কোটি টাকা
(পিএলআই স্কিম শুরু হওয়ার পর)
২০২০-২১ : ২,২০,০০০ কোটি টাকা
২০২১-২২: ২,৭৫,০০০ কোটি টাকা
২০২২-২৩: ৩,৫০,০০০ কোটি টাকা
২০২৩-২৪: ৪,২০,০০০ কোটি টাকা
প্রসঙ্গত, পিএলআই স্কিমের কারণে ভারতের বহিঃদেশ থেকে প্রোডাক্ট আমদানি করার প্রবণতা অনেকটাই কমে গেছে। এক্ষেত্রে এক দশক আগে যেখানে ৭৮% মোবাইল ফোন বাইরের থেকে আমদানি করা হতো, সেখানে ২০২৩-২৪ সালে এই পরিসংখ্যান ৩% -এ নেমে গেছে।
বৃদ্ধি হয়েছে মোবাইল ফোন রপ্তানির পরিমাণ
পিএলআই স্কিম মোবাইল ফোন রপ্তানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করেছে বলা যেতে পারে। কেননা ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে মাত্র ১,৪৭৭ কোটি টাকার মোবাইল ফোন এদেশ থেকে রপ্তানি করা হয়েছিল। যেখানে ২০২৩-২৪ সালে ১,২৯,০০০ কোটি টাকার সমতুল্য প্রোডাক্ট রপ্তানি করা হয়েছে৷
২০১৫-২০২৪ সালের মধ্যে মোবাইল ফোন রপ্তানির পরিসংখ্যান:
২০১৫-১৬: ১,৪৭৭ কোটি টাকা
২০১৬-১৭: ১,১৪৯ কোটি টাকা
২০১৭-১৮: ১,৩৬৭ কোটি টাকা
২০১৮-১৯: ১১,৩৯৬ কোটি টাকা
২০১৯-২০: ২৭,২২৫ কোটি টাকা
(পিএলআই স্কিম শুরু হওয়ার পর)
২০২০-২১: ২২,৬৮৫ কোটি টাকা
২০২১-২২: ৪৫,০০০ কোটি টাকা
২০২২-২৩: ৯০,০০০ কোটি টাকা
২০২৩-২৪: ১,২৯,০০০ কোটি টাকা
আইসিইএ বর্তমানে মোবাইল ফোন তৈরির জন্য ব্যবহৃত কম্পোনেন্টগুলিও স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করার পরামর্শ দিচ্ছে৷ এক্ষেত্রে মোবাইল ও ইলেক্ট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রির এই অন্যতম বিভাগটি ৪০,০০০ কোটি থেকে ৪৫,০০০ কোটি টাকা সরাসরি আর্থিক সহায়তা চেয়েছে ফিন্যান্স মিনিস্ট্রির কাছে। অথবা বিকল্প হিসাবে, মোবাইলের মতোই কম্পোনেন্ট নির্মানের ক্ষেত্রে পিএলআই স্কিমের আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি সংস্করণ চালু করার প্রস্তাব রেখেছে।
এই বিষয়ে আইসিইএ -এর চেয়ারম্যান পঙ্কজ মহিন্দ্রু বলেছেন, “৪০,০০০-৪৫,০০০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। যা সাত বা আট বছর সময়ের মধ্যে কম্পোনেন্ট ও সাব-কম্পোনেন্ট উৎপাদনের জন্য বিনিয়োগ করা হবে। এটি মোবাইল পিএলআই স্কিমের সমান্তরালভাবে চলতে পারে, যা মার্চ ২০২৬ পর্যন্ত বৈধ থাকবে"।
আইসিইএ কর্তৃপক্ষের মতে - অ্যাপল, শাওমি, ওপ্পো এবং ভিভো সংস্থাগুলির কারণে এদেশের মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে। কিন্তু কম্পোনেন্ট বা সাব-কম্পোনেন্ট উৎপাদনের ক্ষেত্রে পিএলআই স্কিম বা এই সংস্থাগুলি ততটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে না। তাই ভারতে প্রতিযোগিতামূলক কম্পোনেন্ট ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার উপর এখন অধিক জোর দিচ্ছে আইসিইএ।